বাঙালি ভুলতে বসেছে বড়লোকের বেটি লো গানের আসল স্রষ্টাকে
"বড়লোকের বেটি লো। লম্বা লম্বা চুল। এমন চুলে বেঁধে দেব লাল গেঁদা ফুল।" বাংলার একটি জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। আমরা সকলেই জানি এই গানটি গেয়েছেন সংগীত শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী। কিন্তু এই গানের আসল স্রষ্টাকে চেনেন? না চেনারই কথা ৷ কারণ যে মানুষটি কষ্ট করে গানটা বানালেন তাঁর ক্রেডিট নিলো অন্য কেউ। বিস্তৃতির অতলগর্ভে হারিয়ে গেছে তাঁর নাম। বাঙালির এক প্রতিভাবান শিল্পীর শিল্পসত্বা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যা নিতান্ত লজ্জার। এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হলেন রতন কাহার। অনেক বাঙালির কাছেই এ নামটা অচেনা। অথচ তিনি প্রায় দু'হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। পাহাড়ি স্যান্যালের হাত ধরে তিনি আকাশবাণীতে বহুদিন যাবৎ কাজ করে গেছেন। তাঁর জীবনটা কাটছে নিদারুণ দুঃখ-দুর্দ্দশার মধ্য দিয়ে।
গতকাল হিন্দিতে "বড়লোকের বেটি লো" গানটিকে নোংরা ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে হিন্দি সংস্কৃতির সাথে বাঙালি সংস্কৃতি মিশিয়ে খিঁচুড়ি বানানো হয়েছে। বাঙালি নারীদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এমনকি গানের ক্রেডিট পর্যন্ত গায়ক নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। বাঙালি মেয়েদের খাটো করে দেখানোর পরও সেই মশালা নির্ভর গান চেটেপুটে হজম করেছে কিছু বাঙালি। কিন্তু সব বাঙালিই যে গানটি পছন্দ করেছেন এমনটাও বলা ভুল হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এ গানের বিরুদ্ধে অনেক বাঙালি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বাঙালি সংস্কৃতির হেন অপমানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গেছে বেশ কিছু বাঙালিকে। একটু চোখ মেললেই দেখা যায়, আজকাল হিন্দি গানে বেশি করে অপসংস্কৃতির জোয়ার বইছে। যার ফলে বর্তমান প্রজন্ম কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঙালিরা যদি সজাগ না হয় তাহলে কালকে একটি বাংলা লোকসঙ্গীতকে যেভাবে নষ্ট করা হয়েছে তাতে আগামীদিনে আরো অনেক বাংলা লোকসঙ্গীতকে নষ্ট করা হবে হিন্দিতে। তাই প্রতিটি বাঙালিকে সজাগ থাকতে হবে যাতে হিন্দি আগ্রাসন থাবা বসাতে ভয় পায়।
শিল্পী রতন কাহার বাংলা ভাষার বিশেষ করে বাংলা লোকসঙ্গীতের উন্নতির জন্য সারা জীবন কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি অসংখ্য ঝুমুর ও ভাদু গান গেয়েছেন। যাত্রাদলে 'ছুকরি' সাজারও অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তিনি প্রথম জীবনে 'আলকাপে'র দলে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি রাস্তায় রাস্তায় খঞ্জরি বাজিয়ে নগরকীর্তন করে কাটাচ্ছেন।বাংলার অতি প্রাচীন সংস্কৃতি হলো রাস্তায় খঞ্জরি বাজিয়ে কীর্তন গান গেয়ে নগর পরিক্রমা। বীরভূমের সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার আদি বাসিন্দা তিনি৷ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি লোকসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছেন।
১৯৭২ সালে তিনি রচনা করেন 'বড়লোকের বিটি লো' গানটি। ১৯৭৬ সালে কালজয়ী এই গানটি রেকর্ডিং করেন স্বপ্না চক্রবর্তী। গানের স্রষ্টা হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁর নাম। গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পরও কেউ জানতে পারেননি রতন কাহারের নাম। তাঁর এই গান নিয়ে অনেক গায়ক বিখ্যাত হয়ে গেছেন। তবুও বারবার উপেক্ষিত রয়ে গেছেন তিনি। তাঁর জীবনের প্রধান দুঃখ এখানেই। তিনি একটি সংবাদপত্রে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে জানান যে স্বপ্না চক্রবর্তীর বহু আগেই তিনি আকাশবাণীতে এই গানটি রেকর্ডিং করেছিলেন।
এখনও হেমন্ত কাল এলেই তিনি একা বেরিয়ে পড়েন টহল করতে। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ভোরবেলায় লোকগীতি গাইতে গাইতে একক ভাবে নগর পরিক্রমাকে টহল বলা হয়। যাকে প্রভাতী কীর্তনও বলা হয়। আবার গ্রামের দিকে 'গাদি' বলেও একে সম্বোধন করা হয় ৷ প্রায় নব্বই বছর বয়সে নড়চড়ে শরীর নিয়েও তিনি টহল করেন হেমন্তের ভোরবেলাতে। তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন বাংলার কোল থেকে হারাতে বসা প্রভাতী কীর্তনকে। সিউড়ির মানুষ তাঁর প্রভাতী কীর্তনের আওয়াজে ঘুম থেকে ওঠেন। শেষ বয়সে এসে দাঁড়িয়েও টহলের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন "কে যেন ভেতর থেকে প্রেরণা দেয়। কত মানুষ অপেক্ষা করে থাকে বছর ভোর। তাই শরীর নড়বড় করলেও বেরিয়ে পড়ি।"
জীবনে ছোটো-বড়ো বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি অর্জন করেছেন বহু সম্মান ও সংশাপত্র। তবুও দারিদ্রতা আজকাল শিল্পী রতন কাহারের নিত্যসঙ্গী। তাঁর থাকার কথা ছিল বিপুল অর্থ নিয়ে। কিন্তু পুঁজিপতিদের স্বার্থের কাছে মাথানত করতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর মেয়ে গান গাইতে ভালোবাসতো। অর্থের অভাবের জন্য তিনি তাঁর মেয়ের জন্য হারমোনিয়াম পর্যন্ত কিনে দিতে পারেননি। নিজের মেয়েকে নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তা হতো। তাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিয়েও চিন্তার শেষ ছিলনা তাঁর। এতো বড়োমাপের একজন শিল্পীর খোঁজ নিতে কেউ আসেন না। নতুন প্রজন্ম তাঁকে জানতে পারছে না। জীবনের শেষ দিনগুলো নিদারুণ অভাবের মধ্য দিয়ে তাঁর কেটে চলেছে।
তথ্যসূত্র- কবিতা মিলনসাগর, এই সময়, অলিগলি
তথ্যসূত্র- কবিতা মিলনসাগর, এই সময়, অলিগলি
আহা প্রতিভা-🙏
ReplyDeleteভাষা নেই উত্তরের-
আপনি ভালো থাকুন হে প্রতিভাবান অনেক ভালো থাকুন-💜💙💜
সুমিতবাবু আপনার লেখাটি পড়ে বিস্মিত হলাম। সেইসব ধান্দাবাজ বেওসায়িদের প্রকাশ্যে পাছায় লাথ মারা দরকার। সুদেআসলে সমস্ত বকেয়া আদায় করার সরকারি উদ্যোগ কেউ নিতে পারলে ভাল হ'তো।
ReplyDeleteপিনাকী প্রসাদ রায়,ঝাড়গ্রাম
ReplyDeleteMost emotional bengali song review by AaNKoN
ReplyDeleteMust watch this video nd give Ur valuable feedback
Nd share maximum please nd support Plz
https://youtu.be/CyCFtWOpgsQ