গুপ্তধনের সন্ধানে ফিল্ম রিভিউ
ফিল্ম রিভিউ আমি সচরাচর লিখিনা। এই প্রথমবার কোনো ছবির রিভিউ লিখতে চলেছি।ট্রেজার হান্ট নিয়ে অনেকদিন পর আজ একটা অসাধারণ বাংলা ছবি দেখলাম। ছবির নাম গুপ্তধনের সন্ধানে। ছবির কাহিনী লিখেছেন শুভেন্দু দাসমুন্সি ও ধ্রুব বন্দোপাধ্যায়। ছবিটি পরিচালনা করেছেন নবাগত পরিচালক ধ্রুব বন্দোপাধ্যায়। এটি একটি রহস্যমূলক-অভিযান ও অ্যাকশনধর্মী ছবি।
প্রথমে ছবির গল্পের কথা বলা যাক। ছবিটি শুরু হয় শাহজাহানের মৃত্যু ও তাঁর পুত্র
ঔরঙ্গজেবের সিংহাসনের দখলের ইতিহাস নিয়ে। শাহজাহান পুত্র সুজা বিপুল পরিমাণ
গুপ্তধন লুকিয়ে রাখেন বাংলার মণিকান্তপুরে৷ যে গ্রামটি ছিল গল্পের মূল চরিত্র
সোনাদা ওরফে সূবর্ণ সেনের ভাইপো আবিরের মামাবাড়ি। সোনাদা এখানে গোয়েন্দা নন। দীর্ঘ
সাত বছর অক্সর্ফোডে ইতিহাসের অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি দেশে ফেরেন।
সোনাদাকে খানিকটা
নিজের আদর্শ হিসাবে দেখে আবির। সোনাদা আর আবির মণিকান্তপুরে যায়। সেখানে থাকে
আবিরের ছেলেবেলার বন্ধু ঝিনুক। ইতিহাস পাগল মানুষ সোনাদা সিংহরায় বাড়ির ইতিহাস
খুঁজতে গিয়ে রহস্যের গন্ধ পান। তারপর তাঁরা জড়িয়ে পড়েন ট্রেজার হান্ট অভিযানে।
এরপর বাকীটা আপনারা ছবিতে দেখবেন৷
এরপর ছবির অভিনয়,
চিত্রনাট্য, গ্রাফিক্স, ক্লাইম্যাক্স ও গানের কথা বলা যাক।
ছবিতে
সোনাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়, সোনাদার ভাইপো আবিরের চরিত্রে অর্জুন চক্রবর্তী,
আবিরের ছেলেবেলার বন্ধু
ঝিনুকের চরিত্রে ইশা সাহা, আবিরের বাবার
ভূমিকায় অরিন্দম শিল, ভিলেন চরিত্র
দষাননদার চরিত্রে রজতাভ দত্ত। এছাড়াও বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষ,
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের
মতো বিখ্যাত অভিনেতারা। সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন এ ছবিতে।
ছবির চোখধাঁধানো লোকেশন ও চিত্রনাট্য পুরো ছবি জুড়েই জমজমাট। গ্রাফিক্সও যথেষ্টই
উন্নতমানের। আবহসংগীতে বিক্রম ঘোষ তাঁর সেরাটা দিয়েছেন। আবহ সংগীতগুলো কেমন যেন
একটা সাসপেন্সে মাতিয়ে রাখে পুরো ছবিকে।
ছবির গল্প অনুযায়ী রাঙিয়ে দাও নামক
বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথ সংগীতটির ব্যবহার ছবিকে অনেক আকর্ষণীয় করে তোলে। এই ছবির
আশ্চর্য বিষয় হলো ক্লাইম্যাক্স সিন৷ যে সিনটি দেখলে আপনার হলিউড ছবি ন্যাশনাল
ট্রেজারের কথা পড়ে পড়বে। সাসপেন্স ও রহস্যের মিশেলে ভরা গুপ্তধনের সন্ধানে
সিনেমাটি বাঙালির মনে দাগ কাটার মতো।
সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানাতে ভরপুর এ ছবিটি দেখলে
মনে হবে এটি বাংলার সিনেমা, বাঙালির সিনেমা।
মাস্টারপিস ছবির তালিকায় এককথায় স্থান করে নিয়েছে এ ছবিটি। এখন অপেক্ষা এ ছবির
পরবর্তী অংশ দূর্গেশগড়ের গুপ্তধন ছবিটির জন্য। এ ছবি দেখলে আপনার বিশ্বাসই হবেনা
যে এটা ধ্রুব বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি।
লেখায়- সুমিত দে
Post a Comment