Header Ads

বাংলা ও বাঙালির একগুচ্ছ অধিকারের প্রস্তাবনা তুলে ধরে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে অনুষ্ঠিত হলো এবসোর জাতীয় সম্মেলন


গত ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ শহরে অনুষ্ঠিত হলো এবসোর জাতীয় সম্মেলন। যে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবসোর সভাপতি চন্দন চ্যাটার্জী, সহ সভাপতি রঞ্জিত মুখার্জি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিষ্ণু ভট্টাচার্য (নাগাল্যাণ্ড), সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্র দাস, আসাম রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মহঃ হুসেইন, ত্রিপুরা থেকে অনুপ নাথ, নো এন আর সি মুভমেন্টের কলকাতা থেকে বিপ্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ। ধানবাদ লিওন ক্লাবে ঘটা করে আয়োজন করা হয় জাতীয় সম্মেলনের।  


সকাল এগারোটার সময় শোভাযাত্রার মাধ্যমে সূচনা হয় সম্মেলনের। রনধীর বার্মা চক থেকে লিওন ক্লাব পর্যন্ত চলে এ শোভাযাত্রা। যে শোভাযাত্রাতে ভিড় জমিয়েছিল ধানবাদের অসংখ্য বাঙালি। শোভাযাত্রা শেষ হয় এগারোটা ত্রিশ মিনিটে। এরপর এগারোটা ত্রিশ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুরু করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারপর দুপুর বারোটা ত্রিশ মিনিটে স্বাগত ভাষণ ও সভার সভাপতি নির্বাচন, ঝাড়খণ্ড রাজ্য কমিটি গঠন, ধানবাদ জেলা কমিটি গঠন। এরপর দুপুর দুটোর সময় মধ্যাহ্ন ভোজন। সবশেষে দুপুর তিনটের সময় দীর্ঘ আলোচনা সভার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে পুরো সম্মেলনের। 

এবসোর এই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কয়েকটি বিষয়সমূহ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেমন ত্রিভাষা সূত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সহ কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত দ্বিতীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে ভারতের সব স্কুল বাংলা ভাষা পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এনসিইআরটি বোর্ডের বই বাংলা ভাষাতে প্রকাশ করতে হবে। দেশের যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ শতাংশ বাঙালি শিক্ষার্থী আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাংলা ভাষা পড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলা ভাষা অধ্যুষিত অঞ্চলে সমস্ত প্রশাসনিক স্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঝাড়খণ্ড ও আন্দামান সহ যে সকল রাজ্যে বাংলাভাষী জনসংখ্যা প্রথম স্থানে সেখানে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাংলা ভাষাকে ধ্রপদী ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল সার্ভিস সহ সকল চাকরির পরীক্ষা বাংলা ভাষায় চালু করতে হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে বাংলা ভাষার জন্য দ্বিতীয় প্রধান বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। সেই সাথে পূর্ব ভারতের অন্যান্য ভাষাগুলোর জন্যও উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।     

এছাড়াও আরো বেশ কিছু দাবি উঠে আসে এই সম্মেলনের মাধ্যমে। যে দাবিগুলো পূরণ হলে বাঙালিদের জীবনে নেমে আসবে নতুন দিন৷ এই দাবিগুলি হলো প্রতিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরের সাইন বোর্ড ও জন পরিষেবার প্রতিটি কাগজপত্রে বাংলা রাখতে হবে। ঝাড়খণ্ড ও কেন্দ্রীয় সরকার তথা বেসরকারি দপ্তরের কর্মীদের বাংলা ভাষা জানা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা রাখতে হবে। সমস্ত কেন্দ্রীয় তথা রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে একজন বাংলা ভাষা অনুবাদক বহাল করতে হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ঝাড়খণ্ডের সমস্ত স্কুল ও কলেজে বাংলা ভাষাতে পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। গত বছর জামশেদপুরে যে ক্ষুদিরামের মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছিল তা ঝাড়খণ্ডের নতুন সরকারকে আবারো গড়ে দিতে হবে।     
   
উপরিউক্ত দাবিগুলো বাদেও বাংলা ও বাঙালির অধিকার নিয়ে অসংখ্য প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যা এককথায় লিখে শেষ করা যাবেনা। তাই সেইসব দিকগুলো আমরা এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করছি না। ঝাড়খণ্ডের বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এবসোর নতুন ভোরের সূত্রপাত ঘটলো। ঝাড়খণ্ডের বাঙালিদের যাতে কোনোভাবে বঞ্চিত না করা হয় সেইসব দিকে জোর দিতে আগামীদিনে এবসো আরো বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে। বলতে গেলে এবসোর জাতীয় সম্মেলন শেষ হলো সাফল্যের মাধ্যমে। এই সম্মেলনে ধানবাদের বাঙালিদের মধ্যে একটা অন্য উত্তেজনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক            
                                                                                                                      
                                




No comments