Header Ads

পুরুলিয়া ট্যুরিজম নিয়ে আশাবাদী লোকশিল্পী তীর্থ সুন্দর বিশ্বাস


ছোটনাগপুর অঞ্চল, মানভূম, পুরুলিয়া, পুরুল্যা, সুন্দরী রূপসী জঙ্গলমহল পুরুলিয়া অহল্যা ভূমি কত নাম বিশেষণে বর্ণিত এই জেলা। লাল মাটি শাল বনে পাহাড় ডুঙরি দিয়ে ঘেরা পুরুলিয়ার মানচিত্র।

পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, গভীর অরণ্যে কবিরা কবিতা আঁকেন শব্দে। কথায় গানে চাঁদের আলোই ছাদ হয়। মহুয়া ফুলের গন্ধ খেজুর রস ভাবরা ভাজা, পিঠা, শাল পাতায় তেলেভাজা আনন্দের যাত্রাপথ।


পুরুলিয়া মানেই ল্যান্ড স্কেপ, যেখানে রাখবে সেটাই ফ্রেম। একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক বিভিন্ন সময় এই মাটিকে বেছে নিয়েছেন। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, রাজ চক্রবর্তী, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, আমজাদ কাজী প্রমুখ। অযোধ্যা পাহাড়, বাঘমুন্ডি, মাঠাবুরু অঞ্চল, জয়চন্ডী পাহাড়, মুরগুমা, চড়িদা, তেলকুপি, কাশিপুর রাজবাড়ী, দেউলঘাটা, বান্দোয়ান, দুয়াসিনি, গোর্গাবুরু, পাখিপাহাড় ও ঝালদা অঞ্চলের গভীর পলাশ বন সহ আরো একাধিক স্থান পুরুলিয়াকে সমাদৃত করেছে।

তীর্থ সুন্দর বিশ্বাস এই সময়ের লোকগানের চর্চিত এক নাম হলেও অন্য ঘরানার গান লিখে সুর করেও এখন প্রশংসা কুড়োচ্ছেন। 'কোন দিকে যাবে বলো দেখা তো হবেই'- এই গান এখন কলেজ পড়ুয়া, মধ্য বয়সী থেকে বৃদ্ধ বৃদ্ধা প্রত্যেকের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।

জানা গেল তার মুখ থেকে কিছু কথা। 

পুরুলিয়ার সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক, জন্ম এই মাটিতে, বড় হওয়া এখান থেকেই। ছোট থেকেই শিল্প সংস্কৃতি পারিবারিক চর্চা থেকেই শুরু হয়েছে। বাবা বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক গবেষক, সমাজকর্মী এবং জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত শিক্ষক মুকুন্দ বিহারী বিশ্বাস। বাবা  তাঁর পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীরা পাশে না থাকলে হয়তো এতটা পথ এগোনো হতোনা। পাশাপাশি এও জানালেন, একসময় স্টেশন প্ল্যাটফর্মেও বহু রাত কাটিয়েছেন তিনি। আজকের এই সাফল্য ধরে রাখার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর ধৈর্য্য, লক্ষ পরিশ্রম এবং সহজ করে মেলামেশা ও ভালোবাসা।


পুরুলিয়া ট্যুরিজম নিয়ে তাঁর মুখে অনেক আশার আলো শোনা গেলো। সেখানকার জীবন জীবিকা অনেকটা উন্নত হয়েছে। আগে মানুষ পাহাড়ে আসতে ভয় পেতেন, এখন সেটা একেবারেই নেই। হোটেল ব্যবসায়ীরা টুরিস্টদের কোন রকমের ঘাটতি রাখছেন না, অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক মনোরঞ্জন সব কিছুই দিচ্ছেন। ফলে জেলার এবং বাইরের আগত শিল্পীদের উপার্জন হচ্ছে। দীর্ঘ লকডাউন ট্যুরিজম ব্যবসায় যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি শিল্পীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি মনে করেন, শিল্পী ও শিল্পের কোন কাঁটাতার নেই, এখানে সবাই এক, একত্রিত থাকলে তবেই সংস্কৃতি বাঁচবে। সংস্কৃতি কে বাঁচালে শিল্প আরো এগিয়ে যাবে। ট্র্যাডিশনাল যেমন চর্চিত হবে আবার পরীক্ষা নিরীক্ষাও সমান গতিতে সময়ের সাথে এগোবে। তার মধ্যে থেকেই মানুষ ঠিক করবে পথ এবং পথিক। তিনি জানান দীর্ঘ বছর ধরে তিনি জেলার শিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে মঞ্চে পরিচিত করছেন যাতে তাঁদের শিল্প বৃহত্তর মঞ্চে পারিশ্রমিক সহ জায়গা করে নেয়।

এই বিষয়ে তিনি বহু মানুষের সাহায্য পেয়েছেন। পরিচালক আমজাদ কাজী, গবেষক ডাঃ সুভাষ রায় এর কথা বলেন। কিরীটি মাহাতো, সুনীল মাহাতো, কুচিল মুখোপাধ্যায়, ডাঃ দয়াময় রায় তাঁদের কথাও তাঁর মুখে শোনা যায়। তাঁদের স্নেহ তিনি বরাবর পেয়েছেন।

কিছুদিন আগেই বাঘমুন্ডি পুরুলিয়া তে তাঁর পরিচয় হয় শরৎ কুমার এর সঙ্গে। তার আমন্ত্রণে সাড়া দেন তিনি, কারণ তিনিও মনে করেন জেলার ছেলে হিসেবে এই লকডাউন অতিক্রম করার লড়াই কারোর একার নয়। অযোধ্যা উঠতেই বাঘমুন্ডি মোড় এ লেক এভিনিউ হোটেল তীর্থ বাবুকে অনুষ্ঠান করার কথা বলে তাঁদের হোটেল এর বর্ষবরণ এবং ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য। সেখানে জমিয়ে হয় অনুষ্ঠান। টুরিস্ট ছিল চোখে পড়ার মতো, তারাও উল্লাসে মেতে ওঠেন। শরৎ কুমার নিজেও সহজ মানুষ ব্যান্ড এর সাথে সকলকে নিয়ে মিশে যান।


তীর্থ সুন্দর বিশ্বাস বলেন, "এই প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় বলা দরকার সম্প্রতি পরিচালক আমজাদ কাজী নির্মিত শর্মিলা মজুমদার প্রযোজিত ডকুমেন্টরী ফিল্ম 'ডান্স অফ দ্য ফরেস্ট' জেলার হারিয়ে যাওয়া শিল্প চর্চা নিয়ে নির্মিত হয়েছে। তাতে আমিও সঙ্গীত আবহ পরিচালনা করেছি। সম্পাদনা করেছেন অনিমেষ বোস, স্ক্রিপ্ট সোমা বসু, গবেষণা কিরীটি মাহাতো; এছাড়াও আরো অন্যান্যরা।"

তিনি দীপঙ্কর নাগ এবং রুমা নাগ এর কথাও বলেন। এই ডকুমেন্টরী এই বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হলেও কোভিড বিধির কারণে আয়োজন আপাতত স্থগিত রয়েছে। তিনি প্রচণ্ড আশাবাদী আমজাদ কাজীর এই ছবি নিয়ে চর্চা হবে সারা দেশে।

তিনি এও বলেন, "সহজ মানুষ শুধু গান গায় এটা ভুল, আমরা চাই বাংলার সমস্ত সংস্কৃতির সাথে যুক্ত শিল্পী এবং শিল্পীদের আমাদের সাথে সম্মান দিতে ও তাঁদের সম্পর্কে জানাতে, তাঁদের শিল্প সত্ত্বাকে উপার্জনের দিকে এগিয়ে দিতে। হয়তো সামান্য পেরেছি। আরো পারতে হবে। আশা করি আগামীতেও এই ভাবে প্রত্যেকের সহযোগিতা পাবো এবং পাহাড় হোক বা সমতল ট্যুরিজম এবং টুরিস্ট বন্ধুরা তীর্থ ও সহজ মানুষ কে  সাংস্কৃতিক আঙিনায় বারবার ডাকবেন। আমি অবশ্যই তাদের ডাকে সাড়া দেবো।" 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments