Header Ads

চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুন্ঠনের মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে বিপ্লবীদের মামলা লড়েছিলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল


আজ বাংলার মহান নেতা,বিশিষ্ট আইনজীবী, মেদিনীপুরের মুকুটহীন সম্রাট,দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের ১৩৮ তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৮১ সালে মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমাধীন চাঁদীভেটিতে জন্মগ্রহণকারী বীরেন্দ্রনাথ শাসমল ছাত্রাবস্থাতেই তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯০০ সালে কোন্টাই হাইস্কুলে এনট্রান্স পাস করেন। তিনি তাঁর শিক্ষক তারকগোপাল ঘোষ ও শশীভূষণ চক্রবর্তী কর্তৃক বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন। প্রথমে কলকাতা মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হলেও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর কাছে শিক্ষা গ্রহণের মানসে পরে রিপন কলেজে(অধুনা সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) যোগ দেন। পাশ করে উচ্চতর আইন শিক্ষার জন্যে ইংল্যান্ডে যান। এ সময়েই তিনি আমেরিকা ও জাপানে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ করেন। মিডল টেম্পল থেকে ১৯০৪ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন। এরপর তিনি মেদিনীপুর জেলা আদালতে চলে আসেন। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর তিনি জেলা বোর্ড ও মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য হন। তিনি রাজনীতিকে সমাজকল্যাণের সমার্থক মনে করতেন।


১৯১৩ সালে পুনরায় কলকাতা প্রত্যাবর্তন করে তিনি হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির ১৯২০ সালের কলকাতা সম্মেলনে তিনি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯২১ সালের অহিংস অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কিত প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে শাসমল ইতিমধ্যেই চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। নাগপুর সম্মেলন থেকে ফিরে এসে শাসমল তাঁর লাভজনক আইন ব্যবসা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২১) যোগ দেন। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। এসময়েই তিনি তাঁর নিজ জেলাতে ইউনিয়ন বোর্ড বিরোধী বিক্ষোভ গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

শাসমল জাতীয় শিক্ষার সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষা হওয়া উচিত অবৈতনিক এবং ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। তিনি কোন্টাইয়ে নিজ বাসগৃহে একটি জাতীয় স্কুল স্থাপন করেন।

১৯১৩, ১৯২৬, ১৯৩৩ সালে মেদিনীপুর বন্যায় ত্রাণ কর্মী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২১ সালে লাভজনক আইন ব্যবসা ছেড়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। এই সময়ে মেদিনীপুরে ব্রিটিশ সরকার ২২৭ টি ইউনিয়ন বোর্ড তৈরী করে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আনতে চাইলে বীরেন্দ্রনাথ আশঙ্কা করেন যে এর ফলে প্রায় ৭ গুণ ট্যাক্স বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি তীব্র গণআন্দোলনের ডাক দেন। ইউনিয়ন বোর্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তিনি জুতো না পড়ার প্রতিজ্ঞা করেন।তার ডাকে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্যাক্স বয়কট করে।ফলে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়ে ২২৭ টি বোর্ডই বাতিল করে দেয়। এরপর এক জনসমাবেশে বহু সাধারণ মানুষ তাদের নেতার পায়ের তলায় নিজেদের জুতো এনে রাখেন।

১৯২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত সফর বয়কটকে কেন্দ্র করে বাংলার নগরগুলিতে অসন্তোষ চরমে পৌঁছে যায়। ১০ ই ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাশ, আবুল কালাম আজাদ, সুভাষচন্দ্র বসু ও অন্যান্য আরও কয়েকজনের সাথে শাসমলকে বয়কট সংঘটিত করার দায়ে গ্রেফতার করে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

শাসমল ১৯২৮ সালের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির কৃষ্ণনগর অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু সভাপতির ভাষণে সন্ত্রাস ও সহিংসতার ওপর তাঁর মন্তব্যের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদ থেকে শাসমলকে বাদ দেওয়ায় বেঙ্গল প্যাক্ট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের বর্বরতা তদন্ত করার জন্য নিয়োজিত বেসরকারি কমিটির সদস্য থাকাকালে তিনি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন। মুক্তি পাওয়া মাত্রই তিনি চট্টগ্রাম আসেন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় (১৯৩০) আসামী পক্ষের উকিল হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার জন্য এ মামলায় তাঁর যোগদান সহযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের পরিচায়ক। মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডগলাস ও বার্জ হত্যা মামলায় আবারও তিনি বিনা পারিশ্রমিকে বিপ্লবীদের উকিল হিসেবে মামলা লড়েন।

তিনি মেদিনীপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ১৯২৫ এবং ১৯২৬ প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচিত সভাপতি। এরপর কংগ্রেস বিরোধী প্রার্থী রূপে কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটে দাঁড়ান ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ১৯৩৩ সালে। পন্ডিত মদনমোহন মালব্যের অনুরোধে ভারতীয় আইনসভা সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়লাভ করেন ১৯৩৪ সালে।

১৯৩৪ সালের ২৪ শে নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

দেশের রাজনীতিতে অবদান ও সংস্কারমূলক কাজের জন্যে তাঁকে দেশপ্রাণ উপাধি দ্বারা সম্মানিত করা হয়। এই মহান নেতার জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।


তথ্য - উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া

No comments