Header Ads

'গোল্ডেন গার্ল' রূপা ব্যানার্জি ছাড়া অসম্পূর্ণ বাংলার টেবিল টেনিসের সাফল্যের গল্প


রূপা ব্যানার্জী, বিস্মৃতপ্রায় বাঙালি টেবিল টেনিস খেলোয়াড়, প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আটবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ইন্দু পুরীকে ফাইনালে হারিয়ে দিয়ে জিতে নিয়েছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নের শিরোপা৷ তিনি সেই বাঙালি কন্যা যার কথা আলোচনা না হলে জাতীয় স্তরে বাংলার টেবিল টেনিসের সাফল্যের গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যায়।


একসময় বাংলা ভারতীয় ফুটবলের মক্কা ছিল,আজ আছে কি না! জোর গলায় বলা সম্ভবত যায় না! তবে ভারতীয় টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় জোগানের বরাবর বাংলা সাপ্লাই লাইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, ভারতের অনেক রাজ্যকে পিছনে ফেলেছে৷ বাঙালি টেবিল টেনিস খেলোয়াড়রা যেমন সারা ভারত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তেমন উঠে আসছেন সম্ভাবনাময় প্রতিভারা। 

বাংলার শিলিগুড়িকে অনেকে টেবিল টেনিসের শহর বলে চেনেন৷ জাতীয় স্তরের সাব-জুনিয়র, জুনিয়র, সিনিয়র বিভাগেও ধারাবাহিক সাফল্য বাঙালি টেবিল টেনিস তারকাদের ঝুলিতে৷ সাম্প্রতিক অতীতে বাংলার তিন টেবিল টেনিস তারকা মান্তু ঘোষ, শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিত ঘোষ অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন৷ ভারতীয় টেবিল টেনিস মানচিত্রে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি যাদের হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের কথা আলোচনা হলেই উঠে আসবে এক বাঙালি কন্যার নাম৷

রূপা ব্যানার্জি, এক বিস্মৃতপ্রায় বাঙালি টেবিল টেনিস খেলোয়াড় যিনি ১৯৭৩ সালে তৎকালীন মাদ্রাজ, আজকের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় টেবিল টেনিসের মহিলা বিভাগের ফাইনালে ইন্দু পুরীকে হারিয়ে জিতে নিয়েছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নের শিরোপা৷ 'নী' ব্যানার্জি নামের সঙ্গে হয়ত আমরা অনেক অপরিচিত! টেনিসের সার্কিটে রূপা ব্যানার্জি ওই নামেই পরিচিত ছিলেন৷ তাঁকে বাংলার 'গোল্ডেন গার্ল' বলা হত, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সহ খেলোয়াড়ের মধ্যেও তিনি ছিলেন প্রচন্ড জনপ্রিয়, তাদের অনুপ্রেরণার উৎস৷ খেলায় ছিল শক্তি ও স্কিলের সংমিশ্রণ৷ অত্যন্ত উচ্চ ঘরানার খেলোয়াড় ছিলেন, শক্তি, স্কিল, একাগ্রতা ও স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রেখে সহজেই বিপক্ষে থাকা খেলোয়াড় কে হারিয়ে দিতেন তিনি৷

রূপা ব্যানার্জির সহ খেলোয়াড়রা মনে করেন তাঁর লড়াকু মানসিকতা, টেবল টেনিসের প্রতি দায়বদ্ধতা, আনুগত্য এবং পরিশ্রম করার ক্ষমতাই তাকে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল৷ খানিকটা ভাগ্যবতী ছিলেন বলা যায়, সাতের দশকে টেবিল-টেনিস খেলার জন্য পারিবারিক বাঁধার মুখে পড়তে হয় নি৷ বাড়িতেই ছিল খেলাধুলার অবাধ পরিবেশ, তিনি যে পরিবারে বড় হয়েছেন সেই পরিবার আক্ষরিক অর্থেই স্পোর্টস লাভার৷ তার ভাই রবিন মুখোপাধ্যায় রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন এবং ধারাবাহিকভাবে ভাল রান করেছিলেন। ভাইদের মধ্যে নাচু মুখোপাধ্যায় রাজ্য স্তরে টেবিল টেনিস খেলতেন৷ এদিকে রবিন মুখোপাধ্যায়ের ডাক নাম ছিল সচু। পাঁচ ভাইবোন সাধারণত বাচ্চু, সচু/সাচ্চু, কাচু/কাচ্চু, নাচু/নাচ্চু এবং রূপা নামে ক্রীড়ামহলে বেশি পরিচিত ছিল। 

রূপা ব্যানার্জি ও ইন্দু পুরী দুজনেই জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন৷ টেবিল টেনিস বোর্ডে উভয়েই উভয়ের প্রবল প্রতিপক্ষ হলেও খেলার পরে তারা ছিলেন গভীর বন্ধু৷ দুজনেই কলকাতার ওয়াইএমসিএতে দিনের পর দিন প্রাকটিস করতেন৷ সত্যি বলতে কি সেইসময় বাংলার টেবিল টেনিসের পরিকাঠামো ছিল অত্যন্ত দূর্বল৷ সেই দূর্বল পরিকাঠামোর মধ্যে প্রাকটিস করে রূপা ব্যানার্জির অধ্যবসায় ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি তাঁকে এনে দিয়েছিল ভারতের জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নের শিরোপা৷

সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রূপা ব্যানার্জি বলেছেন তাঁরা যখন খেলতেন তখন ওয়াইএমসিএতে ছিল মাত্র দুটি টেবিল এবং সব খেলোয়াড়রা ঐ দুটি টেবিলে সময় ভাগ করে প্রাকটিস করতেন, যার জন্য তিনি পর্যাপ্ত অনুশীলনের জন্য সুযোগ পেতেন না৷ ১৯৭৩ সালে টেবিল টেনিসে মহিলা বিভাগে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই রূপা ও প্রসাদ ব্যানার্জি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ পরে তারা কানাডায় বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ যদিও সেইসময় জোর জল্পনা ছিল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে রূপা ব্যানার্জি অর্জুন পুরস্কার পাবেন কিন্তু সেই পুরস্কার তিনি পাননি৷ ক্রীড়া মনস্ক মানুষদের মধ্যে অনেকেই রূপা ব্যানার্জির নাম জানেন না, অথচ যার কথা না বললে জাতীয় স্তরে বাংলার টেবিল টেনিসের সাফল্যের গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যায়৷ বিস্মৃতপ্রায় এক বঙ্গ নারীর ভারত জয়ের ইতিহাস আমাদের একটু হলেও গর্বিত করবে সেকথা কিন্তু হলফ করে বলা যায়৷

তথ্যসুত্র- দ্য টেলিগ্রাফ


No comments