Header Ads

খড়্গপুরের মাটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বাঙালির উদ্দেশ্যে সচেতনতার বার্তা দিলেন অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়


গতকাল ছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারী। আমরা সকলেই জানি এ দিনটির একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী রফিক, জব্বার, বরকতের মতো কয়েকজন বাঙালি তরুণ বাংলা ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ইউনেস্কো থেকে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এদিন ওপার বাংলার পাশাপাশি এপার বাংলার বিভিন্ন জেলায় জেলায় জাঁকজমকভাবে পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 


প্রত্যেকটি জেলায় যখন পালিত হয় ভাষা দিবস সেখানে পিছিয়ে ছিলনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও। এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর বইমেলা কমিটির উদ্যোগে খড়্গপুরে অতুলমণি পলিটেকনিক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  প্রাঙ্গণে ঘটা করে উদযাপিত হলো ভাষা দিবস। যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা।

এ অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিল অসংখ্য মানুষ। তারা সকলে বিশেষ আগ্রহ সহকারে দেখেন পুরো অনুষ্ঠান। সকলের মধ্যেই ছিল একটা আলাদা উত্তেজনা। এ অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানো হয় বাংলাদেশের শহিদ মিনারের ছবি দিয়ে।


এ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বিশেষ সচেতনতার বার্তা দেন। আজকের দিনে বাঙালি যে চরম সংকটের মুখে ভুগছে সেইসব কথা তিনি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন "আজকে হিন্দিভাষীদের পাসপোর্টে হিন্দি আছে। মানে তাদের মাতৃভাষা আছে। আর আপনার মাতৃভাষা বাংলা কিন্তু পাসপোর্টে নেই। কেনই বা থাকবে? সে তো পাসপোর্টের পরিচয় নিয়ে বিশ্বের কাছে যাবে। কিন্তু আপনার সেই অধিকারটা নেই ৷ এমন নয় যে ফরাসি দেশে যদি আপনার পাসপোর্টটা দেখানো হয় তাতে হিন্দি থাকতে হবে। এমন তো কোনো ব্যাপার নেই ৷ পাসপোর্ট মানেই তো হচ্ছে পররাষ্ট্রের সাথে সংযোগ। বরং হিন্দিভাষী রাষ্ট্র তো আর নেই কিন্তু বাংলা রাষ্ট্র  আছে। 

আপনি ব্যাঙ্কে হিন্দি ফর্ম দেখতে পাবেন কিন্তু বাংলা ফর্ম দেখতে পাবেন না। আপনাকে যে পরিষেবা ব্যাঙ্কে দেওয়া হয়না তার জন্য কিন্তু আপনাকে ইন্টারেস্ট বেশি দেওয়া হয়না। পোস্ট অফিসে কোনো ফর্ম আপনি বাংলায় পাবেন না কারণ সেখানে হিন্দি আছে। আপনি পররাষ্ট্রে যাবার জন্য যদি ভিসাতে আবেদন করতে চান তাতে বাংলা ভাষাতে ফর্ম থাকে। আপনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইংল্যান্ডে ঢোকার জন্য সেই ভিসাতে বাংলা থাকে। অথচ সেই ভিসাটা যখন আপনার পাসপোর্টে ছাপা হয় সেখানে আর আপনি বাংলা খুঁজে পাবেন না। সেটা কিন্তু ভারত সরকারই দিয়েছে। একবার ভেবে দেখুন। কেন্দ্রীয়  সরকারের অধিকাংশ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিন্তু বাংলাতে হয়না, তা হিন্দিতে হয়। তবে একটাই পরীক্ষা কেন্দ্র সরকারের বাংলাতে হয়। তা হলো রেল দপ্তরের পরীক্ষা বাংলাতে হয়।  তাও কোনো দয়ার দানে পাওয়া নয়। আজকের বর্তমান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি এই জিনিসটি চালু করেন যে রেল দপ্তরের সকল পরীক্ষা সকল স্বীকৃত ভাষাতে দেওয়া যাবে। তাতেও একটা গলতা রয়েছে। আপনি বাংলার সব অঞ্চলে বাংলাতে রেল দপ্তরের পরীক্ষা দিতে পারেন না একমাত্র মালদা ও হাওড়া ডিভিশন ছাড়া। সর্বত্র হিন্দি রয়েছে।  আজকে আপনার ভাষা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। রেল পুলিশের পরীক্ষা, বিএসএফের পরীক্ষা বাংলাতে হয়না। শুধু হিন্দিতেই পরীক্ষা হয়।



সুভাষের জাতির ভাষায় সেনাবাহিনীর পরীক্ষা হয়না। রক্ত দিয়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছে আন্দামানের সেলুলার জেলে শহিদ হয়ে তাদের মাতৃভাষাতে পরীক্ষা হয়না। তাদের জাতির নামে কোনো রেজিমেন্ট নেই। সুভাষ বসুর সেনা যখন ইম্ফলে ঢুকে পড়েছিল তখন তাদের যে ঠেকিয়েছিল বা জালিওয়ানাবাগে যে নিরস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের নামে ভারতীয় সেনাতে রেজিমেন্ট আছে। সিআরপিএফের পরীক্ষা হিন্দিতে হয় অথচ বাংলাতে হয়না। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ওয়েবসাইটে আপনি বাংলা পাবেন না ৷ ইনকাম ট্যাক্স যে আপনি দেবেন তা হিন্দিতে জমা দিতে পারবেন। আপনি বাংলাতে জমা দিতে পারবেন না। এই যে স্কিল ইন্ডিয়া বা স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এই যে স্কিমগুলো আপনি শুনেছেন ৷ শুনবেনই কিন্তু পড়তে পারবেন না। কারণ তার ক্রোড়পত্র হিন্দিতে আছে, বাংলায় নেই।" 

এভাবে তিনি দীর্ঘ বক্তব্যের মাধ্যমে বাঙালির উদ্দেশ্যে সচেতনতার বার্তা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য শোনার পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল খড়্গপুরবাসীরা অসংখ্য ভালোবাসাতে ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে।

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments