বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় নিজের বিধবা পুত্রবধূর বিয়ে দিলেন এক বাঙালি
সুতাহাটার অনন্তপুরের বাসিন্দা নকুল ঘাটি, যিনি পেশায় একজন পুলকার চালক। তিনি সমাজকে এক মহান বার্তা দিলেন। বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহের অনুপ্রেরণায় তিনি নিজের বিধবা পুত্রবধূর বিধবা বিবাহ দিলেন। সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। বিদ্যাসাগরের প্রচলিত বিধবা বিবাহের মতো এক যুগান্তকারী সামাজিক কাজকে উপযুক্ত সম্মান দিলেন তিনি৷
নকুলবাবু অত্যন্ত সচেতন মানুষ। তিনি বাস্তবিক ভাবনাচিন্তা করতে ভালোবাসেন। সেইজন্য বছরখানেক আগে একমাত্র পুত্রের মৃত্যু হলেও নিজের পুত্রবধূকে বেঁধে রাখতে চাননি নিজের পরিবারে। বরং নাতি থাকা সত্ত্বেও বংশ পরম্পরার কথা না ভেবে যুবতী বউমার ধূসর জীবনকে সাদা শাড়ির মোড়কে না ঢেকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ সমস্ত রকম সামাজিক অবজ্ঞাকে পায়ের ভৃত্য করে নিজের বউমার বিধবা বিবাহ দিলেন তিনি।
বউমাকে নতুন জীবন দিতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন। তিনি প্রচণ্ড আপ্লুত। হবে নাই বা কেন? তিনি তো সঠিক কাজই করেছেন। আসলে নিজেকে বাঁচানোর থেকেও অন্যকে বাঁচানোর মধ্যে একরাশ শান্তি লুকিয়ে আছে। তিনি মনে করেন বিদ্যাসাগর যা বলেছেন তা শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকলে চলে না। সেগুলো করে দেখাতে হয়।
নকুলবাবুর ছেলে বন্ধুকে বাড়ি ছাড়তে যাওয়ার সময় বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর থেকে তাঁর বউমা নিজের মেয়ের মতো তাঁর বাড়িতে থাকেন। বিদ্যাসাগরের থেকে প্রেরণা পেয়েই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করে পুত্রবধূর বিয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি।
বিজ্ঞানমনস্ক নকুলবাবু কেবল প্রথা মেনে বউমার বিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, কোভিড-বিধি মেনে অতিথিদের আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা করেন। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা নবদম্পতিকে আশীর্বাদের পর রীতিমতো কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলেন। গ্রামের একজন পুলকার চালকের মহৎ পদক্ষেপে গর্বিত তাঁরাও।
হলদিয়ার কৃষিজীবী যুবক মধু সাঁতরার সঙ্গে বউমা শুভ্রার বিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ তবে মেয়ের বিয়ে দিলেও জামাই নিয়ে সে তাঁর বাড়িতেই থাকবে। একেবারে নকুলবাবুর ছেলে হয়েই তাঁদের সঙ্গে থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন মধু সাঁতরা। আর শুভ্রার ছেলেকে নিজের ছেলের মতোই মানুষ করবেন বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment