স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি গবেষক সুমিত কোনার বার্তা দিলেন করোনা ভাইরাস নিয়ে
করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকুন। একটা ভাইরাস কখনো সহজে পালায় না। তার সাথে বিশেষ ভাবে যুদ্ধ করতে হয়। করোনা হলো এমন একটি ভাইরাস যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না গড়ে তুললে এই ভাইরাস মহামারী সৃষ্টি করে। বর্তমানে হোম কোয়ারান্টাইনে সময় কাটাচ্ছেন প্রতিটি মানুষ। বাড়িতে একুশটা দিন অতিক্রম করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। এই পরিস্থিতির মধ্যে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি গবেষক সুমিত কোনার বার্তা দিলেন করোনা ভাইরাস নিয়ে।
স্কটল্যান্ডের এডিনবরা থেকে তিনি যা বললেন- "করোনা ভাইরাস রোগ থেকে কীভাবে বাঁচা যায় সেই নিয়ে আমি কিছু কথা বলতে চাই। করোনা ভাইরাস প্রচন্ড সংক্রামক একটা রোগ। এটা মারাত্মক প্রাণঘাতী কিছু নয়৷ এই রোগটা যদি আপনার হয় তাহলেও বাড়িতে বসে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন। এই রোগের কোনো ওষুধ এই মুহূর্তে নেই। এই রোগের একমাত্র উপায়ই হচ্ছে বাড়িতে বন্দী রাখা। কেন আমি এই জটিল কথাগুলো বলতে পারছি তার একটাই কারণ হলো লাস্ট এক মাস ধরে করোনা ভাইরাসের প্যাটার্নটাকে অবজার্ভ করছি। ভালো করে যদি লক্ষ করেন, এই রোগটা কিন্তু শুরু হয়েছিল ৩১ শে ডিসেম্বর বা ১ লা জানুয়ারী চাইনাতে। এই রোগটাকে প্রথম যখন পাওয়া গেলো তখন কিন্তু এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউ বুঝতে পারেননি।
হুনান প্রভিন্সে খুব অল্প কিছু মানুষ মারা যেতে শুরু করেছিল ১১ ই জানুয়ারী, ১৭ ই জানুয়ারী এরকম ভাবে মানুষ যখন মারা যেতে লাগলো তখন ওরা দেখলো যে এই রোগটা পুরানো যে রোগুগুলো সার্স বা মার্স বা বার্ড ফ্লুর মতো নয়। কিন্তু এতো যে সংক্রামক বোঝা যায়নি বলেই ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশান কিন্তু চাইনার ওপর রেসটিকশন করেনি। এটাই হয়ে গিয়েছিল বিরাট বড়ো ভুল সেই কারণে চাইনা থেকে রোগটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। আস্তে আস্তে জানুয়ারীর শেষের দিকে চাইনা যখন রিয়েলাইজ করলো প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে, দিনে দিনে মানুষের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে তখন চাইনা হুনান প্রদেশের সাথে বাকী জায়গাগুলোতে লকডাউন করে দিলো। ঐ লকডাউনের ফলে হুনান প্রদেশে যে কজন মারা গিয়েছিল সেই মৃত্যুটা ওর মধ্যেই সীমিত রইলো। আর চাইনার বাকী জায়গাগুলো এই করোনার হাত থেকে বেঁচে গেল।
এরপর রোগটা যখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে গেল যেমন সাউথ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ইটালি। দু'ধরনের দেশ দু'রকম ভাবে অ্যাপ্রোচ নিলো। ইটালি এবং আমেরিকা প্রথমের দিকে রোগটা সিরিয়াসলি নেয়নি। এজন্য এই দেশে খুব কম মানুষ এই রোগে মারা যেতে শুরু করলো যেমন ধরুন ইটালিতে এই রোগে প্রথম মৃত্যু হলো ২২ শে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ আজ থেকে একমাস আগে। সেই দেশটার মৃত্যুসংখ্যা হচ্ছে আজকে দশ হাজারের কাছাকাছি। তার মানে ভাবুন লাস্ট এক মাসে কী পরিমাণে কী কঠিন ভাবে ইটালিতে মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে আজকে মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ছয় হাজারের কাছাকাছি। ইরানে মৃত্যু সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি। ফ্রান্সে দু'হাজারের কাছাকাছি। আমেরিকাতে প্রায় ১৭০০ থেকে ১৮০০। আমি থাকি ব্রিটেনে। এখানে মৃত্যু সংখ্যা আটশোর মতো৷ সুতরাং গোটা পৃথিবীতে মৃত্যু সংখ্যা আজকে ২৮০০০। কয়েকটা মোটেই মৃত্যু দিয়ে চাইনাতে শুরু হয়েছিল যেটা আটকানো যেত৷ কিন্তু প্রথমে এই ভয়াবহতাটা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশানও বুঝতে পারেনি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলিও বুঝতে পারেনি৷ কিন্তু চাইনা যখন লকডাউন শুরু করলো তারপরে দেখুন আজকে চাইনাতে মৃত্যু ঘটছে না। চাইনাতে কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা কমে গেছে৷ সাউথ কোরিয়াতে মারাত্মক ভাবে টেস্ট ও কীটের ব্যবস্থা করা হলো। সকল মানুষকে আইসোলেশনে রাখা হলো। সেই জন্য সাউথ কোরিয়াতেও কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা প্রচন্ড কম৷
এখন ইউরোপের দেশগুলোকে যদি দেখেন সেখানে প্রথমদিকে লকডাউন করেনি বলেই এখন এতো পরিমাণে ভাইরাসটা ছড়িয়ে গেছে যে ৯ ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন করার পরও মৃত্যু সংখ্যা কমছে না। প্রতিদিন মৃত্যু বাড়ছে। এই রোগটা এমনই একটি রোগ যে দেখবেন প্রথমে খুব অল্প মানুষ মারা যাবেন। একদম একটা সরলরেখায় আস্তে আস্তে আজকে পাঁচটা কালকে আরো সাতটা তারপর হয়তো আরো তিনটে বা দশটা এভাবে হয়তো হলো। এরপর হয়তো দেখবেন হঠাৎ করে সেই সংখ্যাটা কুড়ি হয়ে গেল। একদিন দেখবেন সংখ্যাটা পঞ্চাশ জন। একদিন দেখলেন সংখ্যাটা একশো জন৷ একদিন দেখলেন দুশো জন। এভাবে সংখ্যাটা একটা প্যারামিটারে বাড়তে বাড়তে আজকে ইটালিতে সাতশো থেকে আটশো দাঁড়িয়েছে৷ ভাবুন একবার ভারতবর্ষের মতো যদি দেশে এই রোগটা সংক্রামিত হয় তাহলে সংখ্যাটা কতো দাঁড়াতে পারে?"
বাকী কথা জানতে হলে নীচের লিঙ্কে দেওয়া ভিডিওটি দেখে নিন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment