Header Ads

বাংলার গর্ব জয়নগরের মোয়া



বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের খাদ্যদ্রব্য।মিষ্টি নিয়ে যে ব্যবসা করা যায় তা প্রাচীনকাল থেকে বাংলাই বিশ্বকে শিখিয়েছে। বাংলার মিষ্টির খ্যাতি নিয়ে আজ কোনো সন্দেহই নেই। বাংলার এক এক জায়গায় এক এক রকম মিষ্টান্ন বিখ্যাত। যেমন শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বর্ধমানের সীতাভোগ, সারা বাংলার রসগোল্লা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা, নবদ্বীপের লাল দই, গঙ্গারামপুরের ক্ষীরদই, চন্দননগরের জলভরা সন্দেশ, রাণাঘাটের পান্তুয়া ইত্যাদি। 


এরকমই একটি বিখ্যাত মিষ্টান্ন হল জয়নগরের মোয়া। জনশ্রুতি অনুসারে জয়নগরের মোয়ার আবিষ্কারক হল জয়নগর শহরের নিকটবর্তী বহরু গ্রামের জনৈক যামিনী বুড়ো। একটি অনুষ্ঠানে তিনি নিজের খেতে উৎপাদিত কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া প্রস্তুত করে পরিবেশন করেন। ক্রমে এই মোয়া জয়নগর শহরে জনপ্রিয় হয়। জয়নগরের মোয়া প্রস্তুতকারকরা তখন থেকেই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এই মোয়া তৈরী করতে থাকেন। ১৯২৯ সালে জনৈক পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ওরফে বুঁচকিবাবু এবং নিত্যগোপাল সরকার জয়নগর শহরে তাদের মোয়া তৈরীর কারখানা ও দোকান স্থাপন করেন।

জয়নগরের মোয়ার প্রধান উপাদান কনকচূড় ধানের খই, নলেন গুড় ও গাওয়া ঘি। এছাড়াও ক্ষীর, পেস্তা, কাজুবাদাম, কিসমিস ও পোস্ত ব্যবহার করা হয়। নলেন গুড় শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈরি করা হয়। সব চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের রস পাওয়া যায় জিরেন কাঠ বা জিরান দেওয়া গাছ অর্থাৎ যে খেজুর গাছকে কয়েকদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে এমন গাছ থেকে। জিরেন কাঠ থেকে রস সংগ্রহ করে তিন দিন রাখা হয়। তারপর সেই রস ঢিমে আঁচে জ্বাল দিয়ে তৈরী হয় নলেন গুড়। শীতকালে বাংলার গ্রামে গঞ্জেই নলেন গুড় তৈরির দৃশ্য দেখা যায়।

জয়নগরের মোয়া অনেক ধরনের উপাদান যুক্ত করে তৈরি করা হয়। এতে আঁখের গুঁড়,কনকচূড় খই, এলাচি, পেস্তা-দানা, গাওয়া ঘি মেশানো হয়। এই মিষ্টি শীতকালে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে) তৈরি করা হয়। সেইসময় জয়নগর শহর ও তার আশেপাশের প্রায় ২৫০ টি মিষ্টির দোকানে জয়নগরের মোয়া তৈরি করা হয়। জয়নগরের মোয়া উৎপাদনে শ্রী কৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার একমাত্র পুরাতন দোকান যা ১৯২৯ সালে জয়নগরের মোয়ার বিক্রয় শুরু করে। এই জয়নগরের মোয়া ভারতের ভৌগোলিক স্বীকৃতি বহন করে।


যদিও বর্তমানে কিছু অসাধু মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দ্বারা ভেজাল মেশানো মোয়াও তৈরি হয়ে থাকে। যার ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িকভাবে মার খাচ্ছেন। কিন্তু সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে এই নকল মোয়া বাজার দখল করে ফেলেছে। এর ফলে সাধারণ ক্রেতারা প্রকৃত জয়নগরের মোয়ার স্বাদ পাচ্ছেন না। তারা নকল মোয়ার নিকৃষ্ট স্বাদের উপর ভিত্তি করেই জয়নগরের মোয়া সম্বন্ধে নিজেদের মতামত তৈরী করছেন যার ফলে প্রকৃত জয়নগরের মোয়ার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতাকে আসল মোয়া সম্বন্ধে সচেতন করতে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বহড়ু হাইস্কুলের মাঠে জয়নগরের মোয়ার মেলা বসে। নকল মোয়ার সাথে পার্থক্য বোঝাতে প্রত্যেকটি স্টলে মোয়ার পাশাপাশি কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় রাখা হয়।।

বর্তমানে খেঁজুর গাছ কমে যাওয়ায় নলেন গুড় পেতে সমস্যা হচ্ছে। কনকচূড় ধানের খই পেতেও সমস্যা হচ্ছে ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাম। জয়নগরের মোয়ার কথা সকলেই জানেন। সমস্যা থাকলেও জয়নগরের মোয়া টিকে থাক যুগ যুগ ধরে যাতে বজায় থাকে বাংলার সুনাম।

No comments