Header Ads

পুরোনো ছবি দেখতে ভালো লাগলে, দুঃখ বিলাসী হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে দেখুন জীবনের জলছবি "চৌরঙ্গী"


কখনো কখনো নারীর ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পায় কোনো পুরুষ অহল্যা। তেমনি এক রূপান্তরের গল্প চৌরঙ্গী। সত্যিই এ যেন পাষান পুরুষের রক্ত মাংসে গড়া সংবেদনশীল প্রেমিকে উত্তরণের গল্প। কিন্তু মধুর মিলন নয়, বিচ্ছেদের বেদনা এ গল্পের আকর্ষণ। কারণ.. "our sweetest songs are those that tell of saddest thought." তাই স্যাটা বোসের অস্ফুট যন্ত্রনা যখন আরব সাগরের তীরে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ে তখন দলা পাকানো কান্না গলা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। শুধু একরাশ হাহাকার মিশে থাকে অবক্ত বেদনায়। ভাবি দেখবো না ওরকম সিনেমা যা শুধু কষ্ট দেয়। তবু একটু একলা হলেই বুঁদ হয়ে যাই প্রাচ্যের প্রাচীনতম হোটেল শাহজাহানের রঙিন দুনিয়ায়। নানা চরিত্রের ভিড়ে এ যেন আধুনিক আরব্য রজনীর রূপকথা। 


পুরোনো কলকাতার ভিতর একটুকরো অবাক পৃথিবী। যেখানে পাশ্চাত্যের ব্রাহমসের সিম্ফনি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় প্রাচ্যের রবীন্দ্রনাথের গানে। এখানে যেমন ঔপনিবেশিক ইউরোপীয় সংস্কৃতির গোধূলিবেলার পড়ন্ত বিকেল রয়েছে তেমনি আছে তথাকথিত অভিজাত বাঙালি সমাজের দ্বিচারিতা। আভিজাত্যের জৌলুসের সাথে সাথে বেকারত্বের কঠিন সমস্যাই স্যাটা বোস আর শঙ্করের সম্পর্কের সেতুবন্ধন। তবে একটা কথা ঠিক পাশ্চাত্যের নিদারুন উপস্থিতি সত্ত্বেও বাঙালিয়ানার অভাববোধ করতে দেননি মূল উপন্যাসের লেখক শঙ্কর বা গল্পটির নিখুঁত চলচিত্রায়নকারী পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায়। যদিও চলচিত্রের তাগিদে মূল উপন্যাসের অনেক কিছুই কাটছাট করতে হয়েছে। তবুও কোথাও গতি হারাইনি সিনেমাটি।

কদিন আগে বঙ্গের এক বিখ্যাত সংবাদপত্র অবশ্য সৃজিতের শাহজাহান রিজেন্সির প্রশংসা করতে গিয়ে এই ছবিকে শুধু উত্তম কেন্দ্রিক বলে অভিযোগ করেছেন। তবু গুরুর প্রতি অসীম ভালোবাসা নিয়েই বলবো ম্যানেজার মার্কোর চরিত্রে উৎপল দত্ত,কাবেরীর ভূমিকায় সুপ্রিয়া দেবী,সুজাতার চরিত্রে অঞ্জনা ভৌমিক,ন্যাটাহরি ভানু, জুনো জহর,বঙ্কিম ঘোষ, হারাধন বন্দোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ,সুখেন দাস,তরুণ কুমার ,দীপ্তি রায় ইত্যাদি সকলেই যথাযথ সুযোগ পেয়েছেন ছবিতে। এবং প্রত্যেকেই অসাধারণ অভিনয় করেছেন নিজ নিজ চরিত্রে। অসংখ্য চরিত্রের ভিড়ে নিজ অভিনয় স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছেন প্রায় সবাই। কিন্তু ছক্কা হাঁকিয়েছেন আমাদের সকলের নয়নের মনি মহানায়ক উত্তম কুমার। কিন্তু যোগ্য সংগত ছাড়া অনেক বড় গায়কও ফেল করে যান। এক্ষেত্রে যোগ্য সংগত করেছেন শুভেন্দু ও অঞ্জনা দেবী। অনেকটা পেছনে থেকে যেনো আসল কাজটা করে দিয়েছেন গুণী অভিনেতা শুভেন্দু চ্যাটার্জী।

খুব বেশি না হলেও বেশ কয়েকটা ছবিতে উত্তমের বিপরীতে সমান সাবলীলতায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা ভৌমিক। সুচিত্রা সেনের স্নিগ্ধ রূপ, অভিজাত অভিনয়,সুপ্রিয়া দেবী সহ সেকালের তাবড় তাবড় নায়িকাদের ভিড়েও আপন সাতন্ত্রে সমুজ্জ্বল অঞ্জনা দেবী। তার প্রথাভাঙ্গা রূপ ও ছকভাঙ্গা অভিনয় আমাকে বারে বারে মুগ্ধ করেছে। সে যাইহোক উত্তমময় সিনেমা হয়েও কাহিনীর গুণে এ ছবি উত্তরণের গল্প,বিচ্ছেদের গল্প,বেদনার গল্প হয়ে দর্শক হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। তাই হাতে সময় থাকলে,পুরোনো ছবি দেখতে ভালো লাগলে, দুঃখ বিলাসী হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে দেখুন জীবনের জলছবি "চৌরঙ্গী"... আর রিনরিনে ব্যাথায় গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠুন.... "বড় একা লাগে এই আঁধারে, মেঘের খেলা আজ আকাশ পারে"।।

No comments