Header Ads

নব্বই বছর ধরে বাঙালি জীবনের আইকন হয়ে জীবিত রয়েছে সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলীন


প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ বোরোলীনের বিজ্ঞাপনের জন্য একটি কথা লেখেন "বঙ্গ জীবনের অঙ্গ বোরোলীন"। এমন কোনো বাঙালি নেই যারা বোরোলীন ব্যবহার করেন না। বোরোলীন আমাদের রোজকার জীবনে বিশেষ কাজে লাগে। প্রধানত শীতকালের জন্য এক ও অদ্বিতীয় অ্যান্টিসেপটিক পারফিউম ক্রিম। বছরের পর বছর বাঙালির প্রথম পছন্দের ক্রিমের তালিকায় প্রথম স্থান করে আসছে বোরোলীন। বাঙালির আইকনও বলা যেতে পারে বোরোলীনকে। অনেক ইতিহাস ও স্মৃতি বাঙালির জড়িয়ে আছে বোরোলীনের সাথে। গন্ধে ও কর্মে বোরোলীনের জুড়ি মেলা ভার। 


পায়ের ক্ষত হলে, ঠোঁট-গাল-পা ফেটে গেলে, গা খসখস করলে, পায়ে হালকা চুলকানি হলে সবেতেই সঠিক কাজে দেয় সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলীন। বর্ষকালের যত্নে, শীতের সুরক্ষায় ও রাতের পরিচর্যায় উপযুক্ত ক্রিম বোরোলীন ৷ আপনি হাজারো দামী দামী প্রতিষেধক যতই ব্যবহার করুন, সস্তা দামে শরীরের সঠিক পরিচর্যার জন্য বোরোলীন প্রথম ও শেষ কথা। 

স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্বদেশী আইকনিক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বোরোলীন। বরিচ পাউডার থেকে বোরো আর ল্যাটিন শব্দ অলিন যার মানে তেল। এই দুটো শব্দের সংমিশ্রণে নাম হয় বোরোলীন। আপনি কী জানেন এই বোরোলীন কার আবিষ্কার? নিঃসন্দেহে চোখ বন্ধ করে একজন বাঙালি ব্যবসায়ীর নামই বলে দেওয়া যায়। বোরোলীনের আবিষ্কর্তা একজন বাঙালি। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার আলিপুর নিবাসী গৌড়মোহন দত্ত নিজের বাড়িতে বোরোলীন আবিষ্কার করেন। তাঁর এই বাড়িটিকে বর্তমানে 'বোরোলীন হাউস' বলা হয়। ব্রিটিশ পণ্যের চাহিদাকে দমিয়ে স্বদেশী পণ্যের গুরুত্ব বাড়াতে বোরোলীন ব্যবসাতে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্থনৈতিক ভাবে ব্রিটিশ পণ্যকেও হার মানিয়েছে বোরোলীন। শোনা যায়, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার দিন বিনামূল্যে তিনি এক লক্ষ বোরোলীন বিতরণ করেছিলেন ৷ 

বোরোলীনের প্যাকেজিং ব্যবস্থা বহুলাংশে উন্নত। সবুজ রঙের হাতিমার্কা টিউবে রাখা ক্রিম প্রথম বাজারে আসে। ১৯২৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্যাকেজিং প্রায় একই থেকে গেছে। ব্রিটিশরা হাজার চেষ্টা করেও সেকেলে বন্ধ করতে পারেনি বোরোলীনকে। সূচনাপর্বের কথা বলা হোক বা বর্তমানের কথা, বোরোলীনের জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি৷ বরং জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গেছে। আজকাল শুধু বাঙালিরাই নয়, অন্যান্য জাতিও বোরোলীনে ভরসা পায়। জি.ডি ফার্মেসির তত্বাবধানে প্রথম বোরোলীন শিল্প স্থাপিত হয়৷ কলকাতা ও গাজিয়াবাদে রয়েছে জি.ডি ফার্মেসির শিল্প৷ গৌড়মোহন দত্তের নাতি দেবাশিষ দত্ত বোরোলীন কোম্পানির বর্তমান প্রধান কর্ণধার। 

বোরোলীনের নব্বই বছর কেটে গেছে। তবুও মানুষের ভালোবাসা সমান অটুট রয়েছে বোরোলীনের প্রতি। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি থাকুন না কেন, কখনো সঙ্গে করে বোরোলীনকে নিয়ে যেতে ভোলেনা। বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে দেখা যায় বোরোলীনের কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। বার্নস, বুটি ফুসকুড়ি বা মহিলাদের ক্যানডিডা গ্ল্যাবরাটা ভ্যাজিনিটিস থেকে বোরোলীন সম্পূর্ণ রূপে মুক্তি দেয়, তাই বোরোলীনের উপকারিতার যেন শেষ নেই। বাঙালি যেভাবে বোরোলীনকে ধারণ করেছে, সেভাবেই বোরোলীনকে বুকের মধ্যে আগলে রাখুক। ভুলে গেলে চলবে না যে, বাঙালি জীবনের আইকন বোরোলীন।

No comments