Header Ads

স্যান্ডউইচ কিনলে গান ফ্রি। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে 'মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ'

আসুন একসাথে গানবাজনা করি খোলা আকাশের নীচে পথের ধারে গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে। মুখোমুখি মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ। যারা গানবাজনার মাধ্যমে সাইকেলে রাস্তার ধারে বিক্রি করে স্যান্ডউইচ। যাদের লক্ষ্য হলো বাংলা ব্যান্ডের গানকে প্রমোট করা। লিটারেসি প্যারাডাইসের নেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এলো মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ নিয়ে নানান কথা।


লিটারেসি প্যারাডাইস- কলকাতার বেশিরভাগ মানুষই মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের নাম কমবেশি শুনেছে ৷ আপনাদের মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের উদ্দেশ্য কী?  
     
মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- প্রথম কথা হলো কলকাতার কিছু মানুষ মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের কথা শুনেছে। সব মানুষের কথা ছেড়েই দিলাম। খুব কম মানুষই আমাদের সম্বন্ধে শুনেছেন৷ তবে কলকাতার বাইরে ও ভারতবর্ষের বাইরেও কিছু মানুষ মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের কথা শুনেছেন। আর মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের উদ্দেশ্য হলো স্যান্ডউইচ বিক্রি করা এবং সাথে গান বাজনা করা ৷ তবে গান বাজনা একা একা করা নয় সবাইকে নিয়ে একসাথে গানবাজনা করা।     
                
লিটারেসি প্যারাডাইস- স্যান্ডউইচ বিক্রি করতে করতে গান বাজনা শোনানো। এমন একটা ভাবনা আপনাদের কীভাবে মাথায় আসে?   

মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- এসেছে আপনা-আপনি ভাবেই। যেভাবে একটা ভাবনা সাধারণত মাথায় আসে। শহরে দেখেছি বিভিন্ন মিউজিক ক্যাফেতে খাবার-দাবার পরিবেশনের পাশাপাশি গানবাজনা চলে। আমার সেরকমই একটি ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওটা করে উঠতে পারিনি। তাই ভাবলাম একা একাই শুরু করি রাস্তা থেকে। আমি সেখান থেকেই শুরু করলাম৷ ভাবনাটা বলতে গলে এমনিই এসে গেছে।             

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনারা ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো পেশায় না গিয়ে হঠাৎ করে মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের মতো এমন একটা উদ্যোগ নিলেন। এর পিছনের কারণটা ঠিক কী?      

মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়ার মতো যোগ্যতা  আমাদের ছিলনা। তাই কিছু একটা তো করতে হতো। পড়াশুনোতে আমরা প্রত্যেকেই খুব খারাপ ছিলাম। আমরা চাইছিলাম প্রত্যেকে আলাদা কিছু একটা করবো ৷ সেজন্যই এরকম উদ্যোগ নিতে হয়েছে।   
       
লিটারেসি প্যারাডাইস- আমরা শুনেছি স্যান্ডউইচ বিক্রির মাধ্যমে আপনারা পুরানো বাংলা ব্যান্ডের গানগুলোকে প্রমোট করতে চান৷ আপনাদের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণটা যদি একটু বলেন?       

মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- না, এটা তেমন কোন সিদ্ধান্ত নয়। মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচের মিউজিকটি তো আমিই করি ৷ আমি নিজে গিটার বাজানোর সূত্রে ব্যান্ডের গান খুব পছন্দ করি। সেখান থেকেই বাংলা ব্যান্ডের গানগুলিই বেশি গাওয়া হয়৷ যারা ক্লাসিক্যাল গান গায় তারা তো আর রাস্তায় এসে গান করবে না। এটা তো খুব স্বাভাবিক নয়। রাস্তার ধারে গিটার বাজিয়ে বা ছোটো ছোটো মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট বাজিয়ে গান করা হয়। যদি আমি মনে করি রাস্তার ধারে গিটার বাজিয়ে ক্লাসিক্যাল গান করবো, অত্যধিক ভ্যারাইটি বা সিনেমার  গান করবো ওটা তো সম্ভব নয়। গিটার বাজিয়ে সিনেমার গান করা যায়না এমনটাও নয়, করাও যায় যেমন আর.ডি.বর্মণের গান। তবে সিনেমার গান গিটারে তেমন জমবে না। ব্যান্ডের গান বা অ্যালবামের গান বলুন এগুলো এমনভাবে তৈরি হয় যার জন্য খুব বেশি ইন্সট্রুমেন্টের দরকার পড়েনা। অল্প কিছু ইন্সট্রুমেন্টেই এগুলো করা যায়। গিটারে এই গানগুলো শুনতেও খুব ভালো লাগে। এটা অটোমেটিক্যালি ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে সিনেমার গান হয়না। আর একটা বিষয় হলো সিনেমার গানের প্রমোশনের জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। টিভি বা রেডিওতে ওরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে নিজেদের গানের প্রমোশন করে। বাংলা ব্যান্ডের ক্ষেত্রে এই জায়গাটা দিন দিন খুব ছোটো হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই জায়গাটা আমরা নিজেদের মতো করে তৈরি করছি। আমরা ব্যান্ডের গানকে প্রমোট করছি। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হলো আমরা পুরানো ব্যান্ডের গান গাই ৷ যে গানগুলো খুব একটা মানুষ গাইনা। গাইলেও খুব কম জনই গায়। যার জন্য কী হয়েছে যে সেই সময়ের শিল্পীরা যে কাজগুলো করেছেন তাঁরা এখন কাজ করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। ফলে আমরা তাদের ট্রিবিউট দিতে পারছি নিজেদের এই প্রমোশনের মাধ্যমে। তাদের গল্পও আমরা সকলকে বলতে পারছি৷ এটাই হচ্ছে মূল বিষয়।
                                           
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনারা খাবার হিসেবে স্যান্ডউইচকেই কেন বেছে নিলেন?    

মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- স্যান্ডউইচ আমরা বাড়ি থেকে বানিয়ে আনি। এরপর সেগুলো কৌঁটোতে করে নিয়ে এসে আমরা বিক্রি করি৷ অন্য খাবার আপনি যাই বাছুন না কেন সেগুলোর প্রচন্ড ঝামেলা আছে। আপনি যদি লুচি, আলুর দমের কথা ভাবেন সেটা গরম করে দেওয়া যায় কিন্তু ঠান্ডা করে দেওয়া যায়না। এবার ভাবুন চা। ওটাও গরম করে দিতে হয়। তার জন্য কিছু জিনিসপত্র লাগে। স্যান্ডউইচের ক্ষেত্রে সেগুলো লাগেনা। প্রাথমিক ভাবে এগুলোর আমাদের প্রয়োজন পড়েনি। এখন আস্তে আস্তে আমরা উন্নতি করছি। সেকারণেই স্যান্ডউইচ। আমরা অন্য একটা জায়গাই স্যান্ডউইচ দেখেছিলাম। যাদবপুরে রেডিও অ্যাক্টিভ স্যান্ডউইচ বলে একটা স্যান্ডউইচ তারা অনেকদিন আগে থেকেই বিক্রি করছে। ওরাই প্রথম সাইকেলে করে স্যান্ডউইচ বিক্রি করার কনসেপ্টটা নিয়ে আসে। আমি ওদের দেখেছিলাম। ওদের দেখেই আইডিয়াটা মাথায় আসে। অন্য যে-কোন খাবার রাস্তায় বিক্রি হোকনা কেন, আপনি দেখবেন ওরা গাড়িতে করে খাবার বিক্রি করে। কিন্তু কেউ সাইকেলে করে বিক্রি করেনা। এই কারণে আমরা স্যান্ডউইচকেই বেছে নিয়েছি। 
                         
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনারা মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ নিয়ে কলকাতাবাসীর কাছে কতটা সাপোর্ট পাচ্ছেন?   

মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি। অনেকে অনেক রকম সাহায্যও আমাদের করেছেন। তবে লোকের আমাদের সম্পর্কে জানাটা আরো বেশি দরকার। এটাই মূল বক্তব্য। যত বেশি করে লোক আমাদের সম্পর্কে  জানবে ততই আমরা লোকজনের কাছ থেকে আরো বেশি সাহায্য পেতে থাকবো। অনেক লোকজন এখানে খেতে আসবে। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে গানের জগতে মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ কতটা অনুপ্রানিত করবে বলে আপনার মনে হয়?  
    
মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ- যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমি মনে করি। আমরা যে কাজটা করছি। কলকাতার খুব কম লোকজনই এই কাজটা করে। আমরা যেটা চেষ্টা করছি কলকাতার খুব মানুষই এই চেষ্টাটা করেছে। আমি আপনাদের খাতা-কলমে লিখে দিতে পারি। আমরা এতো পরিশ্রম করে একটা সুন্দর বিষয় করার চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টার ফলে নিশ্চয় আরো কিছু লোকজন আসবে। ইতিমধ্যেই এসেছে। আগামীদিনেও আমার মনে হয় আরো অনেক লোকজন আসবে। এ বিষয়ে আমাদের তেমন কোন সন্দেহ নেই। অনেকে বলেন যে একদিন গিয়ে দেখি, একদিন আসবো ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম। আমাদের রাস্তার ধারে গানবাজনা করবার কনসেপ্টটা হচ্ছে আপনি এখানে এসে নিজে গানবাজনা করতে পারবেন। কলকাতায় আপনি এমন কোন জায়গা পাবেন না যেখানে নিজে গিয়ে গানবাজনা করতে পারবেন। তবে নন্দনে আপনি গানবাজনা নিজে গিয়ে করতে পারবেন। যদিও সবাই সেখানে গানবাজনা করতে পারেন না। অথচ আমাদের কাছে যে কেউ এসে গানবাজনা করতে পারেন। তাই আমার মনে হয় মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ ভীষণভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে  অনুপ্রানিত করবে।     
     
প্রতিবেদন- সুমিত দে




No comments