Header Ads

সত্যজিৎ রায়ের স্ক্রিপ্ট চুরি করে ছবি বানিয়েছিলেন চিত্র পরিচালক স্টিফেন স্পিলবার্গ



১৯৯৩ থেকে টানা দশ বছর ধরে সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা মুভির তালিকায় জায়গা করে নেয় স্টিফেন স্পিলবার্গ পরিচালিত সায়েন্স ফিকশন মুভি 'ই.টি দ্য এক্সট্রা-টেরেসট্রিয়াল'। রোটেন টোম্যাটোর জরিপ অনুযায়ী এই চলচ্চিত্রের ভাগ্যে জুটে গিয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশনের তকমা৷ ১৯৮৩ সালে ইউনিভার্সাল পিকচারের ব্যানারে আমেরিকান ছবি হিসেবে মুক্তি পায়৷ প্রিন্সেস ডায়ানা এই ছবিটি দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন। হোয়াইট হাউসে ছবিটি প্রদর্শনের পর প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও ফার্স্ট লেডি ন্যান্সি রিগ্যান আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন৷ জাতিসংঘে ছবি প্রদর্শনের পর জাতিসংঘ থেকে দেওয়া হয় জাতিসংঘ শান্তি পদক। সিনেপ্রেমীদের কাছেও যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল ছবিটি। 


এতোক্ষণ 'ই.টি' নিয়ে অনেক সাধুবাদ শুনলেন। কিন্তু আপনি কী জানেন 'ই.টি' ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের স্ক্রিপ্ট চুরি করে বানানো হয়েছে? শুনতে একটু হয়তো অবাক হবেন আপনি। তবে এটাই সত্যি যে 'ই.টি' ছবির স্ক্রিপ্ট আসল ছিলনা। সত্যজিৎ রায়ের গল্প চুরি করে স্টিফেন স্পিলবার্গ ছবি বানানোর পর সত্যজিৎ রায় অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়েন।  

১৯৬২ সালে 'সন্দেশ' পত্রিকার জন্য সত্যজিৎ রায় 'বঙ্কুবাবুর বন্ধু' নামে একটি গল্প লেখেন। এটি একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প। কাঁকুড়গাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে এলিয়েনের সাক্ষাৎ ছিল গল্পটির মূলবস্তু। ১৯৬৭ সালে এই গল্পটিকে আরো একটু পরিবর্তন করে ছবি বানানোর জন্য একটি চিত্রনাট্য লিখেন। যার নাম রাখেন 'বন্ধু দা এলিয়েন'। এরপর ঠিক হয় কলম্বিয়া পিকচার্স থেকে আমেরিকা-ভারত ইন্দো প্রযোজনায় নির্মাণ করা হবে ছবিটি। লেখক আর্থার ক্লাকের সাথে ১৯৬৪ সাল থেকেই চিত্রনাট্য সম্পর্কে সত্যজিৎ রায়ের চিঠি আদান-প্রদান চলতে থাকে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয় মার্লন ব্র্যান্ডোকে। অথচ চিত্রনাট্য লেখা শেষ হওয়ার পর দেখা গেল চিত্রনাট্যটি মাইক উইলসনের নামে স্বত্ব করা হয়েছে। স্বত্ব কেনার টাকাও নাকি সত্যজিৎ রায় পাবেন না। এরপর কিছুদিন পর ছবি থেকে মার্লন ব্র্যান্ডোকে বাদ দিয়ে তাঁর পরিবর্তে জেমস কোবার্নকে নিয়ে আনার চেষ্টা চলে। একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এতো নাটক সইতে পারলেন না সত্যজিৎ রায়। তিনি আস্থা হারিয়ে ফেললেন। হলিউডে পা রাখার স্বপ্ন তাঁর খানখান হয়ে যায়। রাগে-দুঃখে-অভিমানে তিনি একরাশ ব্যথা নিয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। 

সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য চুরি যাওয়ার তেরো বছর পরে স্পিলবার্গের হাত ধরে সত্যজিৎ রায়ের লেখা চিত্রনাট্য 'বন্ধু দা এলিয়েন' মুক্তি পেল 'ই.টি' হয়ে। ছবি মুক্তির কয়েদিন পর অভিযোগ উঠে যে সত্যজিৎ রায়ের লেখা স্ক্রিপ্ট চুরি করে চলচ্চিত্রটি বানানো হয়েছে। 'বন্ধু দা এলিয়েন' এর চিত্রনাট্যের সাথে 'ই.টি'র হুবহু মিল রয়েছে। যদিও স্পিলবার্গ স্ক্রিপ্ট চুরির অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি জানান যে 'সত্যজিৎ রায় যখন চিত্রনাট্যটি লেখেন তখন আমি খুব ছোট ছিলাম'। যার জবাবে আমেরিকার প্রখ্যাত 'স্টার উইকেন্ড' ম্যাগাজিনে তুলে ধরা হয় বিস্ফোরক তথ্য। যেখানে বলা হয় 'স্পিলবার্গ ১৯৬৫ সালে গ্রেজুয়েট হন এবং ১৯৬৯ সালে হলিউডে পরিচালক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু করেছেন।' 

সত্যজিৎ রায় 'ই.টি'র প্রসঙ্গে বলেন 'ই.টি বানানো আমার স্ক্রিপ্ট ছাড়া সম্ভব হতো না। যদি মিমিওগ্রাফ কপির মাধ্যমে আমার লেখা দ্য এলিয়েন লন্ডনে না ছড়ানো' হতো।' মার্টিন স্করসিজি ও রিচার্ড অ্যাটেনবরা সত্যজিৎ রায়ের স্ক্রিপ্ট চুরি করে স্পিলবার্গের 'ই.টি' বানানোর ষড়যন্ত্র শণাক্ত করেছিলেন। 'ই.টি' নিয়ে রহস্যের জল অনেক দূর পর্যন্ত ঘোলা হয়েছিল। স্টিফেন স্পিলবার্গ পরিচালক হিসেবে নিঃসন্দেহে অসাধারণ কিন্তু স্ক্রিপ্ট চুরির সেই ঘটনা তাঁর জীবনের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। এটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। যে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আজও হয়নি। অনেকেই হয়তো এই ঘটনাগুলোর কথা ভুলে গেছেন কিংবা জানেননা।


No comments