Header Ads

মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে একই দিনে ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের


চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠণের বিচারপর্ব চলছে। বিচারে ফাঁসির আদেশ প্রায় নিশ্চিত জানেন যুবক। সময় তাঁর কাছে খুবই কম।



- তোমাকে খুব ভাল লাগে কল্পনা। যদি ফিরে আসি অপেক্ষা করবে আমার জন্যে?

অষ্টাদশী কল্পনা দত্ত নিরুত্তর। কিছু বলতে পারলেন না তিনি। তিনিও মনে মনে পছন্দ করেন শান্ত স্বভাবের ছেলেটিকে। দলের কাছে ছেলেটি ফুটুদা নামেই পরিচিত। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন কল্পনা দত্ত।

না সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বিচারে কল্পনা দত্তের জেল হলেও ফাঁসি হয়ে যায় চট্টগ্রামের বীর বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের। মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে একই দিনে চট্টগ্রাম জেলে ফাঁসি হয় তারকেশ্বর দস্তিদারের।

চট্টগ্রাম জেল থেকে ফাঁসির আগে তারকেশ্বর তাঁর বৌদিকে চিঠিটা লিখেছিলেন-

"বৌদি, তোমাদের স্নেহ ভালবাসা থেকে চিরদিনের মত চলে যাচ্ছি। মাকে বলো, আমার যে টাইফয়েড হয়েছিল, তখনও তো মারা যেতে পারতাম। কত লোক যে প্রতিদিন নানাভাবে মারা যাচ্ছে! আমার মৃত্যু তা থেকে অনেক শ্রেয়। মনকে প্রবোধ দিও।"


ফাঁসির আগে মাস্টারদা সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে হাতুড়ি পেটা করল প্রথমে । আঘাতে মুখমণ্ডল থেঁতলে গেল তাদের, ভেঙ্গে গেল সবকটা দাঁত। হাতের নখ উপড়ে তুলে ফেলা হল একের পর এক। হাঁটু থেকে শুরু করে সমগ্র শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে চলল নির্বিচারে আঘাতের পর আঘাত। শরীরের সকল হাড় ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারালেন। তারপর মৃতপ্রায় শরীর দুটিকে টানতে টানতে, তাদের গলায় বেঁধে দেওয়া হয় হল ফাঁসির দড়ি। সেই দিনটা ছিল ১৯৩৪ সালের ১২ ই জানুয়ারী। সময় রাত ১২ টার কাছাকাছি। আগাম বিক্ষোভ রুখতে সেদিন গোটা চট্টগ্রাম উর্দিধারীরা ছয়লাপ। ফাঁসির পর শবদাহ হয়নি তাদের। ফাঁসির পর মৃতদেহ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হল। তারপর তাদেরকে ব্রিটিশ ক্রুজারে “The Renown” এ তুলে, তাদের বুকে বেঁধে দেওয়া হল লোহার বড় বড় টুকরো। জাহাজ চলে আসল বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগর সংলগ্ন কোন এক গভীর অভ্যন্তরে। অতল গভীর জলে নেমে গেলেন, মাস্টারদা সূর্যসেন ও তারেকশ্বর দস্তিদার।

পরে কমিউনিস্ট পার্টির সহযোদ্ধা পি সি জোশী যখন কল্পনা দত্তকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন কল্পনা দত্ত পি সি জোশীকে বলেছিলেন আমি যে ফুটুদাকে কথা দিয়েছি। জানি সে ফিরে আসবে না কিন্তু তাও এই কাজ আমার পক্ষে অসম্ভব।

পরে বাড়ির লোকেদের জোরাজুরিতে পি সি জোশীর সাথে বিয়ে হয়ে যায় অগ্নিকণ্যা কল্পনা দত্তের। কিন্তু তারপরেও কিন্তু কল্পনা দত্ত ভুলতে পারেননি তারকেশ্বর দস্তিদারকে। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও এক সাক্ষাৎকারে কল্পনা দত্ত স্মরণ করেছিলেন তারকেশ্বর দস্তিদার, মাস্টারদা এবং চট্টগ্রামের সেই দিনগুলোকে। বাড়তি আর কিই বা বলার।

No comments