বহিরাগত আরপিএফের হাতে বাঙালি যুবকের বিনাদোষে মার খাওয়ার প্রতিবাদে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিল বাংলা পক্ষ
একদিকে কেন্দ্র সরকার যখন এনআরসি করে বাঙালি তাড়ানোর এক গভীর চক্রান্ত করছে। তো অন্যদিকে কলকাতার বুকে দিন দিন দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে বিহারী, মাড়োয়ারি ও গুজরাটিদের। তারা ক্রমশ যেন দখল করে নিচ্ছে পুরো কলকাতাকে। তাদের নেতৃত্বেই শহরের বুকে ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ। বাঙালির পুঁজি-ব্যবসা-চাকরী সব হারাচ্ছে এদের শক্তিবৃদ্ধির ফলে। আজকাল কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় চাকরীর বিজ্ঞাপনে লক্ষ্য করা যায় সর্বত্র লেখা থাকে অবাঙালি ক্যান্ডিডেট। এর পিছনে রয়েছে একটা ভয়াবহ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যে ষড়যন্ত্রের শিকার বাঙালি।
উত্তরপ্রদেশে দেবী দুর্গার মন্দির ভেঙ্গে ফেলা, গুজরাটে জোর করে দুর্গাপূজার বিসর্জন বন্ধ করে দেওয়া, দিল্লিতে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির মাছের বাজার ভেঙ্গে দেওয়া, আসামের গোয়ালপাড়াতে বাঙালিদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প বানানো, পুজোতে ট্যাক্স বসানোর পরিকল্পনা প্রভৃতির মাধ্যমে কোনো একটা কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল করার চেষ্টা করছে আপামর বাঙালি সমাজকে।
এতোকিছুর পরও অনেক বাঙালি ঘুমিয়ে। কিন্তু তা বলে সবাই ঘুমিয়ে আছে এমনটা নয়। এখন প্রতিদিন একটু একটু করে জেগে উঠছে বাঙালি সমাজ। বাঙালি জাতীয়তাবাদী বেশ কিছু দল আন্দোলন করে বাঙালির অধিকার নিয়ে লড়াই করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী দলের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি তা হলো বাংলা পক্ষ। গত ২১ শে অক্টোবর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভীত নড়িয়ে দিল বাংলা পক্ষ।
গত ২১ শে অক্টোবর সিরাজ মিশ্র নামের একটি বাঙালি ছেলের সাথে দুর্ব্যবহার করে এক বহিরাগত মাড়োয়ারি আরপিএফ রাজেশ কুমার মীনা। চলন্ত মেট্রোতে দুই তরুণী সিরাজের নামে তাদের ছবি তোলার অভিযোগ তোলে আরপিএফের কাছে। এরপর আরপিএফ পুলিশেরা সিরাজের মোবাইল চেক করে। যদিও মোবাইলে আপত্তিজনক কিছু পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু দুই মহিলার অভিযোগে রাজেশ কুমার মীনা নামের আরপিএফ পুলিশকর্তা কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে সিরাজ নামের ঐ যুবককে মেট্রো থেকে টেনে নামিয়ে দেয়। আর হিন্দিতে জোর করে কথা বলতে বাধ্য করতে থাকে তাকে। সে হিন্দি বলতে অস্বীকার করায় তাকে 'বাঙালি গরীব কা বাচ্চা। বাঙালি শুয়োরের বাচ্চা।' ইত্যাদি বলে বাঙালি বিদ্বেষ ছড়িয়ে সিরাজকে স্টেশন মাস্টারের ঘরে লাথি মারতে মারতে নিয়ে যায়। তারপর সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মোবাইলে লাইভ ভিডিও করে বিষয়টা বাংলা পক্ষকে জানাতে থাকে। এরপর তার মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে তার মাথা ঠুকে দেওয়া হয় দেওয়ালে।
সিরাজ মিশ্রকে বাঁচাতে বাংলা পক্ষের অসংখ্য সহযোদ্ধারা দখল নেয় কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের। জয় বাংলা স্লোগানে মুহূর্তের মধ্যে অন্য পরিবেশ নেয় কালীঘাট মেট্রো স্টেশন। তাদের দেখে এগিয়ে আসেন শতাধিক বাঙালি। চার ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে প্রবল আন্দোলন। বাংলা পক্ষের সকল সহযোদ্ধারা দাবী তোলেন 'আরপিএফে বাঙালি চাই'। ঐ আরপিএফ পুলিশকর্তার নামে কালীঘাট থানাতে এফআইআর করা হয়। এফআইআর কপি নিয়ে কালীঘাট মেট্রোতে হাজির হয় বাংলা পক্ষের একজন সহযোদ্ধা। তারপর আরপিএফ পুলিশকর্তাটির শাস্তির দাবিতে বাংলা পক্ষের সহযোদ্ধাসহ শতাধিক বাঙালি সরব হয় কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে।
বাঙালি বিদ্বেষের জবাব দিতে বাংলা পক্ষ সহ শতাধিক বাঙালি যেভাবে লড়াইয়ের ডাক দেয় তা থেকে স্পষ্ট বাঙালি নিদ্রা বিসর্জন দিয়ে জেগে উঠছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এভাবে প্রতিটি বাঙালিকে তার অধিকার কায়েম করে নিতে হবে। বাংলার কোনো প্রান্তে বাঙালির ওপর অত্যাচার হলে তার যোগ্য জবাব বাঙালিদের। নাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাঙালিকে সইতে হবে হাজারো লাঞ্ছনা।
প্রতিবেদন - সুমিত দে
Post a Comment