Header Ads

একটা যুগের সমাপ্তি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের জীবনাবসান

না ফেরার দেশে চিরকালের মতো পাড়ি দিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন। রেখে গেলেন একগুচ্ছ স্মৃতি। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হলো এক শূন্যতা। আপামর বাঙালি পাঠকদের চোখ কান্নার জলে ভরিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। ৭ ই নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫ মিনিটে তিনি নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। বহুদিন ধরে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।


বনীতা দেবসেন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন উপন্যাসিক, কবি, লেখিকা, শিশু সাহিত্যিক। তো অন্যদিকে তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিজিটর প্রফেসর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। 

নবনীতা দেবসেনের অনেক পরিচয় রয়েছে। তিনি সেকেলের বিশিষ্ট কবি দম্পতি নরেন্দ্র দেব ও রাধারানী দেবীর একমাত্র কন্যা। তিনি ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের প্রাক্তন স্ত্রী। সাংবাদিক ও অভিনেত্রী নন্দনা দেবসেনের মা। এছাড়াও কবি বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের স্নেহধন্য ছাত্রী ছিলেন তিনি। 

সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের লেখাতে অদ্ভুত রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর লেখার ধাঁচ সম্পূর্ণ অন্যরকম। স্বতন্ত্র ভাবানাতে দূর্দান্ত সব ভাষা প্রয়োগে তিনি অনায়াসেই লিখে ফেলতে পারতেন এক একটা উপন্যাস ও গ্রন্থ। প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর সম্পর্কে বলেন যে 'নবনীতা বর্ণময় মানুষ। তাঁর রসবোধ ছিল অসম্ভব ভালো। সেটা তাঁর সব লেখাতেই ফুটে উঠত। এমন রসবোধ আজকের পৃথিবীতে দুর্লভ। আমি নিজেও ওঁর লেখা প্রবন্ধ, গল্প, আত্মকথা, ভ্রমণকাহিনীর ভক্ত ছিলাম। শিশুদের জন্য ওঁর লেখা ছড়া, রূপকথা বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্রের সমান।' 

তাঁর প্রয়াণ প্রসঙ্গে কবি জয় গোস্বামী বলেন 'নবনীতা দেবসেনের চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যে এক অপূরণীয় ক্ষতি। বহুমুখী লেখিকা ছিলেন। অপূর্ব ভ্রমণ কাহিনী লিখতেন। রম্য রচনায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কবিতাও তিনি মন দিয়ে লিখে গেছেন। পরিমাণে অল্প হলেও খুবই শক্তিশালী। তরুণ লেখকদের উৎসাহ দিতে বরাবরই দেখা গিয়েছে নবনীতাকে।'

শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। বহু ছাত্র-ছাত্রীর কাছে বড়োই প্রিয় ছিলেন তিনি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ও বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করতেন তাঁকে। কিছুদিন আগে তিনি কলকাতা ফিরে দেখা করেন তাঁর সাথে। এটাই ছিল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ের সাথে নবনীতা দেবসেনের শেষ দেখা। সাহিত্যের জন্য তিনি অর্জন করেছেন 'সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার' ও 'পদ্মশ্রী' সম্মান।     

অভিনেত্রী নন্দনা দেবসেন মায়ের মৃত্যু সম্পর্কে বলেন যে 'গত কয়েকদিন ধরেই আমার মা অসুস্থ ছিলেন। তবে মায়ের মনের জোর ছিল অনেক বেশি। তা নিয়ে অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। মায়ের অক্সিজেন কমে আসছিল, বাইপাফ ও নেবুলাইজার দিচ্ছিলাম আমরা। এক সময় দিদি আর আমি গান গাইতে শুরু করলাম। মা গান শুনতে শুনতেই চলে গেলেন।'      
    
নবনীতা দেবসেনের সাথে অর্মত্য সেনের পয়তাল্লিশ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলেও তাদের মধ্যে অটুট ছিল সম্পর্ক। প্রায় পয়ষট্টি বছর ধরে যোগাযোগ ছিল তাদের মধ্যে। নবনীতা দেবসেনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তিনি শোকপ্রকাশ করে জানান 'কী হবে আর কলকাতায় ফিরে! যার সঙ্গে দেখা করতে যেতাম সেই তো আর নেই। চলে গিয়েছেন আমাদের ছেড়ে।'       
       
সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের মানুষেরা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি আর নেই। তাঁর মৃত্যুতে সংস্কৃতিমনস্ক সকল ব্যক্তিরা শোকজ্ঞাপন করেছেন। তিনি সশরীরে আর নেই। কিন্তু রেখে গেলেন তাঁর সৃষ্টি। যা থেকে যাবে আমাদের হৃদয়ে। যতদিন বাংলা ভাষা ও বাঙালি বেঁচে থাকবে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে    
            



                                                             

No comments