Header Ads

বাংলার যুবসমাজের উদ্দেশ্যে স্বামী বিবেকানন্দ বলেন লোকেরা ভালো-মন্দ যাই বলুক, তুমি সিংহের মতো কাজ করে যাও


আপনি যখন কোনো একটা কাজ করতে যাবেন তখন অনেকেই আপনাকে অনেক রকম ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কেউ কেউ আপনাকে নিন্দা করবে। আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করবে। কিন্তু আপনাকে আপনার কাজ করে যেতে হবে। বাংলার যুবসমাজকে স্বামী বিবেকানন্দ এ উদ্দেশ্যে বলেন লোকেরা ভালো-মন্দ যাই বলুক, তুমি সিংহের মতো কাজ করে যাও। 


সালটা ১৯০১। বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দ দিন কাটাচ্ছেন। শরীর অসুস্থ। তাঁর শিষ্যরা সব মঠে এসেছে। তারা স্বামী বিবেকানন্দের চরণ ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। সকলেই জানতে চাইলেন শরীরের এই অবস্থা কেন? উত্তরে স্বামীজী বললেন- 'তোরা তো কেউই আমার কাজে সহয়তা করতে অগ্রসর হচ্ছিস না। আমি একা কী করবো বল? বাংলা দেশের মাটিতে এবার এই শরীরটা হয়েছে, এ শরীর দিয়ে কী আর বেশি কাজ-কর্ম চলতে পারে? তোরা সব এখানে আসিস-শুদ্ধ আধার, তোরা যদি আমার এই সব কাজে সহায় না হস তো আমি একা কী করবো বল?' 

তাঁর শিষ্যরা স্বামীজীর এ কথার প্রসঙ্গে বললেন- " মহাশয়, এই সকল ব্রহ্মচারী ত্যাগী পুরুষেরা আপনার পশ্চাতে দাঁড়াইয়া রহিয়াছেন। আমাদের মনে হয়, আপনার কার্যে ইহারা প্রত্যেকে জীবন দিতে পারেন, তথাপি আপনি ঐ কথা বলিতেছেন কেন?'

আবারো স্বামীজী জবাব দিলেন 'কী জানিস, আমি চাই একদল বাঙালি যুবক। এরাই দেশের আশা-ভরসাস্থল। চরিত্রবান, বুদ্ধিমান, পরার্থে সর্বত্যাগী এবং আজ্ঞানুবর্তী যুবকগণের উপরেই আমার ভবিষ্যৎ ভরসা। আমার ভাবগুলি যারা কাজে পরিণত করে নিজেদের ও দেশের কল্যাণ সাধনে জীবনপাত করতে পারবে। নতুবা দলে দলে কত ছেলে আসছে ও আসবে। তাদের মুখের ভাব 'তমো'পূর্ণ, হৃদয় উদ্যমশূন্য, শরীর অপটু, মন সাহসশূন্য। এদের দিয়ে কী কাজ হয়? নচিকেতার মতো শ্রদ্ধাবান দশ-বারোটি ছেলে পেলে আমি দেশের চিন্তা ও চেষ্টা নূতন পথে চালনা করে দিতে পারি।'

এভাবে বাঙালি যুবসমাজকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বারবার বলেছেন জনসাধারণের দুর্দশার জন্য ধর্মের কোন দোষ নেই৷ তোমরা যদি ধর্মকে কেন্দ্র না করে ধর্মকেই জাতীয় জীবনের প্রাণশক্তি না করে রাজনীতি, সমাজনীতি বা অন্য কিছুকে তার জায়গায় বসাও, তবে তোমরা একেবারে লুপ্ত হয়ে যাবে। বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক পটভূমিতে স্বামী বিবেকানন্দের বাণীগুলোর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ভারতবর্ষে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার একটা বিশেষ প্রবলতা রয়েছে। কাজেই স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ বিশেষভাবে আজকালকার দিনে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।


No comments