Header Ads

জবলপুরের স্মৃতিগাঁথায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস


নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের সঙ্গে জবলপুরের সম্বন্ধ ছিল গভীর তাঁর ভাব ভাবনা আচার-আচরণে জবলপুরের সাধারণ জনগণের মন তিনি জয় করে নিতে পেরেছিলেন। স্বাধীনতার প্রতি আরও আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন ভরে দিয়েছিলেন তাঁদের মনে প্রাণেতাঁর আগমনের পর জবলপুরের ইতিহাসই যেন অনেকটা বদলে গেছে 'নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস', নাম দিয়েই জবলপুরের এই সেন্ট্রাল জেলের নাম রাখা হয়েছিল। জবলপুর এর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যই এখানকার মেডিকেল কলেজের নামও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস মেডিকেল হসপিটাল তথা কলেজ রাখা হয়েছে এছাড়া জবলপুরের কামানিয়া গেট তাঁর উপস্থিতিতে অধিবেশনের স্মরণার্থে বানানো হয়েছিল  


এটা হল সেই জায়গা যেখানে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস অধিবেশনে অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন এই জয় সুভাষ চন্দ্র বোসের এক ঐতিহাসিক জয়ই বলতে হবে। কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হবার পর তাঁর মধ্যে স্বদেশ ভাবনা আরও প্রবল ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। তাঁর ভাবনা আরও সশক্ত দৃঢ় হয়ে ওঠে জবলপুর এসে তিনি বহু সভা রেলি পরিচালিত করেছেন জানা যায় তার রেলি বা সভা চলা কালীন দূর-দূরান্ত গ্রাম শহর নগর থেকে সংখ্যাতীত লোক এসে উপস্থিত হত
ঐতিহাসিক রাজকুমার গুপ্তা বলেছিলেন, "নেতাজী যখনই জবলপুর আসতেন এখানকার নর্মদা নদীর তিলওয়ারা ঘাটে তিনি অবশ্যই আসতেননর্মদা নদীর সঙ্গে তাঁর একটা সখ্যতা ভাব ছিল।"  কারণেই পৌর কর্পোরেশন এখানে তারাপুরী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে জেন্ট্রি গেট, মিউজিয়াম, সে সঙ্গে লাইট এন্ড সাউন্ড শো ব্যবস্থা করা হবেনেতাজীর জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনার ছায়াছবি প্রেক্ষাপট দেখানো হবে এই শোতে
জবলপুর জেলের নির্মাণ ১৮১৮ তে হয়েছিল স্বতন্ত্রতা সংগ্রামের সময় নেতাজীকে দুবার এই কয়েদখানায় বন্দীত্ব স্বীকার করতে হয়েছিল জেলের আপন ঘরে তিনি প্রায় সময়ই অধ্যায়নরত থাকতেন নেতাজীকে ৩০ শে মে ১৯৩২ সালে সিউড়ি কেন্দ্রীয় জেল থেকে জবলপুরে নিয়ে আসা হয়
জবলপুর আসার পর তাঁকে ১৬ ই জুলাই ১৯৩২ সালে তাঁকে মাদ্রাজে  পাঠানো হয়েছিল। দ্বিতীয় বার ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ সালে তাঁকে আবার জবলপুরের জেলে নিয়ে আসা হয় তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই শরৎ চন্দ্র বোসও জেলেই ছিলন। এই সময় নেতাজীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে ডাক্তার এস এন মিত্র তাঁকে পরীক্ষা করেন এবং তাঁর অন্ত্রে টিবি রোগ ধরা পড়ে এরপর আবার তাঁকে ২২  শে মার্চ ১৯৩৩ সালে বোম্বাই এবং সেখান থেকে ইউরোপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৯৩৯ সালে ফেনী ত্রিপুরী অধিবেশন, জবলপুরে ভাগ নেওয়ার জন্য আসেন তখনও তাঁর গায়ে ছিল প্রবল জ্বর সে কারণে তিনি শিবিরে যোগদান করতে পারেননি নেতাজী জবলপুরে মোট তিন বার এসেছিলেন
জবলপুর জেলে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের স্মরণে আজও তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে তিনি যে বন্দী ঘরে থাকতেন সেটাকেও আলাদা ভাবে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। আজও এখনকার কয়েদিরা প্রতিদিন সুভাষ চন্দ্রের স্মৃতি মণ্ডিত সেই ঘরে এসে ফুল উৎসর্গ করে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে যান
সেন্ট্রাল জেল, জবলপুর থেকে এমন একটা পত্র পাওয়া গেল, যাতে নেতাজীকে শিউলি মিত্র দেশপান্ডে লিখেছিলেন পত্রে তিনি নেতাজীর অসুখ গলব্লাডারে ব্যথা ইবোডিএম জানিয়ে ছিলেন কারণে খাবার খাওয়ার পরে তাঁর প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল ৩ই মার্চ ১৯৩০ সালে লেখা এই পত্রে জানা যায় যে তাঁকে অসহনীয় ব্যথা সহ্য করতে হয়েছেপত্রের মাধ্যমে তিনি জানিয়ে ছিলেন যে তিনি ভিয়েনাতে থেকে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন
জবলপুরে নেতাজীর প্রচণ্ড লোক প্রিয়তা ছিল কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পদে জয়লাভের পর জবলপুর ১৫২ জন সহ কর্মীদের নিয়ে তিনি রথে ঘুরে ছিলেন জবলপুরের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তাঁর স্মরণ গাঁথা আজও চির উজ্জ্বল হয়ে আছে
নীরজ মিশ্রের কলম থেকে—'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।'... এমনি বর্জ্র কণ্ঠ, গম্ভীর আওয়াজ নিয়ে সুভাষ চন্দ্রের স্বাধীনতা সংগ্রামী সোচ্চারের  কথা কে ভুলতে পারে?হৃদয় থেকে দেশের প্রতি তাঁর কতখানি টান ছিল এই একটা আওয়াজে আমরা তা ধরে নিতে পারি। সুভাষ দেশকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন তিনি অসুস্থ হয়েও স্বাধীনতার হিতার্থে সর্বদা তৎপর থাকতেন। ১০৪° জ্বর নিয়ে তিনি জবলপুরে রেলী করেছেন প্রচণ্ড জ্বর থাকা সত্ত্বেও তিনি ত্রিপুরা অধিবেশনে এসে দেশ ভক্তদের উৎসাহ বাড়িয়ে ছিলেন তাঁর কাহিনী নাম এখনও মানুষের শরীরে নতুন শক্তি প্রেরণা যোগায় তাঁর জীবন শেষ পরিণতির কথা ভেবে এখনও  মানুষের রক্ত যেন টগবগ করে ফুটতে থাকে।'
এটা উল্লেখ করতে হয় যে জবলপুর তিলওয়ারা ঘাটে হয়েছিল কংগ্রেসের ৫২ তম অধিবেশন এই অধিবেশনে অধ্যক্ষ হিসাবে সুভাষচন্দ্র বোস নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন মহাত্মা গান্ধীজী সমর্থিত যে প্রার্থী ছিলেন  তাঁর নাম ছিল পট্টভি সীতারমৈয়া যাকে ২০৩ ভোটে হারিয়ে সুভাষ চন্দ্র জয়লাভ করেছিলেন এটা অবশ্য অন্য ব্যাপার ছিল, তৎকালীন শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলার জন্য নেতাজিকে চার মাস পরেই পদত্যাগ করতে হয়েছিল
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অন্তরে দেশের স্বাধীনতার জন্য কতটা যে উৎকণ্ঠা ছিল, কতটা যে উদ্বেগ ছিল, তৎকালীন সময়ে পরাধীন ভারতের সেই মর্মব্যথার স্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছিল তাঁর ভাষণে ২৯ শে জানুয়ারির ১৯৩৯ সালে জবলপুরের ত্রিপুরী অধিবেশনের সময় সুভাষ চন্দ্র বোসের কণ্ঠে যে বাণী উচ্চারিত হয়েছিল তারই অংশবিশেষ নিচে দেওয়া হল--তাঁর ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল বহু মূল্যবান--
আমার চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি ভাই বোনেরা! আমাকে দ্বিতীয়বার ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত করে যে সম্মান আপনারা আমাকে দিলেন তার জন্যে আমি হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি...
আমি আমার কথা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তার আগে রাজকোটে মহাত্মা গান্ধীর উদ্দেশ্যের সফলতা এবং তার ফলস্বরূপ উপবাসের সমাপ্তির জন্যে আমি আনন্দ প্রকাশ এবং সন্তোষ অনুভব করছি আপনারা জানেন যে মিশর থেকে ওয়াফদিস্তপ্রতিনিধি মণ্ডল ভারতের রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের অতিথিরূপে আমাদের এখানে পৌঁছেছেন তাদের সবাইকে স্বাগত করার জন্য আমরা এগিয়ে আসবো আমি অত্যন্ত খুশি এই জন্য যে আমাদের নিমন্ত্রণ তাঁরা স্বীকার করে ভারতের যাত্রা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে...
বন্ধুরা ! বছরের সম্ভাবনা অস্বাভাবিক এবং বিশিষ্ট বারের অধ্যক্ষ নির্বাচন সব সময়ের মত অনুসরণ করা হয়নি নির্বাচনের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে শেষটায় কার্যকারী কমিটির সদস্যর ৯০ সদস্যের মধ্যে থেকে ১২ জন প্রমুখ সদস্য--সর্দার প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আজাদ এঁরা ত্যাগ পত্র দিয়েছেন কার্যকারীর এক জন মহান এবং বিশিষ্ট সদস্য, পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু ঔপচারিক রূপে ত্যাগ পত্র দেননি কিন্তু এমন একটি বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি এটা বুঝতে পারেন যে তিনি ত্যাগ পত্র দিয়েছেন...
আমাদের অবস্থাকে স্মরণে রেখে দেশের রাজনীতির ওপর আমি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো সর্বপ্রথম সেই বিচারকে আমি স্পষ্ট করবো যে সব চিন্তা নিয়ে আমি কিছু দিন ধরে ভেবে যাচ্ছি স্বরাজ্য তৈরির সময় এসে গেছে, ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারকে আলটিম্যাটম দেবার সময় এসে গেছে...
ত্রিপুরী কংগেসের আগের সব ঘটনা গান্ধীজীকে আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য করিয়েছে এরপরে এক অসুস্থ অধ্যক্ষ ত্রিপুরিতে উপস্থিত হলেন এই পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষের আজের ভাষণ পূর্ববর্তী ভাষণ থেকে ছোট হওয়া স্বাভাবিক ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ সে হরিপুরাতে আমাদের মিলিত হওয়া থেকে এখন পর্যন্ত অন্তর্রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অনেক মহত্ব পূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে এগুলির মধ্যে সর্ব প্রথম ১৯৩৮এর মিউনিখ সমঝোতা যার জন্যে ফ্রান্স আর গ্রেট ব্রিটেনের মত পশ্চিমী শক্তিকে নাজি জার্মানির সামনে আত্মসমর্পণ করতে হল কারণে ইউরুপে ফ্রান্সের প্রভুত্ব সমাপ্ত হয়ে গেল আর একটাও গুলি খরচ করে বিনাই উত্তরাধিকার জার্মানির হাতে চলে গেলো স্পেনের গণতান্ত্রিক সরকারের ক্রমশ পতনের কারণ তানাশাহ ইটালি নাজি জার্মানির শক্তি প্রতিষ্ঠা বৃদ্ধি পায় ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মত তথাকথিত গণতান্ত্রিক শক্তি কিছু সময়ের জন্যে সোভিয়েত রুশকে ইউরোপের রাজনীতি থেকে আলাদা করে দেবার ষড়যন্ত্রে ইতালি আর জার্মানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কিন্তু এটা কত দিন পর্যন্ত সম্ভব হবে ?
আর রুশকে নিচু দেখাবার জন্যে ফ্রান্স আর গ্রেট ব্রিটেনের কি লাভ হবেএতে সন্দেহ নেই যে এশিয়া আর ইউরোপের বর্তমান সময়ের ঘটনার কারণ ফ্রান্সিসি আর ব্রিটানি সাম্রাজ্যবাদের শক্তি সম্মানের ওপরে গভীর আঘাত পৌঁছেছে...           
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মত হল ব্রিটিশ সরকারের কাছে আমাদের আলটিম্যাটাম দাবি পেশ করতে হবে আর দাবী পুরনের জন্যে ওঁদের নির্ধারিত সময় দিতে হবে যদি ওই সময় পর্যন্ত কোন উত্তর না পাওয়া যায় তা হলে আমাদের স্বরাষ্ট্রীয় করণের দাবী আদায়ের জন্যে আমাদের শক্তি ব্যবহার করতে হবে আজ আমাদের কাছে সত্যাগ্রহের অস্ত্র হাতে আছে আর ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা নেই সত্যাগ্রহের মত সংঘর্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়
দুঃখ আমি এই কথায় পাই যে কংগ্রেসের মধ্যে এমন অনেক নিরাশাবাদী ব্যক্তি আছে যারা চিন্তা করে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর কোন শক্তির আঘাত করার উপযুক্ত সময় এটা নয় কিন্তু আমি যথার্থ ভাবে বিচার করে দেখেছি এমনি নিরাশার কোন কারণ নেই অনেক জাগায় আমাদের কংগ্রেসী সরকার হবার জন্যে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগঠনের শক্তি আর প্রতিষ্ঠা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে সম্পূর্ণ ভারতে আমাদের জনান্দোলন অনেক জোরদার হয়েছে আর ভারতের অভূতপূর্ব জাগরণ ব্যাপারে কম মহত্বপূর্ণ নয়...
আপন রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আর কোন সময় উপযুক্ত হতে পারে ? এক শান্ত চিত্ত যথার্থবাদ  ভাবনা থেকে বলতে পারি যে বর্তমান সমস্ত পরিস্থিতি আমাদের এতটা অনুকুলে আছে যে, যে কোন ব্যক্তি অনেক আশাবাদী হতে পারে যদি আমরা কেবল আমাদের মতবিরোধকে ভুলে যাই এবং আমাদের সমস্ত শক্তি ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় সংঘর্ষে লাগিয়ে দিই তবে আমরা বর্তমান অনুকূল স্থিতির সর্বাধিক লাভ উঠতে পারবো তা না হলে আমরা এরকম সুযোগকে হারিয়ে ফেলব যা কিনা কোন রাষ্ট্রের জীবনে দুর্লভ হয়...
দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আমি শেষ প্রচেষ্টার কথা আগেই বলেছি এর জন্য যথেষ্ট ভাবে আমাদের তৈরি হতে হবে  সবচেয়ে আগে সত্ত্বার ওপরে লোভের জন্য আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থায় যে ভ্রষ্টাচার ঢুকে গেছে তাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে তারপর দেশের সমস্ত শক্তিকে সমন্বয় করে তাদের সহযোগ কামনা করতে হবে এমন এক রাজনীতির ব্যবস্থা হবে যা কিনা দেশের সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগঠনের প্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপর আমাদের নিজেদের স্বরাজ্য আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ এনে দেবে। 
বন্ধুরা!কংগ্রেসের বর্তমান পরিস্থিতি বড় অস্পষ্ট অনেক  মতভেদ উঠে এসেছেফলস্বরূপ আমাদের অনেক নেতাকর্মীরা হাতোৎসাহ হয়ে পড়েছেন, কিন্তু আমি অপরিবর্তিত আছি আপনারাও আশাবাদীআকাশে যে মেঘ দেখেছেন, সে মেঘ কেটে যাবে, আমার দেশবাসীর ওপর দেশপ্রেমের উপর অগাধ বিশ্বাস আছে, অনেক ভরসা আছে। শিগগিরই আমরা এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি পাব। আমাদের কার্যকর্তাদের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তা শিগগিরই দূর হয়ে যাবে এবং একতা ফিরে আসবে ঠিক এই রকম পরিস্থিতি ১৯২২ সালে কংগ্রেসে দেখা গিয়েছিল আর এরপরে দেশবন্ধু মতিলাল নেহেরু স্বরাজ পার্টি গঠন করেছিলেন আমার প্রার্থনা এই যে আমার পূজ্য গুরু মতিলাল এবং ভারতের অন্য মহান আত্মারা আমাদের এই সংকট থেকে যেন উদ্ধার করেন ! এই আমার প্রার্থনা আর গান্ধী মহাত্মা, যিনি আমাদের একান্ত স্বরাষ্ট্রের পথ প্রদর্শক, তাঁর কাছে প্রার্থনা তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে যান আমরা যেন কংগ্রেসের বর্তমান খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি--
বন্দে মাতরম !
(নেতাজীর ভাষণ ছিল হিন্দি ভাষায় তার কিছু অংশ বাংলায় অনুবাদ করে পরিবেশন করা হল)
জবলপুর ১৯৩৯ সে কংগ্রেসের ৫২ তম অধিবেশনে সফল জয়ের খুশিতে জবলপুর সংস্কারধানীতে নেতাজীকে ৫২টি হাতি টানা রথে চড়িয়ে ঘোরানো হয়ে ছিল এই দৃশ্য দেখতে দূর দূর শহর গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক পৌঁছেছিল যদিও অনেক বেশি জ্বরের জন্য সে দিন নেতাজী শিবির জৌলুসে ভাগ নিতে পারেননি শিবিরে ডাক্তার বি আর সেন ডাক্তার এম ডিসিলভা তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন সে দিন তাঁর অধ্যক্ষতার জৌলুসে তাঁর ফটো রাখা ছিল নেতাজির জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি ছিল যে ওই ফটো দেখার জন্যই অসংখ্য লোক সেখানে পৌঁছে ছিলেন জবলপুরের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তাঁর স্মরণ গাঁথা আজও চির উজ্জ্বল হয়ে আছে  
জবলপুর ২৯ শে জানুয়ারি ১৯৩৯ ত্রিপুরী অধিবেশন সম্পন্ন হয়েছিল ত্রিপুরী অধিবেশনের সময়কার অন্যান্য জনপ্রতিনিধির সঙ্গে রয়েছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস 
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের মনে দেশের স্বাধীনতার জন্য ছিল অদম্য আকাঙ্ক্ষা তৎকালীন পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর যে কতটা মনোব্যথা ছিল, আমরা তা ২৯ শে জানুয়ারি ১৯৩৯ এর জবলপুর ত্রিপুরী অধিবেশনের সময় ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পারি 
নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যুর উপর অনেক রহস্য রয়ে গেছে কিন্তু এটা একটা ঐতিহাসিক সত্য যে জবলপুরে নেতাজীর স্বাধীন সত্তার প্রভাব আজও লক্ষ্য করা যায়। কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে ঐতিহাসিক জয়লাভ করার পর তিনি অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হয়েই বলেছিলেন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন করার এটাই ঠিক সময় তিনি ক্রান্তিকারী সমর্থকদের মধ্যে নতুন উৎসাহ বর্ধন করেছিলেন। নেতাজী ১৯৪৫ সালেই দেশকে স্বাধীন করে নেওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু দলীয় সমর্থনের অভাবে বাস্তবে তা আর সম্ভবপর হয়নি


No comments