Header Ads

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাঙালিদের উদ্দেশ্যে সচেতনতার বার্তা দিলেন 'স্লিপিং পিলস' ব্যান্ডের শিল্পী ও গিটারিস্ট দেবায়ণ গুপ্ত


আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার জন্য ওপারের পূর্ববঙ্গের বাঙালি মা-বোন-ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছিল। যাদের প্রাণের বিনিময়ে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ। আজকের দিনটির গুরুত্ব বিশাল। এপারের অনেক বাঙালি হয়তো বলতে পারেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তো বাংলাদেশের, আমরা কী করবো এই দিনটি পালন করে? তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা আপনি যেহেতু বাঙালি আর আপনার ভাষা বাংলা সেহেতু এ ভাষার প্রতি আপনার একটা দায়িত্ব রয়েছে। যে দায়িত্বকে আপনি কখনোই অবজ্ঞা করতে পারবেন না। বাংলা ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। কাজেই প্রতিটি সন্তানের উচিৎ নিজের মায়ের দায়িত্ব পালন করা।


পৃথিবীতে মাতৃভাষা প্রেম হলো মা-সন্তানের সম্পর্কের মতো। আজকের অমর একুশের স্বর্ণালী দিনে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির প্রতি সচেতনতার বার্তা দিলেন 'স্লিপিং পিলস' বাংলা ব্যান্ডের শিল্পী ও গিটারিস্ট দেবায়ণ গুপ্ত। বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের যে একটা গুরুদায়িত্ব রয়েছে তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ককে তিনি জানান যে " আজকে ভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমরা সবাই জানি। আজ একুশে ফেব্রুয়ারী৷ প্রথমত আমি আমার পরিচয়টা দিই আমি দেবায়ণ গুপ্ত। আমার একটা অন্য পরিচয় রয়েছে, আমি একজন গিটার বাদক৷ আমার একটি বাংলা ব্যান্ডের দল আছে 'স্লিপিং পিলস'। সেসব প্রশ্নে আমি পরে আসবো। যেটা প্রধান প্রশ্ন আমার কাছে তা হলো ভাষা দিবস। ভাষা দিবস বলতে আমরা কী বুঝি? বাঙালি হয়ে আমরা কী জানি বাংলা ভাষা দিবস সম্বন্ধে? ভাষা দিবস মানুষকে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে? ভাষা দিবসে কী হয়েছিল? সেটা আমাদের প্রথমে জানতে হবে। প্রত্যেক বাঙালিকে জানতে হবে। বাঙালি কিন্তু অজ্ঞানত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেটা বাঙালি নিজেও জানেনা। আটচল্লিশ থেকে বাহান্ন সালের যে সংগ্রাম তা যদি ভুলে যায় তাহলে একজন বাঙালি নিজেকে কখনোই প্রকৃত বাঙালি হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে না। 

এটা কিন্তু একটি বেদনার ব্যাপার আবার খুশিরও ব্যাপার যে আমরা বাঙালি। ১৯৫২ সালে আমরা মাতৃভাষা দিবসটাকে পেয়েছিলাম৷ বেদনার ব্যাপার এই জন্যই, তার কারণ সেদিন রফিক, জাব্বার, সালাম, বরকত ও আরো অনেকের নাম উল্লেখ করা আছে তাঁরা কিন্তু সেদিন শহিদ হয়েছিলেন। আর আটচল্লিশ থেকে বাহান্ন সাল অবধি সবকিছু তো আর ইন্টারনেটে পাওয়া যায়না। আমি যতদূর বই পড়ে তথ্য জেনেছি কম করে হলেও ছত্রিশ থেকে সাইত্রিশটা ঝামেলা, অনেক দুর্ঘটনা, অনকে মৃত্যু। ঘরে ঢুকে পাকিস্তানিরা বলেছিল হবেনা। প্রথম বাঙালি যিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তিনি হলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই নামটা অনেকেই জানেন না হয়তো। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কিন্তু সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। তারপর বাহান্ন সাল থেকে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারীকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করতে পারছি। শুধু এই নয়, ১৭ ই নভেম্বর, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দ্বারা আমাদের এই একুশে ফেব্রুয়ারীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমরা এখন এটা পালন করছি। কেউ হয়তো ইংরেজিতে এটাকে ইন্টারন্যাশনাল মাদার টাঙ্গ লিঙ্গুইস্টিক ডে বলছে। খাঁটি বাঙালি হিসেবে আমি যেটা বলবো তা হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

বাংলা পক্ষের সাথে সবসময় থাকতে হবে৷ বাংলা পক্ষের ফেসবুকে একটি পেজ আছে। তোমরা হয়তো জানোনা যে আমি বাংলা পক্ষের একজন কর্মী৷ বাংলা পক্ষ থেকে দুটো কথা বলি৷ একটা বাঙালিকে বেঁচে থাকতে হলে তার প্রধান অস্ত্র কিন্তু হতে হবে বাংলা ভাষা৷ তাই নয় কী? আমি যদি এখন আসাম যাই, আমাকে অসমিয়াতে কথা বলতে হবে। আমি যদি বিহারে যাই বা ইউপিতে যাই সেখানে খাপ খুলতে পারবো না পাতি বাংলা ভাষায়। বাঙালি কিন্তু এখানে হার মানছে বাংলায় থেকে। পশ্চিমবঙ্গে বাস করে আমরা কিন্তু হার মানছি৷ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে আমরা বাংলাভাষী হয়েও বাংলায় থেকে হিন্দি ভাষা বলতে হবে, বিহারী কথা বলতে হবে, হিন্দিদের সাথে থাকতে হবে৷ এটা আমাদের একজনই করছে সে হলো আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার৷ ওরা বোঝা হিসেবে এটা আমাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছি না। আমরা অজ্ঞানত বিক্রি হয়ে গেছি বা হয়তো আমি বিক্রি হয়ে গেছি বা আপনিও বিক্রি হয়ে গেছেন৷ আস্তে আস্তে হয়তো আমি আরো বিক্রি হবো কিন্তু আমি সেটা হওয়া থেকে নিজেকে রুখবো। 

আমি এই বক্তব্যটি এটুকুই বলবো যে, নিজেদের আজকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পারিনা কিছুটা সময় ব্যয় করতে ফেসবুকে৷ কিছুটা পড়ে নিতে পারিনা৷ কিছুটা ডেটা আপডেট করি। এখানে খেতে যাই, ওখানে খেতে যাই। ছবি আপলোড করি। আমরা পারিনা শহিদদের নিয়ে কিছু লিখতে৷ তাদের নিয়ে পড়াশুনো করতে। তাদেরকে নিয়ে ভালোবাসতে৷ এটা আমাদের জেদ ও প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ। আমাদের লড়াই হওয়া উচিৎ যে আমরা বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো৷ এই নয় যে আমি বলছি বা বাংলা পক্ষ বলছে যে এগিয়ে যাও বাংলা নিয়ে থাকো৷ হয়তো আমি এক কান দিয়ে শুনলাম আর অন্য কান দিয়ে বের করলাম৷ এরকম করলে কিন্তু হবেনা৷ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বাংলা পক্ষকে। এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বাংলা ভাষাকে৷ এই সংঘটনটা করা হয়েছে খুব ভালো ব্যাপার। এই সংঘটনে আমাদের প্রফেসর গর্গ চট্টোপাধ্যায় বা গর্গদা আছেন৷ সবাই হয়তো ওনাকে চেনেন। নাহলে আমি একজন শিল্পী লাইনে থেকে শিল্প করে আমি নিশ্চয় আসতাম না এখানে। আমার খুব ভালো লেগেছে। 

আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাই আমরা যখন কলেজে শো করতে যেতাম সেখানে বলা হতো হিন্দি গান কিন্তু গাইতে হবে। কেন আমরা নিজেদের বাংলা গান গাইতে পারিনা? আমরা সেই কারণে বাংলা ব্যান্ডের শো করাটাই বন্ধ করে দিচ্ছি। বাংলাকে যেহেতু ভালোবাসি বলে। যদি কখনো শো করি নিজেদের গান করি, নিজেদের বাংলা গান করার চেষ্টা করি৷ বাংলা কতো মিষ্টি শব্দ আপনি জানেন? বাংলায় নাটক করা, গান করা, কবিতা করা খুবই ভালো জিনিস৷ বাংলাটাকে জানতে হবে। বাংলাকে ভালোবাসতে হবে৷ রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি মুসলমান ছিলেন এটা অনেকেই হয়তো জানেন না৷ কাজী নজরুলকে জানতে হবে৷ মাইকেল মধুসূদন দত্তকে জানতে হবে। হ্যাঁ, ওনার নামের আগে মাইকেল আছে তো কী হয়েছে? উনি ওনার ধর্ম-জাতি বদলেছেন তা বলে কিন্তু বাংলা ভাষাটাকে অপমান করেননি৷ উনি বাংলা ভাষাতেই লিখেছেন। বাংলা ভাষা নিয়েই কিন্তু এগিয়ে গেছেন৷ ওনার বিখ্যাত লাইন 'সচকিতে বীরবল দেখিলা সম্মুখে হেমতম স্থূলহস্তে ধূমকেতু সম'। এটার মানে হলো একজন বীরবল দাঁড়িয়ে আছেন তার বড়ো চেহারা নিয়ে হাতে কিছু একটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা দিয়ে উনি আঘাত করতে পারেন৷ এই জিনিসগুলোকে জানতে হবে৷ এই জিনিসগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ এই জিনিসগুলো নিয়ে বাংলা রচনা করে যেতে হবে। বেশি করে বাংলা বই লিখে যেতে হবে। বেশি করে বাংলা বই পড়তে হবে৷ বাংলা সিনেমা দেখতে হবে। 

আজকাল বাংলা সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়না। বাংলা নাটক তো লোকে দেখেই না৷ বাংলা গান শোনেন না। বাংলা ব্যান্ডের গান শোনেন না। শুধু সারাদিন হিন্দি আর হিন্দি বেজেই যাচ্ছে অথচ আপনি বিহারে যান সেখানে কোনো রেডিও স্টেশন নেই যেখানে আপনি তৃপ্তি করে বাংলা গান শুনতে পারেন৷ পারবেন না আপনি। ওখানে কিন্তু স্যাটেলাইট চলে৷ ইচ্ছে করলেই আসতে পারে৷ ওদের কিন্তু ওরকম ভাবেই করা আছে৷ আস্তে আস্তে ওদের টাকার জোর আছে বলে ওরা আমাদের কিনে নিচ্ছে৷ আমার বক্তব্য শেষ করবার আগে আর একটাই কথা বলবো যে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসুন৷ বাংলার পাশে থাকুন৷ বাংলা পক্ষের পাশে থাকুন৷ জয় বাংলা।"

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments