Header Ads

'আমি চাই সারাজীবন অভিনয় করেই জীবনটা শেষ হোক'। অভিনেতা সাহেব হালদারের সাক্ষাৎকার।

রাত ১০ টা তখন। সরাসরি সাক্ষাৎকারে একটা ফোনের বিপবিপ শব্দ। ফোনটা তুলে একটা মৃদু হাসি। নানা অজানা কথা আর হাসিঠাট্টা তে এক জমজমাটি আড্ডা। জীবনের নানা আঁকাবাঁকা পথের গল্প আমাদের নিজের মুখে শোনালেন তিনি। সাক্ষী রইলাম আমরা। তার কিছু অংশ আপনাদের জন্য।

'মাহিয়া', 'তৃতীয়  অধ্যায়', 'পেইন্টিং ইন দ্য ডার্ক', 'কমলা', 'আইসাইট', 'তান্ত্রিক', 'তিন এর নামতা' ও 'জেনারেশন ওয়াই' চলচ্চিত্র খ্যাত অভিনেতা সাহেব হালদারের একটি খোলামেলা সাক্ষাৎকার।

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি 'মাহিয়া', 'তৃতীয় অধ্যায়', 'পেইন্টিং ইন দ্য ডার্ক', 'তান্ত্রিক', 'কমলা','আইসাইট', 'জেনারেশন ওয়াই' এর মতো বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। এই ছবিগুলোতে অভিনয় করে আপনার কেমন লাগলো? 

সাহেব হালদার- প্রতিটি অভিনেতার কাছে ছবিতে অভিনয় করা একটা গ্রেট ফ্যাক্টর৷ যে ছবিগুলোতে আমার অলরেডি শ্যুটিং হয়ে গেছে। 'তৃতীয় অধ্যায়' সবাই দেখেছেন। 'পেইন্টিং ইন দ্য ডার্ক' রিলিজের পথে৷ প্রতিটা আলাদা আলাদা পরিচালকের সাথে কাজ করা মানে আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। সেক্ষেত্রে ছবির রিলিজের পরে অডিয়েন্সের কাছ থেকে একটা ফিডব্যাক পাওয়া৷ একজন অভিনেতার কাছে তো এটাই সবচেয়ে বড়ো৷ যেহেতু অভিনয় করা প্রতিটি অভিনেতার কাছে টার্গেট থাকে তো প্রতিটি ছবি থেকে শেখা যায়৷ এই যে ছবিগুলোতে অভিনয় করলাম। একজন অভিনেতাকে তৈরি করার পিছনে এই ছবিগুলো হলো পিলার। প্রতিটা আলাদা আলাদা জোনারের ছবিতে কাজ। আলাদা আলাদা ডিরেক্টরের সাথে কাজ৷ ফলে একটা অধিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় একজন অভিনেতার কাছে।   


লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার তো 'ঘুড়িগাছ' নামে একটি নতুন ছবি আসছে? এ সম্পর্কে যদি দু-চার কথা বলেন?  

সাহেব হালদার- আমার 'ঘুড়িগাছ' বলে একটা নতুন ছবি আসছে যেটার ইতিমধ্যেই শ্যুটিং হয়ে গেছে। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও কমপ্লিট৷ আমার মনে হয় আমি যখন মেগা সিরিয়াল করতাম তারপর আমি যখন ছবিতে আসার প্ল্যান করলাম তখন ছবিতে অভিনয় করা আমার একটা নিজের মত ছিল। প্রতিটি অভিনেতার তো একটা পছন্দ থাকে৷ আমার মনে হয়েছে যে প্রতিটি ছবিতে মানুষ যেন আমাকে একই চরিত্রে না দেখে৷ প্রতিটি ছবিতে যেন আলাদা আলাদা সেট থাকে। সেটা হয়তো আপনারা দেখেছেন। 'মাহিয়া' যেটা একটা পুরো কমার্শিয়াল ছবি ছিল যেখানে আমি একটা ইন্সপেক্টরের রোল প্লে করেছিলাম৷ 'তৃতীয় অধ্যায়' ছবিতে আলাদা ধরনের চরিত্র। চরিত্রের নাম সেলিম৷ এমনকি 'পেইন্টিং ইন দ্য ডার্ক' এ আলাদা রকমের চরিত্র৷ তারপর যেটা ফেস্টিভ্যালে ঘুরছে মানে আইসাইট সেটাও আলাদা জোনারের চরিত্র। 'ঘুড়িগাছ' এও কিন্তু আলাদা জোনারের চরিত্র। প্রতিটা ছবির ক্ষেত্রে আমি চেয়েছি আলাদা আলাদা সেট থাক৷ যাতে একই ধরণের চরিত্র দুটোতে না হয়৷ আমি যেহেতু একজন অভিনেত৷ একজন অভিনেতার চরিত্রের মধ্যে স্বাদ থাকলে সেটা ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারলে দর্শকদের ভালো লাগবে৷ তবে আমি যতগুলো কাজ করলাম তার থেকেও 'ঘুড়িগাছ' এর চরিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদ৷ পুরোপুরি একটা আলাদা ধরনের চরিত্র৷    
                                                   
লিটারেসি প্যারাডাইস- ঘুড়িগাছ ছাড়াও আপনার বাকী আর কী কী কাজ আসতে চলেছে? 

সাহেব হালদার- কয়েকটা কাজের কথা ফাইনাল হয়েছে। পুজোর পরে একটা ফিচার ফিল্মের শ্যুটিং শুরু হবে। তবে নাম এখনো ঘোষনা করা হয়নি। এছাড়া দুটো স্বল্প সময়ের ছবির কাজ চলছে এখন। অক্টোবরে একটা অ্যালবামে কাজের কথা হয়েছে।

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি ইংলিশে এম.এ পড়ার পরেও অভিনয়কেই কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন? 

সাহেব হালদার- (মৃদু হেসে) প্রথমে বলবো এটা আগে থেকে নেশা ছিল বলে অভিনয়টা পেশা হয়েছে। প্রতিটা মানুষের ইচ্ছেশক্তি বলে তো থাকে৷ সকলের মধ্যেই একটা ইচ্ছে থাকে৷ আমার মধ্যেও সেটা ছিল হয়তো৷ আমি তো বেসিক্যালি একজন গ্রামের ছেলে৷ এমনকি আমি এমন একটা গ্রামের। যখন আমি পড়াশুনা করতাম, যখন মাধ্যমিক দিয়েছিলাম তখন ইলেকট্রিসিটিও যায়নি৷ সেক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় অভিনয়টার প্রতি ভালোলাগা থাকতো৷ স্কুলে একটা হয়তো নাটক হতো। সেই সময়ও একটা ভালো লাগা থাকতো। কিন্তু আমাদের টলিউড ইন্ডাস্ট্রি আর গ্রাম এ দুটোর মধ্যে তো অনেক পার্থক্য। নিজের মধ্যে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাটা ছিল। তারপর কলকাতাতে যখন এলাম। কলেজসূত্রে যখন ভর্তি হলাম। সেখান থেকে অভিনয়ে আসা ও থিয়েটারে জয়েন করা। যেখান থেকে আস্তে আস্তে এই পথচলা অভিনয় জগতে। তবে আমি বলবো অভিনয়টা পেশা হয়েছে ছোটো থেকে নেশা ছিল বলেই।                                    
লিটারেসি প্যারাডাইস- কয়েকদিন আগে আপনি কলকাতা প্রেস ক্লাবে একজন ভার্সাটাইল অ্যাক্টর এর সম্মান পেলেন। কেমন লাগছে আপনার একজন অভিনেতা হিসাবে?
   
সাহেব হালদার- এই সম্মান একজন অভিনেতার কাছে পরম পাওনা। প্রতিটি ছবিতে নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা থাকে। আমি চাই মানুষ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনেতা সাহেব হালদার কে পাক। আর এই সম্মানের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাবো কলকাতা প্রেস ক্লাব এবং নিউস বেঙ্গল কে।  


লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি সূদুর গ্রাম থেকে উঠে এসে আজ কলকাতায় এতো ভালো কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এর পিছনের গল্পটা কী জানতে পারি?

সাহেব হালদার- আমার মনে হয় প্রতিটি অভিনেতা-অভিনেত্রীর যারা আজকে প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। প্রত্যেকটা অভিনেতার পিছনে একটা করে জীবনের ইতিহাস থাকে৷ সেটা বিভিন্ন অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের আলাদা আলাদা হয়। তেমন হয়তো ছিল আমারও৷ গ্রামের ছেলে যে কলকাতায় আসে। সেখান থেকে অভিনয় জগতে আসা। তার ভালো লাগা। তবে একটা কথা বলি যে ইন্ডাস্ট্রি না কাউকে সহজে কোনোদিন জায়গা দেয়না। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গাটা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। মানে আমার এমনও দিন গেছে যে আর্টিস্ট কার্ড না থাকায় ফিল্ম স্টুডিওর সিকিউরিটি আমাকে ঢুকতে দেয়নি৷ (হালকা ভাবে হেসে) এটা আমারা লাইফেও ঘটে গেছে৷ সেখান থেকে মনের মধ্যে জেদ, মনের মধ্যে ইচ্ছে থেকে অভিনয়টাকে রক্তের মধ্যে মিশিয়ে নেওয়া। তার জন্যই এতো লড়াই৷ একজন গ্রামের ছেলে তো তখন। আমি যখন কলকাতায় আসি কোনো ইন্ডাস্ট্রির কিছুই জানতাম না৷ আমার ব্যাকবোন বলতে বাড়ির কেউ ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত ছিলনা। আমি পুরো একদম গ্রামের ছেলে৷ আগেও বললাম যে গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটিও ছিলনা। সেরকম একটা গ্রামের ছেলে। টিউবওয়েলের জল খেয়ে মানুষ হয়েছি৷ আমি ইন্ডাস্ট্রির কিছুই জানতাম না, কোথায় কী শ্যুটিং হতো এক্কেবারে কিছুই জানতাম না৷ এখানে-ওখানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতাম৷ তারপর আস্তে আস্তে থিয়েটারে জয়েন করলাম৷ তারপর মেগা সিরিয়ালে একদিনের ছোটো একটা কাজ জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে। তারপর আস্তে আস্তে সব হলো ৷                                                 
লিটারেসি প্যারাডাইস- বাংলা চলচ্চিত্রকে নিয়ে কীরকম স্বপ্ন দেখেন?

সাহেব হালদার- প্রথমেই আমি বলবো যে আমি একজন বাঙালি৷ বাংলা সিনেমাই আমার কাছে সব। তা বলে এটা নয় যে আমি অন্য ইন্ডাস্ট্রিকে ছোটো বা খারাপ বলছি৷ প্রত্যেকটা ইন্ডাস্ট্রি আমার কাছে প্রিয়। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারেন আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমি চাই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ভালো ভালো ছবি পাক। ভালো ভালো ট্যালেন্ট পাক৷ ভালো ভালো ডিরেক্টর পাক৷ ভালো অভিনেতা- অভিনেত্রী পাক যাতে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি যেমন কাজ করছে সেটা যেন আমারও ইন্ডাস্ট্রি পারে৷ আমাদের বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যেন কোনোভাবেই পিছে বা পড়ে৷ আমাদের বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এখন প্রচুর কাজ হচ্ছে। প্রচুর ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। ছবিগুলো ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে। অন্যান্য ভাষার ছবির সাথে লড়াইয়ে টেক্কা দিয়ে চলছে। আমি আরো ভালো ভালো বাংলা ছবি তৈরি হোক৷ এটার জন্য আমরা যেমন রয়েছি। আমরা চাইব দর্শকরাও থাকুক। আমরা চাইবো আপনারাও থাকুন। কারণ আপনারাই তো আমাদের কাজগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেন আপনাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে। আমরা যেমন রয়েছি, আপনারাও থাকুন৷ প্রতিটি মানুষকে চাই বাংলা ছবির পাশে থাকার জন্য। প্রত্যেকটা মানুষকে বলবো যে হলে গিয়ে বাংলা ছবিটা দেখতে।   


                                     
লিটারেসি প্যারাডাইস- পুষ্পরেখা ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে বিশেষভাবে জায়গা দিয়েছে। আপনি তাদের কাছে কতটা কৃতজ্ঞ?

সাহেব হালদার- বলতে পারেন পুষ্পরেখা ইন্টারন্যাশনাল আমার জীবনের ব্যাকবোন। একজন ছেলেকে গ্রাসরুট থেকে তুলে এনে জায়গা দিয়েছে। আমার সমস্ত সম্মান দিয়েছে। স্বপ্ন গুলোকে পূরন করার পথ দেখিয়েছে। অনেক অনেক ভালবাসা জানাই ভিভেক স্যার, রেখা ম্যাডাম, অভিজিৎ দা, প্রিয় সুরোজিৎ কে।

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাহেব হালদার- দেখুন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো কেউ তৈরি করে রাখতে পারেনা কারণ ভবিষ্যতের কথা আমরা কেউ বলতে পারিনা। তবে একটা কথা বলি অভিনয়ে আছি, অভিনয়ে থাকতে চাই৷ আমি চাই মানুষ ভালো ছবি পাক, ভালো বাংলা ছবি পাক৷ অন্যান্য ভাষারও ভালো ছবি পাক৷ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আছি অন্যান্য ভাষার ইন্ডাস্ট্রিতেও  থাকতে চাই। আমি চাই সারাজীবন অভিনয় করেই জীবনটা শেষ হোক।  
           
প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments