Header Ads

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতীয় সভ্যতার একটি 'ভাব' যা উপলব্ধির মাধ্যমেই তাঁর মনোজগতের সন্ধান করা যেতে পারে



সুভাষ অর্থাৎ যে ভালো কথা বলতে পারে। ১৮৯৭ সাল, দেশ তখন স্বামীজি ময় কারণ স্বামী বিবেকানন্দ তখন পাশ্চাত্য জয় করে ভারতবর্ষে ফিরেছেন প্রভাবতী বসুর মাতৃ গর্ভে বেড়ে উঠছে ছোট্ট সুভাষ ২৩ শে জানুয়ারি, ১৮৯৭ সালে দুপুর ১২টা বেজে ১৫মিনিটে জন্ম নিলেন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বাবা জানকিনাথ বসু মাতা প্রভাবতী বসু সাহচর্যে বেড়ে উঠলেন সুভাষ মায়ের দৃঢ়চেতা মনোভাব পিতার শাসন সুভাষের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পরমহংসদেবের প্রভাব ছিলএছাড়াও মায়ের কাছেই বেদউপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত ইত্যাদি শুনেছিলেন সুভাষ ছোটবেলা থেকেই যোগ অভ্যাস এর প্রতি সুভাষচন্দ্রের বেশ আলাদা একটি আকর্ষণ ছিল এরপরে সুভাষ ভর্তি হন প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে এবং তারপরে কটকের রভিনশো কলেজিয়েট স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন ১৯০২ সালে ভর্তি হন প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে। এই স্কুলে পড়ার সময় তিনি দেখেছিলেন ভারতীয় ইংরেজদের মধ্যে এক বিরাট ফারাক সৃষ্টি করছে সেই স্কুল গুলি ইংরেজরা বিভিন্ন দিকে এই সুযোগ সুবিধা পেত কিন্তু ভারতীয় ছেলেরা সেই সুযোগ সুবিধা গুলি পেত না এবং মাতৃভাষা পড়ানো হতো না সেই সমস্ত স্কুলগুলিতে। কেবল ইংরেজ ইতিহাসের ওপর জোর দেওয়া হতো এবং ভারতবর্ষের ইতিহাস সেই অর্থে পড়ানো হতো না এই সময় থেকেই সুভাষচন্দ্রের মনে দেশপ্রেমের বীজ পড়তে থাকে। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখছেন যে এই স্কুলের অনেক কিছুই তাঁর পছন্দ ছিল না কিন্তু এই স্কুলে যে নিয়মানুবর্তিতা শৃঙ্খলা শেখানো হতো তাঁর বেশ ভালো লাগতো এবং এগুলি যে চরিত্র গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সে বিষয়ে আমরা প্রত্যেকেই অবগত এই সময় থেকেই সুভাষচন্দ্রের কোন ভারতীয় স্কুলে পড়ার প্রবল ইচ্ছা জেগেছিল। ১৯০৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুল কে তিনি বিদায় জানালেন এবং ভর্তি হলেন রাভেনশো কলেজিয়েট স্কুলে এই সময় থেকেই তিনি এই স্কুলে দেশীয় পোশাক পরে যেতেন এবং স্বদেশী বন্ধুদের পাশে পেয়ে যথেষ্ট খুশি হয়েছিলেন এমন সময় সুভাষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস এর সঙ্গে। বেণীমাধব দাস  সুভাষ এর মধ্যে  অনেক নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করে দিতে পেরেছিলেন এবং প্রকৃতি প্রেমের উপাসনাও যে কতটা প্রয়োজনীয় একজন মানুষের জীবনে তাও তিনি সুভাষের চরিত্রের মধ্যে দিয়েছিলেন। এরপর এই প্রকৃতির উপাসনা করলেন সুভাষনদীর পাশে পাহাড়ের উপরে কিংবা বিস্তীর্ণ মাঠে তিনি শুরু করলেন প্রকৃতি উপাসনা


সেই সময় ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির দিন এক দিন টানা উপোস করে থাকলেন তিনি বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেই সময় বালগঙ্গাধর তিলক,শ্রী অরবিন্দ ঘোষ তাদের বিপ্লবী সত্তার মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলেছে এবং স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করছে ঠিক এমন সময়ই মনোজগতের এক ঝঞ্ঝার সময় আসে সুভাষের মধ্যে তিনি সত্যসন্ধানী হয়ে ওঠেন এবং তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের চিন্তা করতে থাকেন নিজের মনের মধ্যে পরবর্তীকালে তিনি স্মৃতিচারণা করছেন কয়েকটা ক্ষেত্রে আমার মনোজগতে বেশ একটা অস্বাভাবিকতা ছিল, এখানে উল্লেখ্য সুভাষচন্দ্রের মধ্যে অসাধারণ সত্তাটি  ছিল কোন সাধারণ পার্থিব পথ পেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটা বিরাট ঠেলা যেন সেখান থেকেই আসত তিনি সেই সময় একটি আদর্শ এবং একটি গুরুর সন্ধান করছিলেন যিনি তাঁকে সঠিকভাবে পথ দেখাতে পারেন বন্ধু হেমন্ত সরকার কে নিয়ে ১৪-১৫ বছর বয়সী সুভাষ হরিদ্দার, বৃন্দাবন, কাশী ইত্যাদি জায়গায় গুরুর সন্ধান করতে লাগলেন অবশেষে এসে পড়লেন বেনারস রামকৃষ্ণ মিশনে সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজ তিনি সুভাষচন্দ্রের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং সুভাষচন্দ্র কে বলেন বাড়িতে ফিরে যেতে কারণ এই পথ তাঁর নয়। ভবিষ্যতে আরও বড় পথ তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে, তাঁকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে সুভাষচন্দ্র বাড়ি ফিরে আসেন ঠিকই কিন্তু তাঁর মনের সেই সত্যসন্ধানী চিন্তন প্রণালি কখনোই কিন্তু থামে না এমনি সময় দৈবক্রমে পাশের বাড়ির এক আত্মিয়ের বাড়িতে তিনি খুঁজে পান স্বামী বিবেকানন্দের বইগুলি। সুভাষচন্দ্র লিখছেন তখন আমি সবে ১৫, আমার জীবনে বিবেকানন্দের প্রবেশ সেই বই পড়ে তাঁর জীবনে যেন এক বিপ্লব কাজ করে গেল তিনি কয়েক পাতা উলটেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই তো এই জিনিসটাই তিনি চাইছিলেন, তিনি কয়েকটি বই নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে বইগুলি পড়তে থাকলেন স্বামীজির বই গুলির প্রতি হৃদয়-মন আচ্ছন্ন হয়ে যেতে লাগল তাঁরতিনি যতই  বিবেকানন্দকে পড়েছিলেন ততই গভীর ভাবে তাঁর প্রতি ডুবে গিয়েছিলেন তিনি বুঝেছিলেন মানব জাতির সেবা এবং আর তাহার কল্যাণ এই ছিল স্বামীজীর জীবনের আদর্শ বিবেকানন্দের কথা মত তিনিও ভাবতেন মাতৃভূমি ছিল তাঁর আরাধ্য দেবী স্বামী বিবেকাননন্দের লেখা পড়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন "আত্মানো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় " অর্থাৎ নিজের মুক্তির জন্য এবং জগতের সকল মানুষের সেবার জন্য" জীবন উৎসর্গ করতে হবে, এই হল জীবনের উদ্দেশ্য

কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দরিদ্রনারায়ণের সেবায়, রুগ্নের শুশ্রূষায় এবং দুঃস্থের দুঃখ মোচনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতেন

প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সুভাষ  কুড়ি টাকা বৃত্তি পেলেন কিন্তু এই বৃত্তির টাকা তিনি নিজে খরচ না করে দীন দুঃখীর সেবায় দান করলেন প্রবেশিকা পরীক্ষার পর নেতাজী তাঁর মাকে একটি চিঠি লিখেন সেই চিঠির শেষের অংশটিতে তিনি লিখেন-

"আমি যদি না পড়িয়া স্থান পাই তবে যাহারা লেখাপড়াকে উপাস্য দেবতা মনে করিয়া তজ্জন্য প্রাণপাত করে তাহাদের কি অবস্থা হয়? তবে প্রথম হই আর লাষ্ট হই আমি স্থিররূপে বুঝিয়াছি লেখাপড়া ছাত্রের উদ্দেশ্য নহে- বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাপ্রাস (ডিগ্রী) পাইলে ছাত্ররা আপনাকে কৃতার্থ মনে করে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাপ্রাস (ডিগ্রী) পাইলে যদি কেহ প্রকৃত জ্ঞান না লাভ করিতে পারে- তবে সে শিক্ষাকে আমি ঘৃণা করি তাহা অপেক্ষা মূর্খ থাকা কি ভাল নয়? চরিত্র গঠনই ছাত্রের প্রধান কর্ত্তব্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা চরিত্র গঠনকে সাহায্য করে-আর কার কিরূপ উন্নত চরিত্র তাহা কার্য্যেই বুঝিতে পারা যায় কার্য্যই জ্ঞানের পরিচায়ক বই পড়া বিদ্যাকে আমি সর্বান্তকরণে ঘৃণা করি আমি চাই চরিত্র-জ্ঞান-কার্য এই চরিত্রের ভিতরে সবই যায়- ভগবদ্ভক্তি, স্বদেশপ্রেম, ভগবানের জন্য তীব্র ব্যাকুলতা সবই যায় বই পড়া বিদ্যা তো তুচ্ছ সামান্য জিনিষ কিন্তু হায় কত লোকে তাহা লইয়া কত অহংকার করে" মানব সেবার মধ্যেই যে ঈশ্বর সেবা হয় তা তিনি বুঝেছিলেন এবং জীবনকে সেই পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তাঁর বিশ্বাস ছিল ভারতবর্ষ হল ঈশ্বরের প্রিয়ভূমি মা'কে লিখেছিলেন - ভারতবর্ষ ভগবানের বড় আদরের স্থানএই মহাদেশে লোকশিক্ষার নিমিত্ত ভগবান যুগে যুগে অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করিয়া পাপক্লিষ্টা ধরণীকে পবিত্র করিয়াছেন এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়ে ধর্মের সত্যের বীজ রোপণ করিয়া গিয়াছেন"

দর্শনের ছাত্র হওয়ার জন্য তিনি হেগেল, কান্ট, বারগঁস, হার্টম্যান ইত্যাদির দর্শন পড়েছিলেন যদিও হেগেলিয়ান দর্শনের প্রতি তিনি একটু বেশি বিশ্বাসী ছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে তার রাজনৈতিক চিন্তায় দেখতে পাওয়া যায় তাঁর চিন্তায় প্রথম দিকে তিনি শঙ্করের মায়াবাদে বিশ্বাসী হলেও পরবর্তী কালে সমগ্র জগৎ যে মায়াবৎ সেটি তাঁর কাছে প্রতীয়মান হয়নি অরবিন্দের প্রভাব এক্ষেত্রে লক্ষণীয় কারণ অরবিন্দের ভিত্তি ছিল- আত্মা বস্তুর মিলন, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মিলন এবং অবশ্যই যোগসাধনা যা মানুষকে পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের মাধ্যমে সত্যের দিকে পথ দেখায় সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪০ সালে পরবর্তী কালে জেলে থাকাকালীন 'আমার নিজস্ব ঘোষণাপত্র' চিঠিতে বর্ণনা করেছিলেন 'পরম' (Absolute) কে কিভাবে ভারতীয় দর্শনে (বেদান্ত ইত্যাদি) এবং পাশ্চাত্ত্য দর্শনে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে

সুভাষ চন্দ্র বসুর মনোজগতের আরেকটি দিক হল তিনি তরুন বয়স থেকেই বিশ্ব বিপ্লবের ইতিহাস পড়েছিলেন ব্রিটিশের অত্যাচারে দেশের করুণ অবস্থা দেখে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতেন এক্ষেত্রে  ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি হয়ে উঠতে চাইতেন তাই তো তিনি ১৮ বছর বয়সী বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারকে লিখছেন - "আমি এটা বেশ বুঝিতেছি দিন দিন যে আমার জীবনের একটা definite mission আছে তাঁরই জন্য আমার শরীর ধারন" এবং তিনি এটাও লিখছেন "I must be the prophet of the future.I must discover the laws of the progress-the tendency of both the civilizations and there from to settle the future goal and progress of mankind. The philosophy of life will alone help me in this.This ideal must be realised through a nation- being with India is not this a grand idea?"

এর পরবর্তী সময়ে সুভাষচন্দ্র স্কটিশ চার্চ এবং পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ফিলোসফিতে অনার্স করেন ১৯১৯ সালে পিতার নির্দেশে তিনি লন্ডনে আই সি এস পরীক্ষার জন্য যান সামান্য মাসের প্রস্তুতিতে তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের তিনি সেবা করতে রাজি ছিলেন না, তাই বাবার ইচ্ছা পূরণ করা সত্ত্বেও তিনি চাকরি পদত্যাগ করে ভারতবর্ষে ফিরে আসেন পরবর্তীকালে তিনি স্বাধীনতার মূল যুদ্ধক্ষেত্রে আবিষ্ট হন এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর নেতৃত্বে তিনি স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেন সেই সময় দিলীপ কুমার রায়ের সঙ্গে ততদিনে তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছে এবং দুজনে খুব ভালো বন্ধু  হয়ে উঠেছেন দিনে দিনে সেই বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণায় দিলীপ রায় লিখছেন-

"সুভাষই প্রথম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো দেশভক্তির জীবন্ত বিগ্রহ হয়ে, দেশাত্মবোধের প্রাণোন্মাদী প্রতীক হয়ে তাঁর ব্যক্তি রুপের আশ্চর্য চুম্বকে আকৃষ্ট হয়ে আমি যেভাবে তাঁর আদর্শে আমার মনকে রাঙিয়ে তুলবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছিলাম, তাঁর প্রতি কথা, হাসি, ভঙ্গি যেভাবে দিনের পর দিন আমার মনকে উদ্দীপ্ত প্রাণকে আবিষ্ট করে তুলতো তাঁর বর্ণনা করব কোন ভাষা দিয়ে? সুভাষের রুপে, কণ্ঠস্বরের টানে আমি উধাও হতে চেয়েছিলাম তাঁর নির্দিষ্ট পথে তারি নায়কতা মেনে- সর্বান্তঃকরণে

বন্ধু নিবারণের বর্ণনায় সুভাষ হয়ে উঠেছিল দিলীপ রায়ের কছে এক আদর্শতরুণের পথিক তিনি বললেন-"নিবারণের কাছে শুনেছিলাম সুভাষের বিবেকানন্দ প্রীতি, গঙ্গাজলে দাঁড়িয়ে সংস্কৃত স্তোত্রপাঠ, দেশভক্তি আরো কত কী! যে-সে মনুষ্য নয় -বলল আমার বিনত বালক মন"

দিলীপ রায়ের গান শুনে কলেজে সুভাষ চন্দ্র খুব আনন্দিত হয়েছিলেন সেই নিয়ে দিলীপ কুমার রায় বলছেন - সুভাষের কাছে চিহ্নিত হলাম- তবু হব না আত্মহারা? মনে পড়ত বৈষ্ণব পদাবলীর গান: "দুঁহুঁ দোঁহা দর্শনে উপজিল প্রেম- দারিদ্র্য বেঢ়ল যেন ঘটভরা হেম!" অর্থাৎ শুভদৃষ্টিতে প্রেম- সে কেমন? যেমন দরিদ্রের হাতে এক ঘড়া মোহর!"

তিনি আরও বলেন - "এমন কিছু মানুষ আছে যারা আঁতুড় ঘরে জন্মায়ই সোনার টোপর পরে এরা জন্মালে যে শাঁখ বাজে সে মামুলি আনন্দের শাঁখ নয়- বিস্ময়ের তুর্য ঘোষণা করে ক্ষণজন্মা এলো- বরণ করে ঘরে তোলো- যাদের দেখলেই মনে পড়ে টেনিসনের ঘোষণা: " My strength is as the strength of ten because my heart is pure".

এই সময় ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সহ আরো ১৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র এবং গোপন কাগজপত্র রাখার সন্দেহে এবং এরমধ্যে সুভাষচন্দ্র বসুও এই দলে ছিলেন এবং তাঁকেও কিন্তু জেলে স্থানান্তরিত করা হয় এর পরবর্তী সময়ে চিত্তরঞ্জন দাশ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯২৫ সালে তাঁর অকাল প্রয়াণ ঘটেসুভাষচন্দ্র তখন মান্দালয় জেলে আছেন মান্দালয় জেলে থাকাকালীন তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন দেশবন্ধুর প্রয়াণে এবং দেশবন্ধুকে নিয়ে তিনি একটি বিশাল প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন সেই প্রবন্ধ রচনায় আমরা দেখতে পাই তিনি দেশবন্ধু শক্তি-সাধনা আধ্যাত্মিকতা দর্শনের ব্যাখ্যা নিয়ে তিনি তাঁর রচনাটি করেছেন এবং দেশবন্ধুর যে অসাধারণ এক মন ছিল সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন

মান্দালয় জেলে থাকাকলীন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন "এখানে না এলে বোধহয় বুঝতুম না সোনার বাংলা কে কত ভালবাসি আমার সময়ে সময়ে মনে হয়,বোধহয় রবি বাবু কারারুদ্ধ অবস্থা কল্পনা করেই লিখেছিলেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

দিলীপ কে বলেছিলেন সুভাষ-"গানে গানে ভরিয়ে দাও দেশ জীবনের যে আনন্দ আমরা ভুলে পিছনে ফেলে এসেছি,তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনো।" তিনি আরও বলেছিলেন-"যার লেখায় সংগীতের কোনো মূর্ছনা নেই,যার হৃদয় সংগীতে জেগে ওঠে না,তার পক্ষে জীবনে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়"

মালদা জেলার গম্ভীরা নৃত্য সংগীত সুভাষকে আকৃষ্ট করেছিল দিলীপ রায় কে অনুরোধ করেছিলেন সুভাষ যাতে দিলীপ রায় নিজে থেকে সেখানে গিয়ে উৎসাহ দেন মালদার মানুষকে শিল্পের এই উন্নতির প্রতি সুভাষচন্দ্র বসু যখন জেলবন্দী অবস্থায় থাকতেন তখন জেলের দৈনন্দিন জীবনের কথা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে উঠে আসত মেজোবৌদিদি বিভাবতী দেবীকে লেখা চিঠিগুলিতে বিভাবতীর যে খুবই পছন্দ ছিল সেইসব কাহিনী, তা জেনে সুভাষও খুশি হতেন সংস্কৃত শাস্ত্রবচন "রসো বৈ সঃ" মনে করে বলতেন জেলজীবন তাহলে তাঁর সব রসবোধ নিঃশেষ করে দেয়নি, আর তার অর্থ যে তাঁর জীবনের প্রধান রসদ যে 'আনন্দ' ,তাও তিনি হারাননি সুভাষ বিস্তারিত লিখতেন মেজবৌদিদি কে কেমন করে দিন কাটছে, কী করে জেলের পায়রা,মুরগি,টিয়া কিংবা বিড়ালগুলি যারা চতুর্দিকে অনাচার করে অনেক সময় পায়রাদের ধরে খেয়ে ফেলে

জীবনের প্রাত্যহিক উপকরণগুলি সেখানে অনেক সময়ই মিলতনা সেই নিয়ে রসিকতা করে সুভাষচন্দ্র লিখছেন- "জামাকাপড়ের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন আপনারা কি জানেন না যে আমরা সম্রাটের অতিথি? আমাদের কি কোনও অভাব থাকতে পারে?" বিভাবতীর প্রশ্নের উত্তরে লেখেন সুভাষ খাবার বিষয়ে লেখেন,"আমাদের হোটেলে সবই পাওয়া যায়সেদিন ম্যানেজারবাবু আমাদের গরম গরম জিলিপী খাওয়ালেন-আর আমরাও দু হাত তুলে আশীর্বাদ করলাম তিনি যেন চিরকালই জেলেই থাকেন তার পূর্বে রসগোল্লা খাইয়েছিলেন, যদিও গোল্লা রসে ভাসছিল তবুও ভিতরে রস ছিলনা,এবং ছুঁড়ে মারলে রগ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল কিন্তু আমরা সেই লৌহবৎ রসগোল্লা নিশ্চিতমনে গলাধঃকরণ করে কৃতজ্ঞ চিত্তে ম্যানেজারবাবুর দীর্ঘায়ু কামনা করেছিলাম গন্ধ গানের অভাব সময়ে সময়ে বোধ করি কিন্তু উপায় কী?"

মান্দালয় জেলে থাকার সময়ে এক রাজনৈতিক সহকর্মীর কাছে তিনি জানালেন তাঁর কাছে সেবার ব্রত- অর্থ "নিজের যা কিছু সব দিয়ে দেওয়া, প্রতিদানে কিছুই না চাওয়া।" আমার কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছেন কি উত্তর দিব? তিনি লিখলেন রবি বাবুর একটি কবিতা আমার খুব ভালো লাগে কবির ভাষায় প্রশ্নের উত্তর দিলে কি ধৃষ্টতা হইবে?

"কবে প্রাণ খুলি বলিতে পারিব
'পেয়েছি আমার শেষ!'
তোমরা সকলে এস মোর পিছে
গুরু তোমাদের সবারে ডাকিছে
আমারে জীবনে লভিয়া জীবন
জাগো রে সকল দেশ!"

নিজেকে শক্তি দেওয়ার জন্য সেই রবীন্দ্রনাথের কথাই ধার করে প্রার্থনা করলেন, "তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শক্তি"

মান্দালয় জেলে থাকার সময় বার্মার গভর্নর কে বলেছিলেন তিনি জেলে সঙ্গীতের বিভিন্ন যন্ত্র বাজানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু মান্দালয় কারাগৃহে সুভাষচন্দ্রের অবস্থা যখন খুব কষ্টকর হয়ে উঠত তখন তার মন উঠত বিদ্রোহ করে দিলীপকুমারকে তিনি বলেছিলেনভাই জেলে যখন লোহার দরজা বন্ধ করে তখন মনে যে কি আকুলি - বিকুলি করে যে কি বলব ? তখন বারবার মনে পড়ে কাজীর ওই গানকারার লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,রক্তজমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদীসুভাষচন্দ্র বলতেনআমরা যখন যুদ্ধে যাবো , সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে নজরুলের দুর্গম গিরি কান্তার মরু গানটি যেন নব প্রাণ এনে দিত সুভাষ চন্দ্রের মনে দিলীপকুমার রায়ের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যেফাসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান' স্তবকটি যখন নজরুল গাইতেন তখন সুভাষের মুখ আবেগে রাঙা হয়ে উঠত ভারতের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তার প্রতিফলন ঘটেছিল এই গানটির মধ্যে

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারকে ১৯৩২ সালে এক চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি এখন বুঝতে আরম্ভ করেছি যে যখন নতুনভাবে আবার কাজ আরম্ভ করব , তখন হয়তো পুরাতন সহকর্মীদের মধ্যে কেহ কেহ আর সঙ্গে আসতে চাইবেন না এবং নূতন সহযাত্রী হয়তো অনেক জুটে যাবে এরকম ক্ষেত্রে মানুষকে সর্বদা বলতে হবে যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে ইতিমধ্যে এটা রাজনৈতিক জীবন বেশ পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তিনি এই সময় ১৯৩৩ সালে তিনি বিদেশে গেছেন তাঁর শরীর সুস্থ করার জন্য কারণ তাঁর গলব্লাডারের স্টোন ধরা পড়েছিল এই সময় তিনি দেখা পেয়েছিলেন বিটল ভাই প্যাটেলের সাথে যিনি বল্লভ ভাই প্যাটেল এর দাদা হন এবং দুজনে মিলে রচনা করেন "Bose-Patel Manifesto"। এই সময় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বিভিন্ন দেশে যান আয়ারল্যান্ডপ্যারাগুয়েজার্মানি ইত্যাদি দেশগুলোতে এবং ভারতবর্ষের স্বাধীনতার প্রতি সেই দেশগুলোর মনোভাব কেমন তা তিনি জানতে চাইতেন এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রত্যক্ষভাবে পরিদর্শন করতেন এবং স্বাধীন ভারতবর্ষের জন্য রূপরেখা তৈরি করছিলেন কিটি কুর্তি নামক এক মহিলা তাঁর স্বামী অ্যালেক্স এর সাথে এই সময় সুভাষচন্দ্রের পরিচয় হয় কুর্তি তাঁর বইতে সুভাষচন্দ্র কে এক যোগী পুরুষ বলে উল্লেখ করছেন এবং দুজনের মধ্যে ভারতীয় দর্শন বিদ্যা এবং আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে অনেক আলোচনা আমরা দেখতে পাচ্ছি তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে উঠে আসছে ১৯৩৬ সালে তাঁর পিতা মারা যান এবং তিনি অত্যন্ত শোকাহত হন এবং দেশে ফিরে আসেন এবং পরবর্তীকালে তিনি রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আবার পা রাখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর কিন্তু এক বেশ সখ্যতার সম্পর্ক আমরা দেখতে পাই ইংল্যান্ডে আই সি এস পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা লেখা এবং তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে সুভাষচন্দ্রের ভেতরে দার্শনিক সততা দেশপ্রেমের মনোভাব জেগে উঠেছিল পরবর্তীকালে নানা পত্রালাপে সুভাষচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ সম্পর্ক উঠে আসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু কে 'দেশনায়ক' আখ্যা দিয়ে 'তাসের দেশ' নৃত্যনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেছিলেন উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন: "স্বদেশের চিত্তে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবার পুণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ করে তোমার নামে 'তাসের দেশ' নাটিকা টি উৎসর্গ করলুম"

১৯৩৯ সালে রবি ঠাকুর সুভাষ চন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন "আজ তুমি যে আলোকে প্রকাশিত তাতে সংশয়ের আকুলতা আর নেই, মধ্যদিনে তোমার পরিচয় সুস্পষ্ট বহু অভিজ্ঞতাকে আত্মসাৎ করেছে তোমার জীবন,কর্তব্যক্ষেত্রে দেখলুম তোমার যে পরিণতি তার থেকে পেয়েছি তোমার প্রবল জীবনীশক্তির প্রমাণ এই শক্তির কঠিন পরীক্ষা হয়েছে কারাদুঃখে, নির্বাসনে, দুঃসাধ্য রোগের আক্রমণে, কিছুতে তোমাকে অভিভূত করে নি,তোমার চিত্তকে করেছে প্রসারিত,তোমার দৃষ্টিকে নিয়ে গেছে দেশের সীমা অতিক্রম করে ইতিহাসের দুর বিস্তৃত ক্ষেত্রে দুঃখকে তুমি করে তুলেছ সুযোগ, বিঘ্নকে করেছ সোপানসে সম্ভব হয়েছে যেহেতু কোনো পরাবতকে তুমি একান্ত সত্য বলে মানো নি তোমার এই চারিত্রশক্তিকেই বাংলাদেশের অন্তরের মধ্যে সঞ্চারিত করে দেবার প্রয়োজন সকলের চেয়ে গুরুতর"

কবিগুরু আরো বলেন - "বাঙালি কবি আমি বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি" বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে তিনি 'দেশনায়ক' নাম দিয়েই একটি প্রবন্ধ রচনা করে প্রকাশ জনসভায় পাঠ করেছিলেনসেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বর্তমান প্রবন্ধটির শেষাংশে তিনি লেখেন:

"বহুকাল পূর্বে একদিন আর একদিন সভায় আমি বাঙালি সমাজের অনাগত অধিনায়কের উদ্দেশ্যে বাণীদূত পাঠিয়েছিলুম। তার বহু বৎসর পরে আজ আর এক অবকাশে বাংলাদেশের অধিনেতাকে প্রতক্ষ্য বরণ করছি দেহে মনে তাঁর সঙ্গে কর্মসহযোগিতা করতে পারব আমার সে সময় গেছে, শক্তি অবসন্ন আজ আমার শেষ কর্তব্য রুপে বাংলাদেশের ইচ্ছাকে কেবল আহ্বান করতে পারিসেই ইচ্ছা তোমার ইচ্ছাকে পূর্ণ শক্তিতে প্রবুদ্ধ করুক কেবল এই কামনা জানাতে পারি তার পরে আশীর্বাদ করে বিদায় নেব এই জেনে,যে ,দেশের দুঃখকে তুমি তোমার আপন দুঃখ করেছ,দেশের সার্থক মুক্তি অগ্রসর হয়ে আসছে তোমার চরম পুরস্কার বহন করে"

১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সুভাষচন্দ্র বসু এবং ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরী কংগ্রেস অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীর পদপ্রার্থী পট্টভি সিতারামায়ইয়া কে হারিয়ে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কিন্তু গান্ধীজীর সাথে মতবিরোধের জন্য তিনি দল ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেন যা ভবিষ্যতে স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল

এর পরবর্তী সময় ১৯৪০ সালে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি এই সময়ে কালীপুজো করেন জেলে থাকাকালীন। এছাড়া আরেকটি জিনিস বেশ উল্লেখযোগ্য তিনি যখন জেলে ছিলেন তখন থেকেই কিন্তু দেশ ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছিলেন যাতে তিনি অক্ষশক্তি কিংবা কোনো নিরপেক্ষ দেশগুলিতে গিয়ে নিজের কার্যকলাপ করতে পারেন এর পরবর্তীকালে ১৯৪১ সালে তিনি দেশ ত্যাগ করেন সুভাষ চন্দ্র বসু দেশত্যাগ করলেন মহম্মদ জিয়াউদ্দীন নাম নিয়ে পেশোয়ারের পথ ধরে আফগানিস্তানের কাবুল হয়ে কীর্তি কীষাণ পার্টি সদস্য ভগতরাম তালোয়ারের সঙ্গ নিয়ে সেই দুর্গম পাহাড় পথে অগ্রসর হলেন,নিজেকে দেশমাতৃকার চরণে সঁপে দিয়ে পথ চলার সময় তিনি মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু তবুও সেই দৃঢ় চেতনা কে সঙ্গী করেই এগিয়ে গেলেন মাঝখানে বেশ কিছুদিন ছিলেন ব্যাবসায়ী উত্তমচাঁদ মালোহোত্রার বাড়িতে এরপরে তিনি অগ্রসর হলেন সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে এবং রাশিয়ায় এসে দেখা করলেন যোসেফ স্টালিন এর সাথে কিন্তু তিনি হতাশ হলেন কারন স্টালিন তাঁকে ব্রিটিশ চর ভেবে সাহায্য এবং রাজনৈতিক সমর্থন দিতে রাজি হননি এখানে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখযোগ্য যে সেই সময় রাশিয়া জার্মানীর মধ্যে  'unaggression pact' চলছিল রাশিয়া সেই সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়নি কিন্তু সম্ভবত রাশিয়া ভেবেছিল জার্মানি তাদের উপর হামলা চালালেও চালাতে পারে এবং সেক্ষেত্রে তাদের মিত্র শক্তির পক্ষে যোগ দিতে হবে তবে রাশিয়া সুভাষচন্দ্র কে একটি পাসপোর্ট ট্রানসিট ভিসা দিয়েছিল জার্মানি যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি জিনিস মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং পূর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাঘাযতীন রাসবিহারী বসুর সময়ে ইন্দো জার্মান সম্পর্কের স্থাপন হয় এবং এই অক্ষ- শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের একটি মাত্র লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা কারণ  এই শক্তি ছিল ব্রিটিশের বিপক্ষে, এই সঙ্গে আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের জাপান, ইতালি, জার্মানি  সহ বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুভাষচন্দ্র বসু রাশিয়া হয়ে জার্মানি আসেন এবং যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে ‘Free India Legion’ তৈরি করেন তাঁর সৈন্যদলে বেশ কয়েক হাজার সেনা যোগ দেন এবং তিনি সমগ্র দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে সেনাদের খাদ্য, ট্রেনিং, যুদ্ধ পরিকল্পনা ইত্যাদি খেয়াল রাখেন তবে এই জার্মান পর্ব টি বেশ কিছু সময়ে সুভাষ চন্দ্রকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এর মুখ্য কারণ হিটলার ভারতীয় স্বাধীনতা বিষয়ে সেরকম কোন সহমর্মিতা পোষণ করতেন না এবং ভারতের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁর সেই অর্থে চিন্তা ছিল না তবুও তিনি বেশ কিছু সময় পরে ১৯৪২ সালে সুভাষ চন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সুভাষ চন্দ্রের সাহস বীরত্ব দেখে অবাক হন, ইতিমধ্যে জাপান অন্যদিকে বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছে সুভাষ চন্দ্র বসু হিটলার কে বারণ করেছিলেন সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ না করতে কারণ তাতে জার্মানির পরাজয় ঘটতে পারে, এছাড়াও সুভাষ চন্দ্র বসুর মূল কারণ ছিল, তিনি ভেবেছিলেন তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাশিয়ার পথ ধরে আফগানিস্তান হয়ে ভারতবর্ষে পা রাখবেন কিন্তু হঠাৎ জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করায় এবং রাশিয়া মিত্রপক্ষে যোগ দেওয়ায় সমস্ত পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে এরপরে জাপান থেকে রাসবিহারী বসু জাপান উচ্চপদস্থ কর্মী মারফত সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং হিটলার সুভাষ চন্দ্র বসুকে জার্মান সাবমেরিন করে জাপানে যাওয়ার পরামর্শ দেন এরপরেই সুভাষ চন্দ্রের জাপান যাওয়ার পথ স্থির হয় 

যে সাবমেরিনে নেতাজী পাড়ি দিয়েছিলেন সেটি ছিল Unterseeboot 180 (U-180) জার্মানি উত্তর কোনায় ল্যাবি শহরের নগরীর মাথায়  বাল্টিক খাঁড়ির মুখে বরফ-জলের নীচ দিয়ে ছিল তার যাত্রাপথ U-180 ছিল একটি লং-রেঞ্জ সাবমেরিন

১৯৪৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি, সাবমেরিনের চূড়ান্ত মালবাহী কার্গোটি একটি মোটরবোটে করে সৈকতে পৌঁছেছে সাথে দুইজন ভারতীয় যাত্রী, সুভাষ চন্দ্র বসু এবং আবিদ হাসান সাফরানি (বসুর নিকটতম সহযোগী জয় হিন্দ শ্লোগানের আবিষ্কর্তা) ইউ-বোট ক্রুকে জানানো হয়েছিল যে তাদের যাত্রীরা ইঞ্জিনিয়ার নরওয়ের দিকে যাবে ফলস্বরূপ, বসু এবং সাফরানি যতদিন পর্যন্ত জার্মানির জলসীমায় ছিলেন ততদিন সূর্যের আলোর দেখা পেতেন না।

পরে নরওয়েজিয়ান উপকূল বরাবর এটিকে উত্তোলন করে তারপর এটি পশ্চিমাঞ্চলে মুখ ঘুরিয়ে পরেও দ্বীপপুঞ্জের দিকে কোর্স সেট করে সমুদ্র বেশ উত্তাল ছিল এবং সাথে দুই ভারতীয় যাত্রীও সমুদ্রজনিত অসুস্থতা ভুগতে শুরু করেন তবে, সমুদ্রের নীচে এই বন্দীদশা সত্বেও এটি বসুর জন্য ছিল একটি উল্লাসকর মুহুর্ত

তিনি এখানে বসেও দিল্লীর মুক্তির স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করেন যখন তাঁর সহযোগী ক্রুদের নিয়ে মজা করছিলেন, বসু তখন বেশিরভাগ সময় জাপানীদের সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগ করার ব্যাপারে পড়াশুনা করেছিলেনThe Men from Imphal” বইয়ে তাঁর স্মৃতিকথায়, সাফরানি লিখেছেন, আমি যত মানুষ চিনতাম, তিনি তাদের চেয়ে বেশি কাজ করতেন তিনি রাতে দুটোর আগে খুব কম সময়ই ঘুমোতে যেতেন এবং আমার মনে পড়ে না, শেষ কবে তাকে সূর্যোদয়ের সময় বিছানাতে দেখেছিপূর্ব এশিয়ায় সংগ্রামের জন্য তিনি অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তাদের সবাইকে কাজ করার জন্য এবং অভ্যাসবশতই প্রত্যেকেই বিস্তারিতভাবে বলতেন

২১শে এপ্রিল, ১৯৪৩ সালে মাদাগাস্কারের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের চারশো মাইল দূরে ইউ -180 একটি জাপানি সাবমেরিনের সাথে মিলিত হয় এবং সংকেত বিনিময় করে সুভাষ চন্দ্র বসু একটি ইউ-বোটে চড়ে বসেন অন্ধকার কালো আকাশের নীচে জার্মান ইউ-বোটকে পাহাড়সম ঘূর্ণায়মান ঢেউ যখন আঘাত করছিল, ক্যাপ্টেন নেতাজীকে জাপানের সাবমেরিনে যেতে জাহাজটি ত্যাগ না করার জন্য জোরালো নির্দেশ দেন নেতাজী তখন উত্তর দিয়েছিলেনআমি ফিরে যাওয়ার জন্য এতদূর আসিনি

ঘূর্ণায়মান ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে তিনি অনেক বাধা পেরিয়ে জাপানি সাবমেরিনে পদার্পণ করেন নেতাজী সাঁতার জানতেন না, কোনোদিন তাই দুজন জাপানী প্রকৌশলী তারপর তাদের জায়গা থেকে U-180 কে পঞ্চাশটি গোল্ড বার সহ ডেকের উপরে নিয়ে গেলেন তারপর দুটো সাবমেরিন ঢেউয়ের নীচে ডুবিয়ে দেওয়া হয় সুভাষ বসু তখন জাপানের ইম্পেরিয়াল নৌবাহিনীর অতিথি হয়ে উঠেছিলেন       

আই-২৯ জাপানি ক্যাপ্টেন তেরাওকা ভারতীয় অতিথিদের জন্য নিজের কেবিন ছেড়ে দিয়েছিলেন এটা নিয়ে সাফরানি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন,

এটি ঘরেফেরা বা অনুরূপ কিছু- মত

যাত্রা শুরু করার আগে জাপানী ক্রুরা মালয়েশীয়ার পেনাং থেকে কিছু ভারতীয় মশলা কিনে নেন তারা বসু এবং হাসানকে তাদের ক্রসিং এর উতাদের রাজার জন্মদিন উপলক্ষে গরম গরম সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেছিল

এরপরে নেতাজী সুমাত্রার সাবাং থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে শেষ পর্যন্ত টোকিওতে পৌঁছান তারপর সেখানে মহা বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সাথে সাক্ষাত করেন এরপর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা হলে এক বিরাট ভাষণ দেন রাসবিহারী বসু যিনি সেই সময়ে “Indian Independence League” এর প্রতিষ্ঠাতা আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম প্রধান ছিলেন (অন্যজন প্রধান প্রতিষ্ঠাতার নাম ক্যাপ্টেন মোহন সিং) রাসবিহারী বসু সুভাষ চন্দ্র বসুর হাতে সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন নেতাজী সর্বাধিনায়ক হন

নেতাজী বললেন "ভারত ডাকছেরক্তের ডাক এসেছে ওঠো,জাগো,আমাদের দেরী করার মত সময় নেই আর অস্ত্র হাতে নাও শত্রুপক্ষের অঙ্কিত রাস্তা দিয়ে আমরা যাবো আর যদি ঈশ্বর চান তাহলে আমরা শহীদের ন্যায় মৃত্যুবরণ করব আমাদের যে বাহিনী দিল্লি যাবে,চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে ওই পথকে চুম্বন করবো দিল্লীর পথই হল স্বাধীনতার পথ চলো দিল্লি চলো"

নেতাজী এরপরে  ২১ শে অক্টোবর ১৯৪৩ সালে গড়ে তুললেন আজাদ হিন্দ সরকার বা Provisional government of Free India. নেতাজী হলেন প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, যুদ্ধমন্ত্রী এবং রাসবিহারী বসু হলেন প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণা হল ব্রিটেন আমেরিকার বিরুদ্ধে এরপরেই শুরু হল আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই, তারা এগিয়ে চলল ইম্ফল, কোহিমা, আরাকাণ, মাউন্ট পোপো, নাগাল্যান্ড, মৈরাং- এর দিকে ১৯৪৩ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর  আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথমবার স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম 'শহীদ' 'স্বরাজ' রেখেছিলেন ১৯ শে মার্চ ১৯৪৪,অন্ধকারে পাহাড় থেকে নামলেন সেনারাএমন সময় ঘটল এক মর্মস্পর্শী দৃশ্যসেনাদের কেউ হাউহাউ করে কাঁদছে, কেউ মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে চুমু খাচ্ছে দেশের মাটিকেতাদের মধ্যে একজন ক্লান্ত সৈনকে যখন নদী থেকে জল এনে দেওয়া হলে তিনি পাগলের মত সেই জলটা খেলেন এবং মাখলেন। এসব দৃশ্য দেখে জাপানি অফিসাররাও আবেগাপ্লুত হয়ে গেল চতুর্দিকে জয়হিন্দ ধ্বনি উঠল। এই সেই মাটি যেখানে তাদের জন্ম শৈশব এটা শুধু দেশের মাটি জল নয়আবেগও। ৮ ই এপ্রিল কোহিমার পতন হল আজাদহিন্দ বাহিনীর হাতে নেতাজীর নির্দেশে বাহিনী এগিয়ে চলেছে, প্রথমে সিঙ্গাপুর তারপর রেঙ্গুন তাই ইম্ফলকে এবার ঘিরতে মৈরাঙ জয়ের প্রস্তুতি শুরু হল কঠিন লড়াই এবার আজাদ হিন্দ ফৌজ নির্ভয়ে লড়াই শুরু করল,দিনরাত্রি লড়াই, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই ব্রিটিশ গতিরোধ করতে পারলোনা তাদের দৃঢ় মনোবলের সামনে নেতাজী তাদের সেই মন্ত্রেই দীক্ষা দিয়েছিলেনবীরসেনাদের রক্ত ঝরল দেশের মাটিতে অবশেষে ব্রিটিশ সেনা পিছু হটল,পালাতে বাধ্য হল তারা আজাদহিন্দ বাহিনী জয়লাভ করল  ১৪ এপ্রিল। ব্রিটিশকে হঠিয়ে মৈরাং- ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করেন শওকত আলি মালিক

আমাদের মনে রাখতে হবে নেতাজীর মতো সাহসী মানুষ সেই যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতেও নারী বাহিনী তৈরি করেছিলেন এবং নাম দিয়েছিলেন 'ঝাঁসি রানী বাহিনী' নারী বাহিনীও ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে লড়াই করেছিলেন এরপরে তারা নানা জায়গায় সাহসের সাথে যুদ্ধ করল এবং ব্রিটিশ সরকার বুঝতে শুরু করল যে আর ভারতীয় জনগণ সৈন্যদের মনোবল ঠেকিয়ে রাখা যাবে না দেশ এই সময় নেতাজীর কৃতিত্বের কথা বুঝতে শুরু করেছে ১৯৪৪ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের পবিত্র মোহন রায়কে বলেছিলেনশোন, আমি জীবনে কোনদিনই রাজনীতি করিনি যা দেখছো আমার মাতৃসাধনা আমার কাছে গর্ভাধারিণী জননী, জননী -জন্মভূমি, আমার মা কালী একই দেখতে দেখতে এই তিন আমার এক হয়ে যায়"

এরপরে ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে আমেরিকা হিরোশিমা নাগাসাকি তে বোমা ফেলল জাপান আত্মসমর্পণ করল, অন্যদিকে বীর আজাদি সেনাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে নেতাজী এই সময়ে চেয়েছিলেন রাশিয়া যেতে কারণ রাশিয়া তাঁকে সাহায্য করতে পারে ভেবেছিলেন তিনি এবং তিনি তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে সমস্ত পরিকল্পনা সারেন এবং মনে করা হয় বিমান দুর্ঘটনার গল্পটিও নেতাজীর মাথা থেকেই বেরিয়েছিল কারণ আজকে দাঁড়িয়ে গোটা ভারতবর্ষ জানে যে নেতাজী মারা যাননি বিমান দুর্ঘটনাতে , এছাড়া জাপান সরকারও জানিয়েছে ওই সময়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি রেনকোজী মন্দিরে যে চিতাভস্মের কথা বলা হয় সেটি ইচিরো ওকুরা নামক এক সৈনিকের ১৮ আগস্ট সালে নেতাজীর প্রকাশিত শেষ ছবি পাওয়া যায়, তারপর আমরা জানিনা তাঁর কি হয়েছিল

১৯৪৬ সালে নৌ বিদ্রোহ শুরু হলো জনগণ ক্ষেপে উঠল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এবং জাহাজের ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক ছিঁড়ে ফেলে উঠলো ভারতের পতাকা তৎসহ পালিত হলো রশিদ আলি দিবস এবং জনগণের মধ্যে বিক্ষোভের ফলে দুইটি বিশ্ব যুদ্ধের ফলে যে কঙ্কালসার অবস্থা তার ফলে তারা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলপরবর্তী কালে ১৯৫৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর চুক্তিতে স্বাক্ষর করা প্রধানমন্ত্রী Clement Atlee ভারতে আসেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পি.ভি চক্রবর্তীকে বলেন নেতাজী আজাদ হিন্দ ফৌজের কারণেই ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে যায়

ভারত পথিক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রকৃত অর্থেই ভারত আত্মার মূর্ত পথিক সামান্য সংক্ষিপ্ত লেখার মধ্যে দিয়ে সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁর মনের সন্ধান করা অত্যন্ত কঠিন সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতীয় সভ্যতার একটি 'ভাব' যা উপলব্ধির মাধ্যমেই তাঁর মনোজগতের সন্ধান করা যেতে পারে জন্মদিনে এই মহামানবের প্রতি আমার শতকোটি প্রণাম




2 comments:

  1. দাদা নেতাজি কে নিয়ে এতটা যখন লিখেছো আমার দীর্ঘবিশ্বাস যে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট এর পরের কার্যকলাপও তোমার জানা আছে, সেটা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখার অনুরোধ রইলো।

    ReplyDelete