Header Ads

খড়গপুর স্টেশনে রেলের গাফলতির কারণে মৃত্যু সুনীল সরকার নামের এক বাঙালি যুবকের


ভারতীয় রেলে আবারো গাফিলতি। যার জেরে প্রাণ গেল বাঙালি যুবক সুনীল সরকারের। শনিবার সকালে খড়গপুরে ঘটে এই ঘটনা। ব্যাঙ্গালোর থেকে চিকিৎসা করিয়ে সত্যসাই এক্সপ্রেসে নিজের স্ত্রী ও বাবাকে নিয়ে ফিরছিলেন ঐ যুবক। বাড়ি ফিরতে বাকী ছিল বেশ কিছু ঘন্টা। খড়গপুরে ট্রেন ঢোকার কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ প্রচন্ড বুক ব্যথাতে কাতরাতে থাকেন তিনি। তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য খড়গপুর স্টেশনে নামানো হয়। 


সুনীল সরকারের অসুস্থতার কথা সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয় রেলে কর্মরত আরপিএফ জওয়ানদের। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকার অনুরোধ জানানো হয়। মাত্র দুই কিলোমিটার পার হলেই হাসপাতাল। একটা অ্যাম্বুলেন্স আসতে মেরে কেটে পাঁচ মিনিট লাগে। কাজেই অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় বধির সুনীল সরকারের পরিবার। এরপর কেটে যায় এক ঘন্টারও বেশি সময়। অথচ অ্যাম্বুলেন্সের দেখা মেলে না কিছুতেই। এই এক ঘন্টা সময়ের মধ্যেই প্রাণ হারাতে হলো সুনীল সরকারকে। 

নিজের ছেলের মৃত্যু প্রসঙ্গে মৃতের বাবা পরিমল সরকার বলেন যে - "এতো টাকা খরচ করে আমরা ট্রেনের টিকিট কাটাই। এরপরও যদি ট্রেন আমাদের সুবিধা না দেয় তাহলে আমাদের জীবনের মূল্য কী? আজকে রেলের গাফিলতির কারণে আমার ছেলেটাকে অকালে চলে যেতে হলো।"

খড়গপুরের স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে সুনীল সরকার মারা যাওয়ার পর এতো ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পরেও নেই কোন প্রশাসনিক তৎপরতা। যেন একজন মানুষের জীবনেরও মূল্য নেই প্রশাসনের কাছে। কয়েকমাস আগে লিটিল ম্যাগাজিন বিক্রেতা সজল কাঞ্জিলাল মারা যান মেট্রো রেলের গাফলতির কারণে। সেবার কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল যে সজল কাঞ্জিলালের কব্জিটা নাকি সরু ছিল৷ এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার রেলের গাফলতির সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেয়। 

আজকে কেন্দ্র সরকার রেলকে বেসরকারিকরণের চেষ্টাতে বিভোর। দেশের জনসাধারণের নিত্যনৈমত্তিক যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো রেল। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে চলে দূরদূরান্তে। এদের সুবিধা বা অসুবিধার কথা কেন্দ্র সরকার ভাবতে ভুলে গেছে। ভারতীয় রেলের অনুন্নত পরিকাঠামো ও পরিষেবার জন্য বেশিরভাগ দিনই বিভ্রান্তিতে ভুগতে হয় নিত্যযাত্রীদের। রেলে না আছে ভালো শৌচালয়ের ব্যবস্থা, না আছে চিকিৎসার ব্যবস্থা। তার থেকেও বড়ো কথা রেলের নোংরা খাবার। যা সহজেই একজন ব্যক্তিকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। 

দূরদূরান্তে আমরা যারা যাতায়াত করি তারা ভালোভাবে জানি যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রেন না থাকার কারণে তিন মাস বা চার মাস আগে থেকেও রিজার্ভেশন টিকিট মেলেনা। এসি ট্রেনে কিছু ভালো ব্যবস্থা থাকলেও মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের সর্বদা সামর্থ্য থাকেনা এসি কামরায় চড়ার। ননএসিতে যারা যাতায়াত করেন তাদের অসুবিধার কথা ভুলে যাচ্ছে রেলের প্রশাসনিক বিভাগ। 

রেল নিয়ে কেন্দ্র সরকার সঠিক উদ্যোগ না নিলে সুনীল সরকার, সজল কাঞ্জিলালের মতো আরো অসংখ্য মানুষ মারা যেতে থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে রেলের গাফলতির পাশাপাশি রেলে কর্মরত বহিরাগত আরপিএফদের দুর্ব্যবহারের কারণেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিশেষ করে বাঙালিদের। পশ্চিমবঙ্গে রেলে কর্মরত আরপিএফের নব্বই শতাংশই বহিরাগত। পশ্চিমবঙ্গের রেলে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ নেই। ভূমিপুত্র আরপিএফ না থাকার কারণে বাঙালি যাত্রীদের ভাষা সমস্যাই পড়তে হয়। বাংলার মাটিতে বাঙালিই যদি বঞ্চিত থাকে। তাহলে বাঙালি কোথায় ভালো থাকবে। এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন ঘরপাক খাচ্ছে সমাজ সম্পর্কে সচেতন মানুষের মনে।    

রেলের আরপিএফ কর্মীদের অলসতা-অবজ্ঞার জন্য একটা প্রাণ ঝরে গেল। তবুও প্রশাসনের হেলদোল নেই। সুনীল সরকারের পরিবারের রেল পুলিশদের কাছে একটু সাহায্য চাওয়া সত্বেও পুলিশ অবহেলা করলো তাদের। সুনীল সরকারের নাম কদিন পরেই মুছে যাবে। হয়তো সজল কাঞ্জিলালের মতো সুনীল সরকার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক বিভাগ বিবৃতি দেবে যে এটা রেলের গাফলতি নয়। অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরী হওয়ার জন্য উনি মারা যান। কিন্তু বিষয় হলো ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কেন আসেনি অ্যাম্বুলেন্স? সবার প্রশ্ন এখানেই।। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments