Header Ads

বিশিষ্ট ফরাসিবিদ,বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক চিন্ময় গুহ জিতে নিলেন সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার



"সমস্ত মহৎ পরিচালকদের শক্তিকে একত্র করে ফরাসি চলচ্চিত্রে এলো নবতরঙ্গ। 'লা নুভেল ভাগ' বা 'নিউ ওয়েব সিনেমা'। ভাঙাচোরা সময়ের ন্যারেটিভ, যা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে। বয়সে কিছু বড় আল্যাঁ রেনে তাঁদের মধ্যে অনন্য। চলচ্চিত্রের আয়তক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাঁর ছবি দর্শনের বিরাট বিশ্বে গিয়ে পৌঁছতে চায়।" হে অনন্ত নক্ষত্রবীথি প্রবন্ধে এটা লিখেছিলেন জনপ্রিয় বাঙালি সাহিত্যিক চিন্ময় গুহ৷ যিনি ফরাসি সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দর্শন নিয়ে গবেষণা করে অনেকে বই লিখেছেন। ফরাসি সাহিত্য দর্শনকে বাংলাতে ও বাংলা সাহিত্য দর্শনকে ফরাসি ভাষাতে প্রবন্ধ লিখে তিনি ফরাসি সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। 


রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন চিন্ময় গুহ। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট অনুবাদক, ফরাসিবিদ হলেন তিনি। 'চিলেকোঠার উন্মাদিনী', 'মাক্সিম', 'অন্য জলবাতাস অন্য ঢেউ', 'গাঢ় শঙ্খের খোঁজে ও অন্যান্য প্রবন্ধ', 'অপু ট্রিলজি', 'হে নৈঃশব্দ', 'ঘুমের দরজা ঠেলে'র মতো অজস্র গ্রন্থের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷ বহু ভাষাতে অনুবাদ করা হয়েছে তাঁর লেখনী। দেশ-বিদেশে নিমেষেই ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতি। সাহিত্যকর্মের জন্য ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সাহিত্যসম্মান অর্জন করেছেন কিছু বছর আগেই৷ তিনি সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য 'নাইট' উপাধিও অর্জন করেন। যে সম্মান ফ্রান্সের বব ডিলানের মতো প্রখ্যাত সাহিত্যিকদেরও প্রদান করা হয়েছিল। বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক জাঁক দেরিদা চিন্ময় গুহের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন।  
      
এবার তিনি ভারতে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার অর্জন করলেন। একজন বাঙালি সাহিত্যিক হিসেবে বাংলার নাম সারা দেশের মধ্যে তুলে ধরলেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে চিন্ময় গুহের মতো প্রতিভা খুব বেশি নেই বললেই চলে। তিনি পেশায় ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। কিন্তু তিনি ফরাসি ভাষাকে সঠিক ভাবে আয়ত্ত করে ফরাসি সাহিত্য নিয়ে লেখনী শুরু করেন। যা তাঁকে খ্যাতির উর্দ্ধে পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর লেখা বই 'ঘুমের দরজা ঠেলে' বইটির জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি প্রাপক তালিকায় দিল্লি থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার দুপুরে। ২০১৬ সালে সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় 'ঘুমের দরজা ঠেলে'।

প্রায় ৬৪ টি গদ্যের সমন্বয়ে লেখা হয়েছে 'ঘুৃমের দরজা ঠেলে'। রমাঁ রল্যাঁ, বোদল্যের, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , ভলতেয়ার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্নদাশঙ্কর রায়, বুদ্ধদেব বসু, অরুণ মিত্রের মতো সাহিত্যিকদের দর্শন ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন বইতে। বইটিতে অবস্থিত গদ্যে ব্যবহৃত হয়েছে অদ্ভুত সব বাক্যালাপ যেমন একটা গদ্যে তিনি লিখেছেন "এক চিত্রদীপ হতে পারে মানুষের ভাষা? এত স্পর্শঘন, এত বিমূর্ত, মূর্ত, এত ইশারাভরা আলো-আঁধারি। জন্ম-মৃত্যু পার হয়ে এ কোন অলৌকিক আলো উৎসারিত হল শব্দের জঠর থেকে?" 

নতুন বছরের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে 'সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার'। 'ঘুমের দরজা ঠেলে' বইটির প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন 'আমি ইংরেজির ছাত্র। ফরাসি ভাষার চর্চা করেছি। বাংলা ভাষাতে লিখেছি। 'ঘুমের দরজা ঠেলে' এই তিন ভাষার, সংস্কৃতির ধারার এক মেলবন্ধন বলে আমি মনে করি। আমি এই বইতে চেষ্টা করেছি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ভিতর থেকে একটা নতুন দর্শনকে খুঁড়ে বের করার।' তাঁর সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার জয়ে বেজায় আনন্দিত সাহিত্যেপ্রেমী সকল বাঙালি। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments