আরআইওর প্রাচীন ভবন ভেঙে ট্রমা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চিকিৎসক মহলে
ব্রিটিশ আমলে ১৯২৬ সালে কলকাতার বুকে চোখের চিকিৎসার জন্য গড়ে উঠেছিল 'আই ইনফার্মারি'। ১৯৩৩ সালে তার নিজস্ব একটি বাড়িও তৈরি হয়৷ চোখের চিকিৎসার জন্য এ এক নামজাদা প্রতিষ্ঠান। সত্তরের দশকে যা দেশের এক নম্বর হাসপাতাল দিল্লি এইমস-এর সমতুল্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা লাভ করে। সেন্ট্রাল এভিনিউ লাগোয়া এই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন চোখ দেখাতে আসেন ১০০০ থেকে ১২০০ রোগী। অপারেশন হয় দেড়শোর বেশি। পড়ানো হয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও। নানাবিধ চক্ষু সমস্যার ক্লিনিক রয়েছে এক ডজনেরও বেশি। মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে এই রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজির ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে সেখানেই লেভেল ১ ট্রমা সেন্টার গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রোগী কল্যাণ সমিতি।
তাঁরা ঘোষণা করেছে, অত্যাধুনিক সুবিধা সহ দশ তলাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারের জন্য রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজি ভেঙে মেডিক্যালের বাইরে স্বাস্থ্য দপ্তরের পৃথক জমিতে তা নতুন করে নির্মিত হবে। ততদিন পর্যন্ত চোখের চিকিৎসা হবে এজরা বিল্ডিংয়ে। একথা জানাজানি হতেই তোলপাড় চক্ষু চিকিৎসকমহল। কারণ কলকাতা সহ রাজ্যের ৭০ শতাংশ চক্ষু চিকিৎসকদের পঠনপাঠন, প্রশিক্ষণ বা চিকিৎসক জীবনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে শতবর্ষের দোরগোড়ায় থাকা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সাথে।
রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজি'র প্রাক্তন অধ্যাপক হিমাদ্রি দত্তের মতে, এটি একটি অত্যন্ত অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এমন বিল্ডিং ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেই হলো! চোখের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজের বাইরে গেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন মানবে তো?
রোগী কল্যাণ সমিতির সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসও। তাঁদের মতে, প্রচুর সংখ্যক শিক্ষকের পাশাপাশি শহর ও বিদেশের নামকরা চক্ষু বিশেষজ্ঞরা এই ইনস্টিটিউটের পণ্য। শুধু ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়ে এটাকে দূরে সরিয়ে দেওয়াটা অকল্পনীয়। তাঁরা নিশ্চিত নন যে প্রস্তাবটা কীভাবে এসেছে, কিন্তু, এটা সব অর্থে একেবারেই অযৌক্তিক।
রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজি'র ডিরেক্টরের অধীনে পৃথক প্রশাসন রয়েছে। তাহলে ৮৮, কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে বা বাইরে যে কোনও জায়গায় এটিকে নতুন ভাবে তৈরি করা কীভাবে সম্ভব হবে? প্রস্তাবিত ট্রমা সেন্টারটি নতুন আরআইও-র জন্য প্রস্তাবিত স্থানে বা আরও অনুকূল যোগাযোগব্যবস্থা সহ অন্য কোনো জায়গায় বানানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যেহেতু বিল্ডিং ভেঙে ফেলার প্রয়োজন নেই সেহেতু মোট পদ্ধতিতে অনেক মূল্যবান সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। তাছাড়া, জরাজীর্ণ স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন বিল্ডিংয়েরর সামনে ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের প্রায় ডানদিকে দশ তলা কাঠামো তৈরি করা কী যথেষ্ট বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস এই সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আন্তরিকতার সাথে বিষয়টিকে জরুরী গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য এবং এই অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাবে আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানায়।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment