Header Ads

গ্রাম-বাংলাতে আজও প্রচলিত অঘ্রাণের ধান তোলার জন্য লক্ষী পুজো


'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর'। কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রামবাংলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন এই কবিতা। সবুজের সমারোহ আর ধান জমিতে সোনালী ধানের পরশে বাংলার গ্রামগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন সোনায় মোড়া। গ্রামের মানুষের শান্ত ও শীতল জীবন মানব শরীরে নিয়ে আসে বৈচিত্র্যের পূর্বাভাস। 


বাংলার গ্রামগুলোকে বলা যায় শান্তির স্বর্গ। পৃথিবীর সমস্ত শান্তি যেন বিরাজ করে গ্রামবাংলাতে। মাটির বাড়ির সুভাষ, সবুজ গাছাপালায় মুড়ে থাকা গ্রামের চারপাশ, লালধূলোর রাস্তা, রাঙামাটির পথ মন জুড়িয়ে দেয় সবার। তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন 'গ্রামছাড়া ওই রাঙামাটির পথ' গানটি। যে গান সাতসকালে শুনলে বাঙালি মন হারিয়ে যেতে চায় পল্লীসমাজে। 

কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গ্রামবাংলার সমাজ নিয়ে লিখেছেন 'পল্লীসমাজ' উপন্যাস। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'নৌকাডুবি' তেও আছে গ্রামের উল্লেখ। কবি জসীমউদ্দিন তিনিও মুগ্ধ হতেন গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে। গ্রামের রাখাল বালকদের জীবন নিয়ে তিনি লিখেছেন 'রাখাল ছেলে' কবিতা ও 'নক্সিকাঁথার মাঠ' নামের কাব্য। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন 'পঞ্চগ্রাম'। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসেও উঠে এসেছে গ্রামবাংলার চিত্রকথা।

এই বাংলার গ্রামে শুরু হতে চলেছে নবান্ন উৎসব। অঘ্রাণ মাসে ধান কেটে গোলাবাড়িতে রাখা হয় খড়। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে গোলাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য পুজো করা হয় লক্ষীকে। খড়ের মুঠ বানিয়ে তার উপর একটা মাঝারি মাপের লাল কাপড়ে বেঁধে মুঠটিকে তুলসী মঞ্চের কাছে কাছে রেখে দেওয়া হয় ৷ এরপর ধূপ-ধুনো ও প্রদীপ জ্বালিয়ে লক্ষী মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো করা হয়। এদিন গ্রামের যে বাড়িতে এই পুজো হয় ঐদিন রাতে ঐ বাড়ির সদস্যরা পিঠে বানায়। গুঁড়ি দিয়ে একটি বড়ো গোল মাপের পিঠে বানানো হয়। গ্রামাঞ্জলে যাকে মেলা পিঠে বলা হয়। গ্রামবাংলার এটা অনেক প্রাচীন একটা প্রথা। আজও বাঙালি কৃষক পরিবারগুলোতে এই প্রথা মেনে চলা হয়। এই পুজোর মাধ্যমেই শুরু হয় নবান্ন উৎসব। 

নবান্ন উৎসব মানেই নতুন ধান ঘরে তোলার পালা। এর মধ্যেও একটা আলাদা আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে বাংলার গ্রামবাসীদের মনে। বাংলার বুকে গ্রামগুলোয় একমাত্র বাঁচিয়ে রেখেছে বাঙালি সংস্কৃতিকে ৷ নবান্ন উৎসবের তাই গুরুত্বই আলাদা। আর এমনিতেও নতুন ধান ঘরে না উঠলে নতুন চাল হবেই বা কী করে। বাঙালি ভাত খেতে পছন্দ করে তাই তার খাদ্যাভ্যাসের কথা ভেবে নতুন ধান ঘরে তোলা হয়। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments