‘বাংলার বাঘ’- এর সেই ঘটনা
স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আমাদের সবার কাছে এক অতি পরিচিত নাম। তাঁর নির্ভীকতা, সাহসী পদক্ষেপ, শিক্ষার প্রতি একান্ত অনুরাগ ও আরও গুণের জন্যে তাঁকে আমরা 'বাংলার বাঘ' বলে ডাকি। আজকের এই গল্পটিতে এই মহান খাঁটি বাঙালির এক বীর্যবান ও সাহসী চরিত্রের পরিচয় পাব।
গরমকালের কোনো একটা দিনে,তিনি তাঁর স্বদেশী পোশাক গায়ে দিয়ে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায় বসে কোনো এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। ট্রেনে হালকা নিদ্রা তাঁর চলে এসেছিল। কিচ্ছুক্ষণ পরে ট্রেন অন্য ষ্টেশনে আসতেই একজন সাহেব সেই কামরায় উঠলেন। তিনি একজন বাঙালিকে প্রথম শ্রেনির কামরায় বসে ট্রেনে চড়তে দেখে ভীষণই রেগে গেলেন। সেই সাহেবের হঠাৎ চোখ পড়লো আশুতোষ মুখার্জীর জুতো বা চটি জোড়ার উপর। কিছু ভাবনা চিন্তা করার আগেই সেই চটি জোড়া চলন্ত ট্রেনের বাইরে তিনি ফেলে দিলেন। আসলে তখন পরাধীনতার যুগে কোনো ভারতীয়কে অনেক সময় মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত না।স্যার আশুতোষ হালকা ঘুমন্ত চোখে এই সবই লক্ষ্য করছিলেন, তিনিও উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। সাহেব তাঁর কোটটি পাশে রেখে পাশে রেখে শুয়ে পড়তেই সেই সুযোগও চলে এল। আশুতোষ মুখার্জী করলেন কি সাহেবের কোটটি ট্রেনের বাইরে ফেলে দিলেন যেমনভাবে সাহেব তাঁর চটি জোড়া বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন। একেই বলে সুযোগ ও সময় বুঝে উপযুক্ত জবাব দেওয়া। তা যাইহোক, ঘুম ভাঙতেই সাহেব যথাস্থানে কোট না দেখতে পেয়ে আশুতোষ মুখার্জীকে জিজ্ঞেস করেন যে তাঁর কোট কোথায়? আশুতোষের যথাযথ ও নির্ভীক উত্তরটি ছিল-"তোমার কোট আমার জুতো আনতে গেছে।" একজন বাঙালি ভদ্রলোক যে তাঁকে এরকম উচিৎ শিক্ষা দিতে পারে সাহেবের পক্ষে তা ভাবা তো দূরের কথা এমনকি কল্পনারও অতীত ছিল।
এই ঘটনাটি বহু বছর আগেকার সেই পরাধীনতার যুগে। কোনো সাহেবকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ঘটনা তখনকার দিনে ভাবাই যেত না। স্যার আশুতোষ মুখার্জী যা করে দেখিয়ে ছিলেন তাঁর অসীম তেজস্বিতা ও সাহসীকতার দরুন উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন অথচ কোনো কু-ভাষা ব্যবহার না করে বা হাতাহাতিতে না জড়িয়ে। আশুতোষ মুখার্জী ওই যুগে ইংরেজ সরকারের কাছে কোনোরকম সাহায্য না চেয়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর কাজ ও ব্যবহারের জন্যে তিনি সবার কাছে ‘বাংলার বাঘ’। আসলে প্রতিবাদের ভাষা কেমন হওয়া উচিৎ তা তিনি অত বছর আগেই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন যা প্রত্যেক ভারতীয়র উচিৎ মেনে চলা। আজও অনেক প্রতিবাদই হয় যা ঠিক গঠনমূলক নয়। আজ অনেক আন্দোলনই হয় যাতে ভাষার সঠিক ব্যবহার থাকে না। তাই, অনেক কিছুই আমাদের 'বাংলার বাঘ'-এর জীবন ও কর্ম থেকে শেখার আছে।
Post a Comment