Header Ads

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতে প্ল্যাকার্ড হাতে নিঃশব্দে এনআরসি ও ক্যা বিরোধী কর্মসূচি চালাচ্ছে 'বাংলা পক্ষ'


চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। ৪৪ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাকে ঘিরে মেতেছে পুরো শহর। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও বহু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতা বইমেলাতে। বইয়ের গন্ধে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে নতুন নতুন বইয়ের সন্ধানে স্টলে স্টলে উপচে পড়ছে জনসমুদ্রের ঢেউ। সারা বছর ধরে কলকাতার মানুষ অপেক্ষা করে থাকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার জন্য। গত ২৯ শে জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বইমেলা। আগামী ৯ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেলা।


বাঙালির প্রিয় উৎসব বইমেলাতেও এবার উঠল ক্যা ও এনআরসি বিরোধী স্লোগান। প্ল্যাকার্ড হাতে বইমেলাতে প্রতিবাদে মুখর হতে দেখা গেল ভারতে বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষকে। এই সংগঠন বিগত দুই বছর ধরে এনআরসির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জেলায়। ২০১৮ সালের জুন মাস থেকেই একটানা প্রতিবাদ করছে বাংলা পক্ষ। এনআরসি ও ক্যাকে বাঙালি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এটাই মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছে এই সংগঠন। 

বইমেলা শুরু হওয়ার প্রথমদিন থেকেই প্রতিদিন কলকাতা বুক গিল্ড হাউসলোর সামনে নিঃশব্দে বাংলা পক্ষের একটানা প্রতিবাদ চলছে। এই সংগঠনের সহযোদ্ধারা রাতদিন এক করে বাঙালি বাঁচানোর লড়াইতে নিজেদের সামিল রেখেছে। কিছুদিন আগে প্যান্টালুনসে সাতাশ জন বাঙালি কর্মীকে ছাঁটাই এর ঘোরতর প্রতিবাদ করেছিল বাংলা পক্ষ। তাদের আন্দোলনের জেরে প্যান্টালুনস বহিষ্কৃত বাঙালি কর্মীদের আবারো ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু বিরোধী পক্ষ দু-একটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল প্যান্টালুনসের বহিষ্কৃত বাঙালি কর্মীদের ফিরিয়ে আনার ঘটনার পিছনে বাংলা পক্ষের অবদানের কথা অস্বীকার করে। এমনকি অনেকে হেসেও উড়িয়ে দেয়। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে বাংলা পক্ষ মোটেও রাজি নয়। কারণ  তারা কাজে বিশ্বাসী। তাদের দল থেকে এর আগে কিছু সদস্য বহিষ্কৃত হয়, আবার কেউ কেউ নিজেও বেরিয়ে যায়। অনেকের মধ্যে বাংলা পক্ষের ভাঙ্গন নিয়েও প্রচন্ড আলোচনাও হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এরপরও বাংলা পক্ষ নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত রেখেছে। দল ভাগ হওয়ার ব্যাপারে বাংলা পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায় লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান যে "প্রতিটি সংগঠনের মধ্যেই মানুষের যাওয়া-আসা চলতে থাকে। যারা দল থেকে বেরিয়েছে তারা নিজের থেকে বেরিয়েছে। আর কিছু সদস্যকে আমরা বহিস্কার করেছিলাম তাদের দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য। আমরা কাজে বিশ্বাসী। তাই যারা কাজের স্বার্থে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে বাংলা ও বাঙালির অধিকারের লড়াই লড়তে পারবে। কেবল তারাই বাংলা পক্ষে থাকবে। ভালো কাজের জন্য অনেক সময় ত্যাগকেও মেনে নিতে হয়।"

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতে বাংলা পক্ষের সদস্য উৎপল দাস স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যে এনআরসি ও ক্যায়ের ফলে বাঙালির কতটা সর্বনাশ হতে পারে। এমনকি তিনি এটাও বলেন কীভাবে বাঙালির গায়ে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাঙালিকে বিদেশি প্রমাণ করার নিষ্ঠুর খেলাতে মেতেছে কেন্দ্র সরকার। তিনি সবশেষে বলেন "বাঙালিকে তাড়ানোর জন্য একটা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে যার নাম এনআরসি। আসামে ১৯ লক্ষ মানুষকে এনআরসি তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে যারা সবাই কিন্তু বাঙালি। কেউ বিদেশি বা শরণার্থী নন। আমরা বইমেলাতে প্রতিদিন আসছি৷ এই কর্মসূচিতে বাংলা পক্ষের পঁচিশজন সদস্য কাজ করেছে। এছাড়াও জেলাতে জেলাতেও আমাদের প্রতিদিন কিছু না কিছু কর্মসূচি চলছে। আমরা বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি।"  

বাংলা পক্ষের সহযোদ্ধারা গলাতে নো এনআরসি, নো এনপিআর ও নো ক্যা লেখা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে নিঃশব্দে বইমেলা চত্বরে আন্দোলন করছে। তারা চায় শহর থেকে শুরু করে শহরের বাইরের সকল বাঙালি যেন বুঝতে পারে যে এনআরসি ও ক্যায়ের ফলে বাঙালির কপালে চরমতম ভয়ার্ত দিন আসছে। প্রতিটি রাজ্য যখন নিজেদের অধিকার বুঝে নিচ্ছে সেখানে কিছুটা হলেও বাংলার মানুষ নিজের অধিকারটা অনেক পরে বুঝতে পারছে। বাংলা ও বাঙালির অধিকারের লড়াই প্রতিটি বাঙালির গভীরে পৌঁছে দিতে ও বাঙালিকে সজাগ রাখতে বাংলা পক্ষ বদ্ধপরিকর।                                                         
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments