গায়িকা দেবলীনা সিংহ রায়ের অনবদ্য প্রয়াস 'আমার আঁকাবাঁকা লোকটিকে'
ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি হলো বাউল। যে গানের মধ্যে একটা সৃজনশীলতার
বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। বাউল গান মানুষের জীবনের কথা বলে । দেহতত্ত্ব, প্রেম ও সমাজের কথা বারংবার উঠে আসে বাউল গানে।
প্রাপ্তবয়স্ক থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক সব শ্রেণির মানুষেরাই পছন্দ করেন বাউল গান শুনতে।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে বাউলের জুড়ি মেলা ভার।
বাউল গানের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত সত্য লুকিয়ে থাকে তা হয়তো অন্য কোনো গানে খুব
একটা বেশি পাওয়া যায়না। লালন ফকির থেকে শুরু করে কামাল উদ্দিন, রশিদ উদ্দিন, শাহ আবদুল করিম,মুকুন্দ দাস, গোষ্ঠ গোপাল দাস, পূর্ণদাস বাউল প্রমুখদের
হাত ধরে বাংলা বাউল গানের নবজাগরণ ঘটে।
বাউল গান নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পী মনোমুগ্ধকর কাজ করে চলেছেন। যা বাউল
গানকে নতুন রুপ দিচ্ছে। কেউ কেউ পুরানো বাউলকে নবরূপে রূপান্তরকরণ করছেন কেউবা
নতুন সুর আবিষ্কার করে বিভিন্ন বাউল গান নির্মাণ করছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লালন পুরস্কার প্রাপ্ত বাউল সাধক সনাতন দাসের বিখ্যাত বাউল
'আমার আঁকাবাঁকা লোকটিকে' গানের রিক্রিয়েট ভার্সন
মুক্তি পেল গত ২রা আগস্ট ফোক স্টুডিও কলকাতা ইউটিউব চ্যানেলে। যে গানে উঠে এসেছে
একজন একাকী বিদূষী নারীর নিদারুণ যন্ত্রণা। গানের চিত্রায়ণে যে গল্প তুলে ধরা হয়েছে
তা হলো একজন অবলা নারী যার স্বামী একজন ঘরকানা শালিক যার সংসারে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে
নেই। নিজের স্ত্রীকে একা ফেলে রেখে কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। স্বামীর গভীর
অপেক্ষায় অস্থির ভাবে দিন কাটতে থাকে তার। এভাবেই এগোতে থাকে গানটির চিত্রায়িত
গল্প।
'আমার আঁকাবাঁকা লোকটিকে' গানটি গেয়েছেন দেবলীনা সিংহ রায়। যার কণ্ঠের জাদুতে
কিছুক্ষণের জন্য আপনিও হয়ে উঠতে পারেন অস্থির। গায়িকা দেবলীনা সিংহ রায়ের অপূর্ব
গলার সুরে নতুন মাত্রা পেয়েছে গানটি। ইন্দ্রজিৎ দে ওরফে ইন্দ্রের হাতের ছোঁয়ায়
তৈরি হয়েছে এ গানের ডিজাইন ও অ্যারেঞ্জমেন্ট। গানে এসরাজ পরিবেশন করেছেন আলো
চক্রবর্তী। গানের ভাবনা অনসূয়া খাসনবীশের মস্তিষ্কপ্রসূত। সৃঞ্জয় সিনহা রায়ের
চোখধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি ও অনবদ্য সম্পাদনায় অনন্য রূপ পেয়েছে গানটির ভিডিও
চিত্র।
শুধু তাই নয় গানের ভিডিও চিত্রে রয়েছে চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনেত্রী মেহুলী
সরকারের নজরকাড়া নির্বাক অভিনয়। এছাড়াও দ্বীব্যায়নঞ্জনা দাসের মনোগ্রাহী নৃত্য
পরিবেশনাও জমজমাট।
বাউল সাধক সনাতন দাস বাউল গানের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল।
সাবলীল কণ্ঠস্বর ও অগাধ আতিথেয়তায় তিনি সৃষ্টি করেছিলেন একের পর এক মিষ্টি বাউল
গান। তাঁর গানে যেন খাঁচার পাখি বনে ফিরে যেত। তাঁর আবিষ্কৃত 'আমার আঁকাবাঁকা লোকটিকে' গানটি দেবলীনা সিংহ
রায়দের মাধ্যমে যেভাবে নবভাবে পুনঃস্করণ হলো তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো সবচেয়ে বেশি
খুশী হতেন। যাইহোক বাউল সাধক সনাতন দাসের চোখে নতুন করে জীবনদর্শন করতে হলে
দর্শকদের আজই দেখতে হবে এই গান।
প্রতিবেদন-সুমিত দে
Post a Comment