Header Ads

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হাউসফুল রিতম ব্যানার্জী পরিচালিত শর্টফিল্ম 'ব্যানড'


ফ্যাসিজম কতটা ভয়কর তার প্রভাব কী হতে পারে এমনই একটি বিষয় নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি নির্মাণ করলেন পরিচালক রিতম ব্যানার্জী৷ ফ্যাসিস্ট সরকার এসে নিষিদ্ধ করলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর রচিত কবিতা, গান নিয়ে চর্চা হলে গুলি করে তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয় সরকার থেকে। এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ পথে নামলে তাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য অত্যাচার। সরকারের এমন হেন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন একজন তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক গোরা। তুমুল প্রতিবাদে সোচ্চার হতে গোরার সাথে সঙ্গ দিতে আসে সন্দীপ, নিখিলেশ, নন্দিনী এবং অমল ও সুধা নামের দুটি বাচ্চা ছেলেমেয়ে। পুলিশের কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। নন্দিনী ও তার সাথে কিছু রবীন্দ্রপ্রেমীদের গুলি করে হত্যা করা হয়। গোরাকে পুলিশ গ্রেফতার করে ফাঁসির হুকুম দেয়। নিখিলেশ অমল ও সুধাকে নিয়ে বর্ধমানে গোরার কাকার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারপর ঠিক হয়? এগুলো একবাক্যে লেখা এককথায় অসম্ভব। 



ছবির নাম 'ব্যানড'। এ ছবিটি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সাথে বানানো হয়েছে। সকলের অভিনয়ও বেশ জমকালো। ছবির ভিএফএক্সের কাজও মনে রাখার মতো। উন্নতমানের প্রযুক্তিও ব্যবহার হয়েছে এ ছবিতে৷ স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি হিসেবে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিকেও সহজে টেক্কা দিতে পারে।

    
ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক জানান যে- "দেশজুড়ে বাঙালিকে এবং বাঙালি সত্তাকে দমন করবার যে প্রচেষ্টা, এই ছবিটি তার বিরুদ্ধে আমাদের একটি বিপ্লব। যে বিপ্লবের কান্ডারি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ুক গোটা বাংলা জুড়ে"।


'ব্যানড' বলতে গেলে একটি পিরিয়ড ড্রামা ফিল্ম। পরিচালক রিতম ব্যানার্জী এ ছবির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে তিনি কতটা সাহসী। এরকম শক্তিশালী শর্টফিল্ম খুবই কম হয়েছে বাংলাতে। ছবির গল্প একশো আশি ডিগ্রি কোণে আপনাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷ রবীন্দ্র ভারতীতে তালা ঝোলানোর ঘটনা, বোমা ফেলে রবীন্দ্র সৌধ ধ্বংস করা, জোঁড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আগুন ধরানোর মতো ভয়ংকর সব দৃশ্য রাখা হয়েছে ছবিতে।

গত ১৪ ই নভেম্বর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলো 'ব্যানড'। নন্দন থ্রিতে এ ছবিটি দেখার জন্য পুরো হল ভরে ওঠে। একশো জনের বসার হলে প্রায় দুশো জন মানুষ ভিড় করে। হল ভরে ওঠার পরও অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাতে থাকে। এতোজন মানুষকে হলে সামাল দিতে না পেরে টাঙানো হয় হাউসফুল পোস্টার। বেশ কিছু মানুষ হলের বাইরেই থেকে যান। এমন অবস্থা দেখে নন্দনের সিকিউরিটি গার্ড বলেন যে "দশ বছরের ওপর চাকরি করছি। নন্দন, শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন, সব দেখেছি। কিন্তু বাপের জন্মে দেখিনি কোনো শর্ট ফিল্ম দেখতে আড়াইশোর ওপরে লোক এসেছে। আমার চাকরিটা আজ চলে যেত।" 


সহস্র মানুষের ভালোবাসাই এ ছবি সফলতার মুখ দেখেছে। ইউটিউবেও মুক্তি পেয়েছে এ ছবি। টিনসেল টাউন প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এ ছবি৷ ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ইউটিউবেও দেখে ফেলেছেন ফিল্মটি। ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় পরিচালক হিসেবে রিতম ব্যানার্জী অনেক দূর এগোবেন। কারণ তার ছবি বানানোর ধরনটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments