Header Ads

ভারতের প্রথম ভারীশিল্পের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন বাঙালি। যার হাত ধরে বাংলাতে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল


বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে লেখা লিখতে গেলে একটি কথা বারবার বলতে হয়। অনেকে বলেন বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্য হয়না বা হবেনা। যেটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে কিছু না কিছু ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা। মানুষ চাইলেই সব কাজে সফল হতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালিদের একটি বড়ো অবদান রয়েছে। এই প্রতিবেদনে এমন একজন বাঙালি ব্যবসায়ীর কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যার নাম হয়তো আপনারা শোনেননি কিংবা শুনে থাকলেও এড়িয়ে গেছেন। 

গুগুল ও অন্যান্য সাইটে খোঁজাখুঁজি করেও বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কোনো ছবি পাওয়া যায়নি
বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ভারতের একজন খ্যাতনামা শিল্পপতি। যিনি ভারতবর্ষে প্রথম ভারী শিল্পস্থাপনের সূচনা করেন। যিনি বার্ণপুরে ইস্কো ইস্পাত কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পের প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু সময়ের মধ্যেই ইস্কোর প্রসার ঘটতে শুরু করে। ইস্কোর উন্নতির সাথে সাথেই এলাকার উন্নতি হতে থাকে। ইস্কোর প্রসঙ্গ উঠলেই ভেসে আসে এই বাঙালি শিল্পপতির নাম। ভারীশিল্পে বাংলার বুকে তাঁর হাত ধরে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল। 

বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয় ১৮৯৯ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত কলকাতাতে। তিনি শিবপুরে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশুনো করেছিলেন। তিনি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বি.এ ও এম.এ পাস করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মার্টিন এন্ড কোম্পানিতে চাকরিজীবন শুরু করেন। এই কোম্পানিতে কাজ করার সাত বছর গড়াতে না গড়াতেই তিনি বার্ন ও মার্টিন কোম্পানির অংশীদার হন। পরে এই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরও হয়ে ওঠেন। 

তাঁর পিতা ছিলেন রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। যিনি ছিলেন দেশের শিল্পের পথপ্রদর্শক। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে যিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর শিল্পের ওপর বড়সড় দায়িত্ব এসে পড়ে বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ওপর। তিনি হয়ে উঠলেন স্টিল কর্পোরেশন অব বেঙ্গলের সভাপতি। তিনি কিছুদিন সভাপতিত্বের কাজ করতে করতে বুঝতে পারেন যে দেশে ভারীশিল্পের বিকাশ ঘটার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। বিশ্বব্যাঙ্কের সহযোগিতায় তিনিই দেশে প্রথম বৈদেশিক মুদ্রায় ভারী শিল্পের প্রসার ঘটান। তাঁর কর্মোদ্যমে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। 

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্যার উপাধি পান। তিনিই পশ্চিমবঙ্গের শেষ 'স্যার' উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। তাঁর নিরলস পরিশ্রমে ইস্কো হয়ে ওঠে মহীরুহে পরিণত। এমন একজন সফল বাঙালি শিল্পপতির জন্য আজকে বার্ণপুর নগরে পরিণত হয়েছে। একজন বাঙালি কষ্টের বিনিময়ে এতগুলো শিল্প গড়ার পরেও বাঙালিদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে একটার পর একটা শিল্প। গুজরাটি ও মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের অধীনে আজকে বাংলার অনেক কারখানা চলে গেছে। অবাঙালিরা যখন আপনাকে বলবে যে বাঙালিরা ব্যবসা পারেনা তখন আপনার কর্তব্য এই মানুষটির নাম বলে ফেলা। বাংলাতে অসংখ্য শিল্পপতি রয়েছেন আমাদের অগোচরে। কিন্তু বর্তমানে বহিরাগতদের জনবিস্ফোরণের চাপে ও ভূমিপুত্র সংরক্ষণ না হওয়ার জন্য বাংলার বুকে চাকরি-পুঁজি হারাচ্ছে বাঙালিরা। এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ভাবার সময় এসেছে। তারা না দায়িত্ব নিলে সাধারণ মানুষকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে হবে।   
  
বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বাংলা ও বাঙালির গর্ব। দেশের প্রথম ভারীশিল্পের প্রতিষ্ঠাতা। আজ এই মানুষটির জন্মদিবসে লিটারেসি প্যারাডাইসের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।

No comments