Header Ads

মাস্টারদা সূর্য সেনের শেষ চিঠি


মাস্টারদা সূর্য সেন বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটাই- স্বাধীন ভারত।সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায় "কে জানতো যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপি অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ!কে জানতো সেই শীর্ন বাহু ও ততোধিক শীর্ন পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে-তার সমস্ত ক্ষমতাকে উপহাস করে বৎসরের পর বৎসর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?"


১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলে ফাঁসি হয় মাস্টারদা সূর্য সেনের।বলা ভালতাঁর অচেতন দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে ফাঁসি দেওয়া হয়।তার আগে বন্দি অবস্থায় সূর্য সেনের উপরে অকথ্য অত্যাচার করা হয়।হাতুড়ি মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল সব দাঁত।উপড়ে নেওয়া হয়েছিল প্রত্যেকটা নখ।মেরে মেরে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল দেহের সব জয়েন্ট।ফাঁসির পর কোনও শেষকৃত্যও হয়নি।ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরো বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।

বিক্ষত সোনালী স্বপ্নের সেই পাথর বুকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের তলায় ঘুমিয়ে আছেন সূর্য সেন।সে প্রস্তরের উপর গড়ে উঠেছে স্বাধীন ভারতের ভিত্তি।

মাস্টারদার লেখা শেষ চিঠি রইল আপনাদের জন্যে।

"...আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা।ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে।মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে।মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে।এই তো সাধনার সময়।বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এই তো সময়। ফেলে আসা দিনগুলোকেও স্মরণ করার এই তো সময়।কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি।তোমরা আমার ভাইবোনেরা, তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিএ্যহীন আমার এই জীবনের একঘেঁয়েমিকে ভেঙ্গে দেয়।উৎসাহ দেয় আমাকে।এই সুন্দর পরম মুহুর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহুর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করছিল।জীবনভর উৎসাহ ভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মত সেই স্বপ্নের পিছনে আমি ছুটেছি।জানিনা কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে।লক্ষ্যে পৌছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মত তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি।আমার বন্ধু্রা-এগিয়ে চল। এগিয়ে চল-কখনো পিছিয়ে যেও না।পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে।ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুন।কখনো হতাশ হয়ো না।সাফল্য আমাদের হবেই।ভগবান তোমাদের আশির্বাদ করুন।১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোন দিনই ভুলে যেও না।জালালাবাদ, জুলধা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো।ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।আমাদের সংগঠনে বিভেদ না আসে-এই আমার একান্ত আবেদন।যারা কারাগারের ভিতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশির্বাদ।বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে।বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।বন্দে মাতরম্‌।"




No comments