অগ্নিযুগের বিস্মৃত দেশপ্রেমিক মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নীরেন দাশগুপ্ত
বালেশ্বেরের জঙ্গলে
বাঘাযতীনের সঙ্গী ছিলেন মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত, চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী,নীরেন দাশগুপ্ত, জ্যোতিষ পাল।সকলের
কাছেই বাঘাযতীনের একটাই পরিচয় সকলেই কাছেই তিনি ছিলেন দাদা। সেই দাদা যার এক ডাকে সবকিছু করতে তৈরী মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত,
চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী,নীরেন দাশগুপ্ত, জ্যোতিষ পাল।
মনোরঞ্জন সেনগুপ্তের জন্ম
১৮৯৬ সালে। হলধর সেনগুপ্তের মেজ ছেলে
তিনি। দেখতে সুন্দর , অমায়িক ব্যবহার। ছোটবেলা থেকেই সকলের পছন্দের ছিলেন মনোরঞ্জন।মাদারীপুর
ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন ১৯১২ সালে। আটমাস জেলে ছিলেন।
কষ্টসহিষ্ণুতায় ছিলেন
অদ্বিতীয়।ওই ছোট বয়সেই চার পয়সার মুড়ি খেয়ে ৭০-৭২ মাইল পথ হেঁটেছিলেন একবার।জেল
থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসেন বিপ্লবী অতুলকৃষ্ণ ঘোষের সান্নিধ্যে।এরপর যোগাযোগ হয়
বাঘাযতীনের সাথে।সেই সময় কেউ তাঁকে বোঝাতে এসেছিল সামান্য শক্তি নিয়ে ব্রিটিশদের
বিরুদ্ধে লড়াই বুদ্ধিমানের নয়।
মনোরঞ্জন বলেছিলেন-"আমি
চিনি শুধু দাদা আর গদা। নেমন্তন্ন খেতে এসেছি, খেয়ে যাব।যার খুশি সে পাতা গুনুক না।"
উল্লেখ্য বুড়িবালামের অমর
শহীদদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট।
নীরেন দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ
করেছিলেন ১৮৯২ সালে।তাঁর বাবা ছিলেন মাদারীপুরের খৈয়ারডাঙার কবিরাজ ললিতমোহন
দাসগুপ্ত।বাবার কাছ থেকে শিক্ষা পান শরীরই আসল সম্পদ।তাই ছোট থেকেই তিনি নজর
দিয়েছিলেন শরীর গঠনে।ছিলেন অমানুষিক শক্তির অধিকারী।খেলাধুলায় পারদর্শী।কম কথা
বললেও ছিলেন সকলের প্রিয়।মাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন।আর শ্রদ্ধা করতেন দেশকে এবং
দেশের মানুষকে।
নীরেন আর মনোরঞ্জন স্কুলে
প্রথম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।ভয়ডর নীরেনের কোনোদিন
ছিল না।দোতলার ছাদের কার্নিশ থেকে নীচে লাফ দিতেন ছোটবেলায়।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর
আসেন বিপ্লবী অতুলকৃষ্ণ ঘোষের সান্নিধ্যে।এরপর যোগাযোগ হয় বাঘাযতীনের সাথে।তারপর
থেকেই ছিলেন দাদার ছায়াসঙ্গী।বেলেঘাটার ডাকাতির কেসে তাঁর নাম হুলিয়া বের হয়।
বুড়িবালামের যুদ্ধের পর
বাঘাযতীন কিলবি এবং টেগার্টকে বলেছিলেন-আমার সঙ্গে এই ছেলেরা নিরাপরাধ। যা কিছু
ঘটেছে তাঁর জন্যে আমি দায়ী।একটু দেখবেন এদের উপর যেন অবিচার না হয়।
কিন্তু বিচারে ফাঁসি হয়েছিল
মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নীরেন দাশগুপ্তর।১৯১৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বালেশ্বরের জেলে
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান নাম লেখালেন এই দুই বীর বাঙালি যুবক।
ফাঁসির
মঞ্চে ওঠার আগে বলেছিলেন-"ভারতে ইংরেজ শাসন বন্ধ হোক।ডাউন উইথ দি ব্রিটিশ
রাজ্ ইন ইন্ডিয়া।"
তথ্য-বাঘাযতীন(লেখক-পৃথীন্দ্রনাথ
মুখোপাধ্যায়)
Post a Comment