Header Ads

বাংলা ভাষার অধিকার হরণ করায় রেল দপ্তরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন সঞ্জীব চক্রবর্তী


রেল দপ্তরে সব ভাষায় সমান অধিকার থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বাংলা ভাষাতে পরিষেবা দেওয়া হয়না। ফলে বিভিন্ন বাঙালি দৈনন্দিন জীবনে সমস্যাতে পড়ছেন। বাংলাতে পরিষেবা না পাওয়ার জন্য অনেকে অনেক রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে ওঠেন৷ বিভিন্ন স্টেশনের রেলের ডিসপ্লেতে বাংলা দেখতে পাওয়া যায়না। রেলের পরীক্ষা বাংলাতে হয়না। রেল পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষাতেও বাংলাকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে। যার ফলে বাংলা ভাষার পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। 


গত একুশে ফেব্রুয়ারী সঞ্জীব চক্রবর্তী নামের একজন বাঙালি ব্যক্তি যাত্রী হিসেবে বাংলাতে পরিষেবা না পাওয়ার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। বাঙালি যাত্রী হিসেবে বাংলা ভাষার অধিকার হরণ করায় তিনি বাধ্য হয়ে রেল দপ্তরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। একজন রেলযাত্রী হিসেবে নিজের মাতৃভাষাকে খর্ব করার অভিযোগ এনে তিনি এই মামলা করেন।   
  
রেল দপ্তরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে লিটারেসি প্যারাডাইসকে সঞ্জীব চক্রবর্তী জানান যে "আমাদের রেলদপ্তরে ত্রিভাষা নীতি রয়েছে। তাদের যে অফিশিয়াল সার্কুলার রয়েছে, সেই সার্কুলার অনুযায়ী তিনটে ভাষা যে-কোনো রাজ্যে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়৷ ১৯৬৩ সালের রাজভাষা আইন ও দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট ১৯৬১ আইন অনুযায়ী রেল দপ্তর যে বার্তা দেয় তার জন্য প্রতিটি রাজ্যের স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করতে তারা বাধ্য৷ কিন্তু আমরা দেখছি যে পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ছিয়াশি শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষা ছাড়া আর অন্য কিছু জানেন না। শেষ সেনসাস কিন্তু তাই বলছে। সেখানে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গাই বাংলা ভাষাকে তারা অগ্রাহ্য করছেন৷ কখনো দেখছি রেলের নেমপ্লেটে বাংলা থাকছে, আবার কখনো থাকছে না। আপনি হয়তো জানেন যে এনজিপি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে কিছু বছর আগে পর্যন্ত রেল দপ্তরের সমস্ত বোর্ড বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা ছিল৷ কিছু মাস আগে সেইসব বোর্ড সরিয়ে ফেলে শুধু হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা হয়। 

এছাড়াও আমরা দেখেছি উত্তরবঙ্গের এনজেপি সংলগ্ন ছোট স্টেশনগুলোতে রেলের সতর্কবার্তা ও অ্যানাউন্সমেন্টগুলো হিন্দি ও ইংরেজিতে করা হচ্ছে। বাংলা একবারেই বলছে না৷ এনজেপির এডিআরএমের অফিসে বাংলাতে একটা সাইনবোর্ড আছে তাতে দেখা যাচ্ছে অক্ষরটা লেখা বাংলায় কিন্তু শব্দটা হিন্দি শব্দ। অদ্ভুত ভাবে হিন্দি শব্দগুলোকে বাংলা হরফে লেখা হচ্ছে। ওনারা সব জেনে বুঝেও বাংলা ভাষাটার যে অমর্যাদা করছেন সেটার জন্য আজকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছি৷ আমরা এডিআরএমের অফিসে গিয়েছিলাম। রেল দপ্তরের অফিসার যখন শিলিগুড়িতে এসেছিলেন তাকে আমরা স্টেশনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাইনবোর্ডগুলো পর্যন্ত দেখিয়েছিলাম। তাকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আজকে যে মানুষটা বাংলা ছাড়া অন্য কিছু জানেন না তাকে হ্যারাসমেন্ট করার কী কোনো মানে হয়? বা বাংলাতে সতর্কবার্তার অভাবে তো তার প্রাণ সংশয়ও তো ঘটতে পারে, আপনারা কেন এটা করছেন?

এই যে জায়গাটা তাদেরকে বারবার দেখানো সত্বেও কোনো কাজ হলোনা। তারা সব কেবল দেখলেন, শুনলেন আর চলে গেলেন৷ একজন রেলযাত্রী হিসেবে আমার ভাষাতে আইনগত ভাবে পরিষেবা দিতে রেল বাধ্য। যদিও সেই পরিষেবা আমরা পাচ্ছিনা। রেল হলো একটা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। সেখানে আমরা যেভাবে দিনের পর দিন অবহেলিত হচ্ছি। এই অবহেলার বিরুদ্ধে একজন যাত্রী হিসেবে বাংলাতে পরিষেবা না পাওয়ার বিশেষ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চে একটা মামলা দায়ের করেছি। এটাই শেষ না৷ আমরা বাংলার অধিকার নিয়ে ভাষা দিবসের দিন বঙ্গবাসীদের উদ্দেশ্যে রেলের বিভিন্ন অফিসে আমরা আমাদের স্মারকলিপি ও দাবিপত্র জমা দিয়ে এসেছি৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অন্যান্য দপ্তরও যারা রয়েছে তারাও যদি আমাদের অধিকার খর্ব করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আগামী দিনে আমরা মামলা দায়ের করবো।" 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments