Header Ads

জয়দেব কেন্দুলির বাউল মেলা বাংলার এক ঐতিহ্য, যা আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে


পুরান ও লোকগীতি মিলে মিশে যে জায়গা একাকার হয়ে মানুষের মন জয় করে তা হল কেন্দুলি জয়দেব গ্রাম।জয়দেব কেন্দুলি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমার অন্তর্গত অজয় নদের তীরে অবস্থিত একটি গ্রাম। বর্তমানে বেশ কিছু মন্দির ও আশ্রম পরিবেষ্টিত এই গ্রামটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। গীতগোবিন্দ কাব্যের রচয়িতা কবি জয়দেব দ্বাদশ শতকে এই স্থানে জন্মগ্রহণ করেন বলে মনে করা হয়। মতভেদ থাকলেও জয়দেবের জন্মস্থান হিসেবে কেন্দুলিকেই মনে করা হয়ে থাকে।


প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এই স্থানে বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই বাউল মেলা প্রায় এক মাস ধরে চলে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। তাই এই মেলার ঐতিহ্য আকাশ ছোঁয়া। একসাথে বাউল সাধক এখানে ভিড় জমায় যা সকলের মনকে মুগ্ধ করে দেয়। এক কথায় লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের ইতিহাস, কেন্দুলীর মন্দির, অজয় নদের শোভা, শীত, বাউল গান ও মেলার রকমারি জিনিস সবে মিলে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় এই মেলায় আগত সকলের।

পশ্চিমবঙ্গের মেলা গুলির মধ্যে এর সুনাম গঙ্গাসাগর মেলা, শান্তিনিকেতনের পৌষ পার্বণের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই গ্রামেই কবি জয়দেব জন্মগ্রহণ করেন বলে মনে করা হয়ে থাকে। যদিও মতবিভেদ আছে অনেকের মতে তিনি উড়িষ্যার কেন্দুলি সাসন নামক একটি জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামে জয়দেব রাধামাধবের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন যার এখনও পুজো করা হয় এবং যে আসনে বসে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়  তাও সংরক্ষণ করা রয়েছে যা অবশ্যই একটি দর্শনীয় স্থান।

বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির সূচনা জয়দেবের গীতগোবিন্দের পদাবলি থেকেই বলে ধারণা করা হয় তাই বাংলা সাহিত্য প্রেমী মানুষদের জন্যও এই জায়গাটা একটা তীর্থস্থান। মুঘল যুগে জয়দেব কেন্দুলি সেনপাহাড়ি পরগণার অন্তর্গত ছিল। তবে ঔরঙ্গজেব সপ্তদশ শতাব্দীতে একটি ফরমান জারি করেন যার ফলে এই পরগণা বর্ধমানের মহারাজা কৃষ্ণরাম রায়ের অধিকারভুক্ত হয়। মনে করা হয় যে  বর্ধমান রাজদরবারের সভাকবি যুগলকিশোর মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে বর্ধমানের মহারাণী ব্রজকিশোরী ১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রামে জয়দেবের জন্মভিটেয় রাধাবিনোদ মন্দির স্থাপন করেন। 


১৮৬০-এর দশকে নির্বাক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের রাধারমণ ব্রজবাসী এই গ্রামে তাদের কুলগুরু জয়দেবের জন্মভিটেয় নির্বাক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

কবি জয়দেবের তিরোধান দিবসকে সামনে রেখে এই মেলার সূচনা করেন নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মহান্তরা। এই কারণে মেলার নামও হয়েছে জয়দেব মেলা। সেই থেকে চলে আসছে মেলা। এই মেলায় শ’ খানেক বাউল সাধক বা সাধুদের আখড়ায় বাউল ভজনা চলতে থাকে যা এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ।

এক কথায় এ মেলা আপনার মন জয় করবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। দোকান-দানি, চড়ক, খাবার দোকান সব কিছুই হয় বড়ো আকারে। মেলা দেখার পাশাপাশি অজয় নদে পৌষ সংক্রান্তির দিন স্নান করেন হাজারে হাজারে মানুষ। এরকম মেলাগুলি বাংলার ঐতিহ্য বাংলার প্রাণ। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন জয়দেব মেলা।।

No comments