Header Ads

কুড়িয়ে পাওয়া ক্যামেরা ভাগ্য বদলে দিয়েছিল তাঁর। প্রয়াত হলেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ


একদিন সকালে তিনি ফিল্ম রোল ডেভেলাপ ও প্রিন্ট করতে চললেন বালিগঞ্জের বিখ্যাত রেনেসাঁস স্টুডিওতে। যে স্টুডিওর মালিক ছিলেন ভূপেন্দ্রকুমার স্যান্যাল যিনি মেজদা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। যে স্টুডিওতে আনাগোনা চলতো মানিকবাবু, তপনবাবুর মতো গুণী মানুষদের। তিনি মনের মধ্যে কিছুটা সাহস নিয়ে সেই স্টুডিওতে প্রবেশ করলেন৷ তিনি মেজদাকে দুটো ফিল্ম রোল দিলেন। মেজদা ফিল্ম রোল দুটো নিয়ে ডার্ক রুমে ঢুকলেন। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন মেজদা হয়তো বেরিয়ে এসে বলবেন থিয়েটার তো বেশ ভালোই করছিলে হঠাৎ ফটোগ্রাফি কেন? অতঃপর হাসতে হাসতে ডার্ক রুম থেকে বেরিয়ে এলেন মেজদা। তার পেটে ছোটো করে চিমটি কেটে কপালে চুমু খেয়ে বললেন ফটোগ্রাফিটা তোমার হবে। তুমি তোমার কাজটা চালিয়ে যাও। তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না যে দুদিন আগে তিনি ক্যামেরা হাতে পেয়েছেন, তিনি ঠিকঠাক সেটা চালাতেও পারেন না তাহলে মেজদার মতো ব্যক্তি কীভাবে তার প্রশংসা করতে পারে? তিনি এ দিনটির কথা ভুলতে পারলেনা। 


বাড়ির লোক থেকে শুরু করে বন্ধু ও প্রিয়জনদের তিনি ফটোগ্রাফিগুলো দেখাতে লাগলেন। লোকের কাছে বেশ প্রশংসা পেতে থাকে ছবিগুলো। সহসা ছবিগুলো চোখে পড়লো সত্যজিৎ রায়ের সৃজনশীল পরিচালক বংশীচন্দ্র গুপ্তের। এনার সাথে তাদের দুজনের গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি বললেন এ ছবিগুলো তুমি মানিকবাবুকে দেখাও৷ উনি গুপিগাইন বাঘাবাইনের শ্যুটিং করছেন। বংশীচন্দ্র গুপ্ত তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মানিকবাবুর কাছে  গেলেন৷ মানিকবাবু তো ছবিগুলো দেখে যথারীতি তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মানিকবাবু বললেন- "ছবিগুলো তুমি সেভাবেই তুলেছো যেভাবে আমি তুলতাম। অ্যাঙ্গেলগুলোও একদম একই"।এই মানুষটি হলেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ।

সত্যজিৎ রায়ের প্রতিটি মুহূর্ত, ছবির শ্যুটিং, ছবির দৃশ্য নিজের হাতে যত্ন সহকারে ক্যামেরা বন্দী করেছিলেন নিমাই ঘোষ। চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি খ্যাতিলাভ করলেও তিনি চেয়েছিলেন একজন অভিনেতা হতে। প্রথম জীবনে উৎপল দত্তের লিটিল থিয়েটার গ্রুপে তিনি অভিনয় করতেন। কিন্তু একদিন এক ট্যাক্সিতে একটি ফিল্ম ক্যামেরা কুড়িয়ে পান। যে ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলতেই বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক হয়ে উঠলেন। একটি কুড়িয়ে পাওয়া ক্যামেরাই যেন বদলে দিল তাঁর জীবন।

তিনি প্রায় আড়াই দশক ধরে কাজ করেছেন ক্যামেরার সাথে। তিনি নব্বই হাজারেরও বেশি ছবি ক্যামেরাতে বন্দী করেছিলেন। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সাথে তাঁর একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল৷ ফটোগ্রাফির জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে। ২০০৭ সালে জাতীয় পুরস্কার কমিটির জুরি বিভাগের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তিনি 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত হন। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে শেষ কাজ করেছেন 'আগন্তুক' ছবিতে। 

চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষের তোলা ফটোগ্রাফি বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে অনন্য নজির গড়েছিল। তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে তিনি এ বিশ্বের কাছে উজাড় করে আজ বিদায় নিলেন তিনি। ছিয়াশি বছর বয়সে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস করলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা টলিউডে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত চলচ্চিত্র জগতের সকল নক্ষত্ররা। পৃথিবীতে যতদিন বাংলা ছবি থাকবে ততদিন পর্যন্ত অমর হয়ে থাকবে তাঁর নাম। চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষকে লিটারেসি প্যারাডাইস পরিবারের তরফ থেকে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।

প্রতিবেদন-সুমিত দে


No comments