Header Ads

সপরিবারে দেখে আসুন নতুন বাংলা ছবি 'পরিণীতা'

রোমান্টিক গল্প তো অনেক রকমই হয় কিন্তু এরকম রোমান্টিক গল্প সচরাচর দেখা যায়না। আপনারা নিশ্চয় আন্দাজ করতে পারছেন যে আমি কীসের কথা বলছি। আমি এখন নতুন বাংলা ছবি 'পরিণীতা'র কথা বলতে চলেছি। পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস রাজ চক্রবর্তী এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে রাজ্যজুড়ে মুক্তি পেয়েছে 'পরিণীতা'।


ইন্ডাস্ট্রির বাইরের লোকেদের ধারণা যে পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর সকল ছবিই রিমেক। যা কিন্তু একেবারেই ভুল তিনি বেশ কিছু অরিজিনাল ছবিও নির্মাণ করেছেন। তার পরিচালিত ছবি 'প্রলয়', 'কাঠমুন্ডু', 'বলো দুগ্গা মাঈকি', 'চ্যাম্প', 'অ্যাডভেঞ্চার অব জোজো', 'শেষ থেকে শুরু' প্রভৃতি ছবিগুলো মৌলিক ধারার ছবি৷ তিনি অসংখ্য রিমেক ছবি বানালেও সেই ছবি হয় একদম কনটেন্ট বেসড। তিনি রিমেক ছবি বানিয়ে থাকলেও তার মধ্যে দুর্দান্ত পরিচালনা করার শক্তি রয়েছে। পরিচালক হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফল একজন পরিচালক। রিমেকের জন্য অনেকে তাকে নিয়ে অনেক ট্রোল করে থাকেন যেটা একদমই ঠিক নয়। কারণ পরিচালকের কাজ হলো ফিল্ম বানানো। সেটা রিমেক বা অরিজিনাল যাইহোক না কেন তা তো সিনেমাই। তাই রিমেক বা মৌলিকের দ্বন্দ্বে যাচ্ছিনা। 

এবার আসল কথায় আসা যাক। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বর্তমানে নিজেকে ভেঙে গড়ে নিজের মতো করে তৈরি করছেন। তার সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'পরিণীতা' দিয়ে তিনি বিরাজ করেছেন নতুন ভাবে৷ তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে অল্প বাজেটে নির্মাণ করেছেন 'পরিণীতা'। এ ছবি কোনো সাউথ বা বিদেশি ছবির রিমেক নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ মৌলিক ধারার ছবি। ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী, শুভশ্রী গাঙ্গুলি, আদৃত রায়, গৌরব চক্রবর্তী ও অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। 


এ ছবির গল্পে রয়েছে প্রেম, দুঃখ, অভিমান ও রিভেঞ্জ। ছবির মুখ্য চরিত্র ঋত্বিক চক্রবর্তী ও শুভশ্রী গাঙ্গুলি। ছবিতে ঋত্বিক চক্রবর্তীর চরিত্রের নাম বাবাই আর শুভশ্রীর চরিত্রের নাম মেহুল। বাবাইয়ের টিউশন ছাত্রী হলো পাড়ার প্রতিবেশী একটি মেয়ে যার নাম মেহুল। সে তার প্রিয় বাবাইদাকে অত্যন্ত ভালোবাসে। অথচ কখনও তার মনের কথা বাবাইদাকে জানাতে পারেনি। টিউশনের মধ্যে বাবাই ও মেহুলের খুঁনসুটি লেগেই থাকে৷ মেহুল একজন দুষ্টু-মিষ্টি মেয়ে। পড়াশুনোতে মন নেই। ক্লাসে ফেল করে। বাড়ির ছোটো ভাইয়ের সাথে মারামারি করে৷ তার বন্ধুরা তাকে বারবার জ্বালাতন করতে থাকে তার বাবাইদাকে মনের কথা জানানোর জন্য। মেহুল একদিন বাবাইদাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দোলের এক সকালে আবিরের প্যাকেটে সিঁদুর ঢেলে নেয়। সে ছুটে যায় বাবাইদার কাছে। বাবাইদাও তাকে ঠিক করেছিলেন সারপ্রাইজ দেবে। মেহুল ছাদে এসে অপেক্ষা করতে থাকে বাবাইদার জন্য। একটু পরে বাবাইদা রঙ মেখে মেহুলের সামনে দাঁড়ায়। মেহুল আবির প্যাকেট হাতে বাবাইদার সম্মুখে উপস্থিত হয়। তারপর বাবাইদা তার সারপ্রাইজটা দেয়। বাবাইদা তার প্রেমিকা সায়ন্তিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। তারপর বাবাইদা সিঁদুর মেশানো আবির মেহুলের মাথায় ও মুখে লাগিয়ে দেয়। বাবাইয়ের কাছে এটা মেহুলের জন্য সারপ্রাইজ হলেও মেহুলের কাছে ভারী কষ্টের। এ দৃশ্য দেখে মেহুল ক্রন্দনরত চোখে দৌড়ে নিজের বাড়ি চলে যায়। মেহুল বাবাইদার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে পড়াশুনোতে মন দেয়। রাস্তায় একদিন বাবাইদার সাথে দেখা হয় মেহুলের। সে মেহুলকে একটি তার হাতে লেখা চিঠি দেয়। যেটা আসলে চিঠি নয়, একটা সুইসাইড নোট। মেহুল পড়াশুনোতে মন দিয়ে এইচএস পরীক্ষাতে ছিয়াশি শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করে। আর তার রেজাল্টের দিনই গলায় দড়ির ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে বাবাই। এখান থেকেই ছবি মোড় নেয় অন্য একটা রূপে। 

মেহুল বাবাইয়ের লেখা চিঠি পড়ে সব জানতে পারে। তারপর শুরু হয় মেহুলের বেঁচে থাকার কঠিনতম লড়াই। বাবাইয়ের আত্মহত্যার প্রতিশোধ নিতে মেহুল শুরু করে নতুন জীবন। তারপর কী হয়? সেটা আপনারা যারা ছবিটি এখনও দেখেননি তারা হলে গেলেই বুঝতে পারবেন। এ ছবি সপরিবারে দেখার মতো ছবি। কোনো অংশই এ ছবির কাউকে নিরাশ করেনা৷ খুবই গভীর একটা ছবি। ফ্যামিলি ড্রামা থেকে গল্পের শুরু হলেও শেষ হয় থ্রিলার দিয়ে। 

ছবিতে সবার নজর কেড়েছে শুভশ্রীর আনকোরা অভিনয়।ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রীর অভিনয় করা তার যা বয়স তাতে বেশ কঠিন। তার অভিনয় দেখে আপনাদের তাকে ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রীই মনে হবে। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে তিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মেহুলকে। আর ঋত্বিক চক্রবর্তী, গৌরব এদের অভিনয় নিয়ে না লিখলেও চলে। কারণ তারা বরাবরই দূর্দান্ত অভিনয় করেন। কথা বলতে হবে আদৃতকে নিয়ে। এটা আদৃতের অভিনীত তৃতীয় ছবি। তিনিও যথেষ্ট সাবলীল অভিনয় করেছেন এ ছবিতে। 

ছবির অন্যতম মাইলস্টোন হলো ছবির হৃদয় তোলপাড় করা দুটো গান 'তোমাকে' এবং 'সেই তুমি'। ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ক প্রভ মুখার্জি। 'তোমাকে' শিরোনামের গানটি গাওয়া হয়েছে মেল ও ফিমেল দুই ভার্সনে। মেল ভার্সনটি গেয়েছেন অর্ক প্রভ মুখার্জি ও ফিমেল ভার্সনটি গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল। আর 'সেই তুমি' শিরোনামের গানটিও গেয়েছেন অর্ক প্রভ মুখার্জি। 


ছবির নির্মাণশৈলী একদম নিখুঁত। রাজ চক্রবর্তী সমস্ত পুরানো হিসেব মিটিয়ে আবারো দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিলেন। ছবিটি ইতিমধ্যেই বক্স অফিসে দেখে নিয়েছে লাভের মুখ৷ দর্শকেরা বেশ ভালো রেসপন্স দিচ্ছে ছবিটিকে৷ কাজেই যারা ছবিটি দেখতে এখনও দেখেননি তারা আজই দেখে আসুন এ ছবি। যা দেখলে মনে হবে এটা হয়তো কোনো একটা বাস্তবের কাহিনী। ছবি শেষ হওয়ার পরও তার রেস থাকবে অনেকদিন৷ সবশেষে সাধুবাদ জানাতেই হয় প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার ও অর্নব ভৌমিককে এতো সুন্দর একটা গল্প লেখার জন্য। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments