পুজোর মুখে দরীদ্র স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মনে আনন্দের পূর্বাভাস দিয়ে গেল 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'
এসে গেল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। যে উৎসবে আপামর বাঙালি সমাজ মেতে ওঠে এক গভীর আনন্দযজ্ঞে। দুর্গাপূজাতে মিশে থাকে বাঙালির আবেগ ও নিখাদ বাঙালিয়ানা।
পুজো আসা মানেই আমরা সকলেই খুঁজতে বেড়ায় নিদারুণ সুখ। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই চায় পুজোর চারদিন একটু সুখ পেতে। আপামর বাঙালি সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে এই চারটা দিনের জন্য। দুর্গাপূজাকে ঘিরে অনেকে আবার অনেক স্বপ্নও দেখে থাকেন।
দুর্গাপূজা হলো এমন একটি পূজা যার একটা দারুণ তাৎপর্য রয়েছে। পুজোতে আর্টশিল্পী থেকে শুরু করে মৃৎশিল্পী সকল শ্রেণির পেশাগত মানুষেরা কাজের একটা সংস্থান পান। একটা দুর্গাপূজা পরিচালনা করার পিছনে জড়িয়ে থাকে অজস্র মানুষের রক্ত-ঘাম।
দুর্গাপূজার প্রতিটি দিন আমরা অনেকেই প্রাণভরে উপভোগ করি। অথচ যেসব আর্ত পীড়িত মানুষেরা যারা আধপেটা খেয়ে দিনযাপন করে। তারা বেশিরভাগ সময়ই বঞ্চিত থাকে পুজোর আনন্দ থেকে। তাদের কথা কেউ ভাবেনা। তারা আমাদের অজান্তেই চাপা পড়ে যায়। পুজোতে আনন্দ করার অধিকার তো তাদেরও রয়েছে। তারাও তো রক্তমাংসের মানুষ।
পুজোতে কেবল ধনী বা মধ্যবিত্তরাই আনন্দ করবে আর তাদের আনন্দ নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শ্রেণির মানুষের চোখে কেবল ধূলো হয়ে জমে থাকবে এমনতো হয়না। পুজোতে সকলেরই অধিকার রয়েছে আনন্দ করবার। তাই পুজোর মুখে গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর বৃষ্টিস্নাত শরতের সুন্দর সকালে 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি' আশিটি স্কুল পড়ুয়াদের হাতে তুলে দিলো পুজোর নতুন জামা, পড়াশুনোর জন্য খাতা-কলম এবং ছোট্ট একটু টিফিন।
পুজোর আনন্দ মধ্যমগ্রাম রেলপাড় ও হুমায়ুইপুর অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র এমন মহৎ উদ্যোগে।
কেবল মধ্যমগ্রাম রেলপাড় বা হুমাইপুর অঞ্চলই নয়, 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি' পুজোতে স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মুখ হাসিতে ভরিয়ে দিতে পৌঁছে গিয়েছিল সূদুর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পাঁচটি প্রত্যন্ত গ্রাম বাবুপুকুর, সনপুর, সন্ধিপুর, ফুলবনি ও করনচা গ্রামে। প্রায় ১৭৬ জন স্কুল পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুজোর নতুন জামা, পড়াশুনোর জন্য খাতা-কলম ও টিফিন।
মানুষের সুখ-দুঃখের কথা ভেবে যারা এমন কাজ আজও করে চলেছে তাদের সাধুবাদ জানাই। মহান এই উদ্যোগ নিতে পেরে অফুরান ভালোবাসা ও পরম তৃপ্তি অনুভব করেছে 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'। তাদের বক্তব্য- 'আনন্দই শক্তি, আনন্দই তৃপ্তি, আনন্দ এক ভালোবাসার জাল যা আত্মার আত্মীয় করে। সেই নিবিড় আনন্দ আর ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের একমুখ হাসিই আমাদের পরম প্রাপ্তি।'
মহিলা কবি কুসুমকুমারী দাশ তাঁর আদর্শ ছেলে কবিতায় লিখেছেন 'আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে? মুখে হাসি কাজে বল, তেজে ভরা মন। মানুষ হইতে হবে এই যার পণ'। কবি দেশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এমনই একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। 'মধ্যমগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র মতো অসংখ্য গোষ্ঠী যদি মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে একদিন হয়তো সত্য হবে কবির এই সুন্দর কবিতাখানি।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment