Header Ads

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র পূর্ণ সময়ের রাজ্যপাল, যিনি ছিলেন বাঙালি


হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় একমাত্র বাঙালি রাজ্যপাল যিনি আমাদের রাজ্যে পূর্ণ সময় রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেছেন, রাজ্যপালের সহধর্মিণী বঙ্গবালা দেবীও  সাধাসিধে মানুষ বললে হয়তো একটু কম বলা হয়, একটি উদাহরণ দিই, দার্জিলিং রাজভবনে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কে তিনি বলেছিলেন আমরা সাধারণ মানুষ৷ এত বড় ঘরে আমরা কী করব? এক ঘরে ওঁর ধুতি রাখব, এক ঘরে ওঁর জুতো রাখব, আর এক ঘরে লাঠি। কেবলমাত্র পূর্ণ সময়ের একমাত্র বাঙালি রাজ্যপাল হিসেবে নয়, ইতিহাস মেধাবী বঙ্গসন্তান হরেন মুখার্জি কে মনে রেখেছে অনেকগুলি কারণে, তিনি অত্যন্ত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। তিনি ইংরেজিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডক্টরেট। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পদে ছিলেন৷ দাদাঠাকুরের সাথে তাঁর সখ্য সর্বজনবিদিত। 


দয়ালু মানুষ হরেন মুখার্জি নিজের সব সঞ্চয় দান করে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে। গান গাইবার সূত্রে কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সুযোগ হয়েছিল রাজ্যপাল হরেন মুখার্জির সঙ্গে আলাপের। মুগ্ধ হয়েছেন সন্ধ্যা, ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ হরেন মুখার্জি কেমন ছিলেন সেই আনটোল্ড স্টোরি লিখেছেন তাঁর নিজের লেখা বই 'ওগো মোর গীতিময়'-এর পাতায়৷ জীবনে প্রথমবার দার্জিলিং যাচ্ছেন সঙ্গীত শিল্পী,প্লেনে উঠেছেন৷ হঠাৎ পিছন ফিরতেই চমকে উঠলেন! তাঁর পিছনের সিটে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে গভর্নর বসে আছেন৷

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কে দেখে রাজ্যপাল নিজে হাসলেন, বিমান সেবিকা চা-কফি বাদাম বিলি করছেন, সন্ধ্যা কিছুটা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, কি বলবেন বুঝতে পারছেন না, পরিস্থিতি সহজ করে দিতে রাজ্যপাল হরেন মুখার্জি তাকে বললেন নাও নাও আজকালকার দিনের মেয়ে তোমরা খাবে না কেন? বাদাম খাও,কফি খাও৷

মে মাসের প্রথম সপ্তাহ রাজ্যপাল দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলেন, বিমানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কে দেখতে পেয়ে যেভাবে হেসে পরিবেশ সহজ করে দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই জিজ্ঞেস করেছিলেন কোথায় থাকা হবে, গীতশ্রী সন্ধ্যা বলেছিলেন তারা প্রথমবার দার্জিলিং যাচ্ছেন, কিছু চেনেন না৷ সেকথা শেষ হতে একটু রসিকতা সুরে বলেছিলেন রোজ পঞ্চাশ টাকা খরচ করে হোটেলে না থাকলে হয় না!বোধহয় বড় হোটেল, স্ট্যাটাস সিম্বল এসব বোঝাতে ওই কথা বলেছিলেন! যাই হোক সঙ্গীত শিল্পীর থাকার ব্যবস্থা করে তিনি করে দিয়েছিলেন সেন্ট লুইস জুবিলি স্যানোটোরিয়ামে। 

রাজভবন থেকে চিঠি এলো রাজ্যপাল চায়ের নিমন্ত্রণ করেছেন, কিন্তু সেখানে যেতে গিয়ে ঘটে গেল এক বিপদ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়রা প্রথমবার দার্জিলিং গিয়েছেন, কিছুই ভালো ভাবে চেনেন না, তারা রাজভবনের সামনের পরিবর্তে পিছনের দিক দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষীরা সঙ্গীত শিল্পীদের গাড়ি যেতে দেবেন না৷ সন্ধ্যা অনেক অনুরোধ করলেন, অবশেষে নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রধান রাজ্যপালের ব্যক্তিগত সচিব কে ফোন করলে রাজ্যপালের নির্দেশে সামনের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন৷ রাজ্যপাল তাদের দেখে বললেন তিনি কিন্তু চা খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন৷

চায়ের পর্ব শেষ, রাজ্যপাল একটু যাবেন 'ঘুম' ঘুরতে তবে তার আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্ধ্যাদের সব কিছু ঘুরিয়ে দেখানোর৷ শুরু হল দার্জিলিং রাজভবন ঘুরে দেখার পালা, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে রাজ্যপাল জায়া বঙ্গাবলী দেবী ওপরে একটু গেলেন, হাসতে হাসতে বললেন আমরা সাধারণ মানুষ এতো বড় ঘরে আমরা কী করব? এক ঘরে ওঁর ধুতি, এক ঘরে ওঁর জুতো, এক ঘরে লাঠি রাখব৷ বোধহয় ওই একটি কথায় পরিস্কার বোঝা যায় আসলে তারা কত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন।

হরেন্দ্রকুমার মুখার্জী সম্পর্কে কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে লিখেছেন -"এই সুদীর্ঘ জীবনে আমার দেখা ভাল মানুষদের মধ্যে হরেন্দ্রকুমার (বইয়ে হরেন্দ্রনাথ লেখা) সবসময় বিশেষ শ্রদ্ধার জায়গায় আছেন৷"

প্রতিবেদন- অরুণাভ সেন

তথ্যসূত্র- ওগো মোর গীতিময়; সন্ধ্যা মুখোপাধ্যয়, অনুলিখন; সুমন গুপ্ত


No comments