Header Ads

বাংলার পাহাড় কথায় আজ অযোধ্যা পাহাড়


সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক পর্যটন কেন্দ্র। নদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, উষ্ণপ্রসবণ, ঝর্ণা, বন-জঙ্গল, রিসর্ট, অভয়ারণ্য, জলাধার, হ্রদ, দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ অরণ্য, বাদাবন, বালিয়াড়ি, ঝাউবন, রডোডেনড্রন বা সুউচ্চ অট্টালিকা কী নেই বাংলার বুকে। বাংলার বিভিন্ন পাহাড় নিয়ে আমরা ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করবো। বাংলার পাহাড় কথায় আজকের আলোচনা অযোধ্যা পাহাড় নিয়ে।




বাংলার বুকে থাকা উল্লেখযোগ্য পাহাড় গুলি হল শুশুনিয়া, গোর্গাবুরু, পাঞ্চেৎ, মামা ভাগ্নে, জয়চন্ডী, বাঘমুন্ডী, অযোধ্যা, ডোলুই, টাইগার হিল, বিহারীনাথ, জয়ন্তী পাহাড়, সান্দাকফু, ফালুট, টংলু, ত্রিপুরার জাম্পুই, ত্রিপুরা পাহাড় ছাড়াও ঈশান বাংলা এবং বাংলাদেশে রয়েছে অনেক পাহাড় আমরা প্রধানত ভারতবর্ষে থাকা পশ্চিমবাংলা, ঈশানবাংলা এবং ত্রিপুরার পাহাড় পর্বত নিয়ে আলোচনা করবো।

অযোধ্যা পাহাড় পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম। পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত এই পাহাড় দলমা পাহাড় ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ। গোর্গাবুরু, মায়ুরি ইত্যাদি অযোধ্যা পাহাড়ের কয়েকটি শৃঙ্গ। গোর্গাবুরু হল অযোধ্যা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যার উচ্চতা ৮৫৫ মিটার। এই অঞ্চলটি ছোটো নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নীচু ধাপ। বাঘমুন্ডি বা অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশের অঞ্চলটি হল একটি সম্প্রসারিত মালভূমি।


বাঘমুন্ডি এই পাহাড়ের নিকটস্থ একটি শহর। অযোধ্যা পাহাড় পিকনিক স্পটে রয়েছে লহরিয়া ড্যাম যা খুব সুন্দর রূপ ধারণ করে শীতকালে। এখানে রয়েছে পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ড্যাম আপার এবং লোয়ার ড্যাম যার রূপ সকলকে মুগ্ধ করে। মার্চ মাসের দিকে এখানের আর একটি অন্যতম আকর্ষণ হল পলাশ ফুল। তবে লোয়ার ড্যাম এবং আপার ড্যামের কাছে পিকনিক করার অনুমতি দেওয়া হয়না তাই অযোধ্যা পিকনিক স্পটে সকলকে যেতে হয়, অবশ্য এই কারণে আপার এবং লোয়ার ড্যাম বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।



লোয়ার ড্যাম হয়ে আপার ড্যাম যাওয়ার রাস্তাটা সকলকেই মুগ্ধ করে এখানে। লোয়ার ড্যাম থেকে আপার ড্যাম যাওয়ার সময় লহরিয়া ড্যামকে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে তুরগা বাঁধ ও হ্রদ এবং বামনি নদীর একটি জলপ্রপাত (বামনী ফলস) ঘিরে পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। স্থানীয় গ্রাম চড়িদা' তে ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী হয় যা কুটিরশিল্প হিসেবে বিখ্যাত। অযোধ্যা পাহাড় থেকে একটু দূরেই রয়েছে খয়রাবেড়া এবং মুরগুমা ড্যাম। এছাড়াও রয়েছে ময়ূর পাহাড়। যেহেতু এখানে ময়ূর দেখতে পাওয়া যায় তাই এই পাহাড়টির নামও ময়ূর পাহাড়।



বর্তমানে অযোধ্যা পাহাড়ের নিকটেই একটি কাঠের দুর্গামন্দির নির্মিত হয়েছে যা আপনি দেখে আসতে পারেন।এছাড়াও মার্বেল লেক এখানের একটি অন্যতম গন্তব্য। পাথর খাদানে জল জমে এই হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়ের খুব কাছেই একটি পাহাড়ে বিগত কয়েক বছর খোদাই করে অনেক পাখি বানানো হয়েছে যা বর্তমানে পাখি পাহাড় নামে খ্যাত। 

হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, রাম ও সীতা বনবাসের সময় অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন। এখানে এসে সীতা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লে রাম নিজের তীরের সাহায্যে মাটি খুঁড়ে জল বের করে আনেন। সেই জায়গাটি সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয়। অযোধ্যা পাহাড় পর্বতারোহণ শিক্ষার্থীদের কাছেও একটি জনপ্রিয়।

No comments