অগ্রহায়ণ মাসের গ্রামবাংলার একটি অন্যতম লৌকিক উৎসব হলো ইতুপূজা
লৌকিক পূজা পার্বণ বাঙালি জাতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রায় চার হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতির এগিয়ে চলার পথে নানান বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে বাঙালি এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন বিশ্বাসের মাধ্যমে বাঙালি পেয়েছে বাঁচার শক্তি। নবান্ন উৎসব, ইতু পূজা, ঘেঁটু পূজা, বাদনা পরব, ঝোড় পার্বণ, ভাদু পূজা, মনসা পূজা, পৌষ সংক্রান্তি বা বিভিন্ন ধরণের কৃষি-কেন্দ্রিক উৎসব হলো মানভূম অঞ্চলের অন্যতম উৎসব।
কৃষি-কেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো ইতুপূজা। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার শস্যবৃদ্ধি কামনায় এই লৌকিক উৎসব পালিত হয়। প্রতি রবিবার উপবাস রেখে এই পূজা করা হয় বলে একে অনেকেই সূর্যের পূজাও বলে থাকেন। যদিও এই পূজার রীতি বিশ্লেষণ করে এটিকে মাতৃদেবী রূপেই গণ্য করেন। যেহেতু বাঙালির বেশিরভাগ পূজাই মাতৃদেবীর পূজা তাই ইতুপূজাকে মাতৃদেবী বলেই মনে করেন অনেক গবেষকরা। বাংলার মেয়েরা এই দেবীকে শস্যের দেবী রূপেই পূজা করে থাকেন।
পুরুষতন্ত্রকে গ্রাস করে নারীত্বের মহিমাকীর্তন, শব শিবের বুকে দণ্ডায়মানা কালীর রূপ চিন্তনের প্রভাব যে বাংলার লোকসংস্কৃতিতেও কতটা প্রভাবশালীতার অন্যতম উদাহরণ এই ইতুপূজা।
একটি সুন্দর মাটির খোলাতে মাটি ভরে তার মধ্যে মান, কচু, কলমীলতা, হলুদ, আখ, শুষনি, নাড়ু, শিবের জটা, কাজললতা রেখে ফুলের মালা, ধূপ-দীপ-সিঁদুর প্রভৃতি পুজোর উপকরণ ও ফল-মিষ্টান্ন ও নবান্ন সহযোগে ইতু পূজা করা হয়।
বর্তমানে এই উৎসব অনেকটা কমে গেছে যদিও কৃষিকেন্দ্রিক বাংলার বহু জায়গায় এখনও এই উৎসবের রেওয়াজ আছে। এই লৌকিক উৎসব গুলো বাঙালি জীবনের অঙ্গ।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment