Header Ads

রাতারাতি আবর্জনার স্তুপ পরিণত হয়ে উঠলো সবুজ পাহাড়ে



রাতারাতি আবর্জনার স্তুপ পরিণত হয়ে উঠলো সবুজ পাহাড়ে। ধাপার মাঠ যে নাম শুনলে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতো শহরবাসীদের। শহরের সমস্ত আবর্জনা ফেলে দেওয়া হতো ধাপার মাঠে। আবর্জনার স্তুপ প্রায় একটি মালভূমির সমান উঁচু হয়ে উঠেছিল। ধাপার মাঠের আবর্জনার পাহাড় থেকে দুর্গন্ধ বের হতো। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবর্জনা বিষে পরিণত হতো ৷ তারপর তা ভূগর্ভস্থ জলস্তরে মিশে গিয়ে জলদূষণ বৃদ্ধি করছিল কলকাতার বুকে। 


ধাপার পুরানো চিত্র সম্পূর্ণ ভাবে এবার বদলে ফেলা হলো। আবর্জনার পাহাড় পরিণত হলো একটি সবুজের পাহাড়ে। ধাপার মাঠ পরিণত হয়েছে বিনোদন পার্কে। কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব হলো? অবাক হওয়ার কথা। কলকাতা পুরসভা করে দেখিয়েছে এই কাজ। বছর দুয়েক আগে জোরকদমে শুরু হয় আবর্জনা ঢাকার কাজ। দূষণের আঁতুড়ঘরকে পরিবেশের উপযোগী করে তুলতে কোটি কোটি খরচ করে ধাপার মাঠে গড়ে উঠলো বিনোদন পার্ক। 

পলিথিনের চাদর দিয়ে আবর্জনার স্তুপ ঢেকে ফেলা হয়। এরপর বৃষ্টির জল আটকাতে তিনটি অংশে ব্যবহার করা হয় পলিথিনের চাদর। পলিথিনের চাদরের ওপর মাটি ফেলা হয় মাঠের পর মাঠের সমান। বিশ্বব্যাংক থেকে প্রায় ষাট কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয় বিনোদন পার্কটি গড়ে তোলার জন্য। একটি বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁচিয়ে রাখা হবে সবুজ পাহাড়টি। বৃষ্টির জল চুঁইয়ে পড়বে প্লাস্টিকের ওপর। নির্দিষ্ট নালার মাধ্যমে জল পৌঁছবে পাশের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। সেখানে টক্সিন বাদ রেখে পরিশ্রুত জল মিশে যাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে। 

আপাতত মাঠটির সাড়ে চৌদ্দ হেক্টর জমি রূপান্তরিত হয়েছে সবুজে। পরবর্তী পর্যায়ে তেইশ হেক্টর জমি প্রাকৃতিক উপায়ে খরচ করে সৌন্দর্যায়নে জোর দেওয়া হবে। স্তুপটির পাশে নয় থেকে দশ ফুট চওড়া রাস্তা বানানো হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে সহজেই সবুজ পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছানো যায়। আবর্জনার স্তুপকে পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা বেশ প্রশংসনীয়। 

পূর্ব কলকাতার আবর্জনার স্তুপকে পরিবেশের উপযোগী করে তোলার মতো ঘটনা এর আগে ঘটেছিল সুইডেনে। যেখানে আবর্জনার স্তুপটি আয়তনে কলকাতার দ্বিগুণ ছিল। যে স্তুপের অত্যাচারে মানুষ সেই স্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করতে থাকে৷ ঘটনাটি ঘটেছিল সুইডেনের হ্যামারগে শহরে। সুইডেন সরকারের তত্ত্বাবধানে একটি আবর্জনার স্তুপকে পরিণত করা হয় স্মার্ট সিটিতে। বর্তমানে এখানে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করতে পারে।      

তিলোত্তমা কলকাতাকে পাহাড় থেকে দেখার ভাগ্য সচরাচর করাও হয়না। কোনোদিন পাহাড় কলকাতার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এমন কথা কী কেউ কল্পনা করেছিলেন? করেননি। আর এখন থেকে কলকাতার বুকে গড়ে ওঠা সবুজ পাহাড় থেকে শহরকে দেখার আলাদা উন্মাদনা চোখে পড়বে। পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে এভাবেই প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। সবুজের সমারোহ ছাড়া পৃথিবীকে ঠিক রাখা সম্ভব নয়। তাই একটা আবর্জনার স্তুপ সবুজে পরিণত হওয়া রোধ করে পরিবেশের ঘাটতি। 

শহরবাসীদের অস্বস্তি একেবারেই শূন্যে গিয়ে ঠেকবে৷ ধাপার মাঠ নিয়ে এককালে যে রসিকতা হতো তাও বন্ধ হতে বসেছে। রাজ্যের মানুষের স্বপ্নপুরী কলকাতা প্রতিদিন একটু একটু করে সেজে উঠছে৷ কলকাতার সর্বপ্রকার দূষণ রোধে প্রশাসনকে এভাবেই জোর দিতে হবে। সপ্তাহের শেষে এবার থেকে বিনোদনের উপযুক্ত স্থান হতে চলেছে ধাপার মাঠ। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments