Header Ads

বিশ্বভারতীতে হিন্দি অনুবাদে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানোর বিরোধীতায় ক্ষোভ উগরে দিলেন চন্দন চ্যাটার্জী, কৌশিক মাইতি ও রঞ্জিৎ বিশ্বাস


আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর তারই পূর্বে ঘটে গেল একটি অঘটন। যা বাঙালির মনে আঘাত হানতে পারে। বিশ্বভারতীর বুকে গাওয়া হলো রবীন্দ্র সঙ্গীতের হিন্দি অনুবাদ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনা সঙ্গীতকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। চলতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক উপাসনা সঙ্গীত গাওয়া হয় হিন্দিতে।যা রীতিমতো বিদ্বেষের সৃষ্টি করেছে বাঙালিদের মনে৷ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও আচার্য মঞ্জুরানি সিংহ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপিকা হলেন মঞ্জুরানি সিংহ। 


আচার্য মঞ্জুরানি সিংহ যার বাংলাটা ঠিক মতো আসেনা। তিনি বাংলা ভাষাতে অতোটা অবগত নন বলে জানান। যার কারণবশত তিনি হিন্দিতেই বক্তব্য রাখেন। তার বোঝার সুবিধার্থে বাংলা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হয় হিন্দি অনুবাদে! 'ধ্বনিল আহ্বান' ও 'ওই আসন তলে' গান দুটি গাওয়া হয় হিন্দি অনুবাদে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য বাঙালি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। এমনকি বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের একাংশও খুশী নয় এ ঘটনাতে। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় হলো বিশ্বভারতী। যা বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। বাংলার বুকে গড়ে ওঠা সত্বেও এ প্রতিষ্ঠানে বাংলাকে ব্রাত্য রেখে হিন্দিতে গান গাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে বাংলা ভাষার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। বাংলার বুকে এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিশ্বভারতীর কিছু পড়ুয়াদের মতে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে হিন্দিতেই পুরো অনুষ্ঠান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি৷ এ ঘটনার প্রসঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছে 'বাংলা পক্ষ', 'আমরা বাঙালী' ও 'এবসো'র মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো। তারা সকলেই জানিয়েছে যে এই জটিলতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সকল মানুষকে সচেতন করার ডাক দিয়েছে তারা।                                                                             
বিশ্বভারতীর এ ঘটনার প্রসঙ্গে 'এবসো'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চন্দন চ্যাটার্জী লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন "বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী। বাংলা ও বাঙালির এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পড়ুয়ারা এখানে আসতেন ও পড়তেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এখানে যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত হিন্দিতে গাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী যারা রয়েছেন তাদের একটা আগ্রাসন হয়েছে বিশ্বভারতীর ওপর। এটা আমরা মেনে নিতে পারিনা। এখানে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বা মূল সৃষ্টি বাংলায়। কাজেই রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে অন্তত বাংলাতেই বাজানো উচিৎ। তার বদলে যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশ্বভারতীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিতে চালিয়ে থাকে। তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যে ঘটনার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"

বীরভূম বাংলা পক্ষ এ ঘটনার বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ করার ডাক দিয়েছে। বাংলা পক্ষের সহযোদ্ধা কৌশিক মাইতি লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন 'বিশ্বভারতী এটা রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে বানানো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের স্বপ্ন। যেখানে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা আস্তে আস্তে বাস করে আসছিল বেশ কিছু বছর ধরেই। এখন তা চূড়ান্ত নোংরামির পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যে ঘটনাটা প্রকাশ্যে এসেছে যে বিশ্বভারতীর উপাসনা হিন্দিতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাধ্যমে হয়েছে। বাংলাতে রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশ্বভারতীতে না বাজানো মানে রবীন্দ্রনাথকে খুন করা, বাংলা ভাষা ও বাঙালিকে খুন করা। আমাদের এখন একটাই কাজ হিন্দি ও উর্দু সাম্রাজ্যবাদকে ভারতের মাটি থেকে উপড়ে ফেলা। বাংলা পক্ষ এর জন্য পথে নামবে। বীরভূম বাংলা পক্ষ রাস্তায় নামবে।প্রতিটি অহিন্দি জাতি সংঘবদ্ধ ভাবে হিন্দি ও উর্দু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। বাংলা পক্ষ বাংলাতে প্রতিবাদ করছে। আগামীদিনে আরো বেশি বেশি করে আমরা রাস্তায় নামবো।"

ত্রিপুরার 'আমরা বাঙালী' দলের 'ত্রিপুরা বাঙালী ছাত্র যুবসমাজ রাজ্যকমিটি'র পথসচিব রঞ্জিত বিশ্বাস লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন "ত্রিপুরা বাঙালী ছাত্র যুবসমাজের রাজ্যকমিটির পথসচিব হিসেবে বলবো বিশ্বভারতীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কুরুচিকর ঘটনা। আমাদের মতে অবশ্যই এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এটি হঠাৎ করে ভুলে যাওয়া ঘটনা নয়। আজকে অমর একুশের প্রাক্কালে এমন ঘটনার পিছনে দায়ী কে? এই কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা বাংলাতে রবীন্দ্র সঙ্গীত অনুশীলন করেছিল তাদের হঠাৎ করে বলা হচ্ছে হিন্দিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত অনুশীলন করতে। যা দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় এটি পরিকল্পিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু বছর আগে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার দাবী তুলেছিল যা আজও কার্যকরী হয়নি। আমরা বিশ্বভারতীর এ ঘটনার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো। আজকে যদি আমরা পথে নামা বন্ধ করে দিই তাহলে আমরা একদম শেষ হয়ে যাবো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোজাসাপটা ভাষায় বলেছিলেন, "বাংলাভাষা ভারতবর্ষের প্রায় পাঁচ কোটি লোকের ভাষা। হিন্দি বা হিন্দুস্থানী যাদের যথার্থ ঘরের ভাষা, শিক্ষা করা ভাষা নয়...।" আমরা আমাদের বাংলা ভাষার দাবী নিয়ে বহুদিন ধরে পথে নেমে আন্দোলন করছি। বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করবার জন্য আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আগেও করেছি, এখনও করছি ও ভবিষ্যতেও করবো। আমাদের দাবী যদি ভালোভাবে না মানা হয় তাহলে এপারের বাংলার বুকেও আরেকটি ২১ শে ফেব্রুয়ারী ঘটানো হবে।"     
    
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments