Header Ads

লকডাউনে দুয়ারে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছেন জামুড়িয়ার 'রাস্তার মাস্টার'


শিক্ষার আলো যখন ঘরের উঠোনে। নেপথ্যে 'রাস্তার মাস্টার' দীপ নারায়ন নায়ক। লকডাউনে স্কুলে স্কুলে তালা বন্ধ। স্কুলের পঠনপাঠনের জন্য অনলাইনে বিশেষ ব্যবস্থা হলেও সবার ক্ষেত্রে অনলাইনে পঠনপাঠন সম্ভব নয়। করোনার কোপে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর যেন কোমর ভেঙ্গে গেছে। বহু শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ঠিকমতো তাদের খাবারটুকুও জুটছে না। পেটের দায়ে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাছে পড়াশোনাটা প্রায় বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। বহু ছেলেমেয়ে আর্থিক সংকটের জন্য পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে বাধ্য হয়ে। কিন্তু এমতাবস্থায় শিক্ষার আলো যাতে দপ করে নিভে না যায় তার জন্য ভিন্নভাবে পথ দেখালেন দীপ নারায়ন নায়ক৷


পাড়ায় পাড়ায় বাড়ির উঠোনে শিক্ষার ব্যবস্থা করে সবার নজর কেড়েছেন দীপ নারায়ন বাবু। নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ন নায়ক দেখেছেন কারোরই বই-খাতা বা কলম, স্লেট কিছুই নেই। তাই তিনি এই সমস্যা সমাধানের কিছু নিনজা টেকনিক বের করেন। তিনি কাঁচা বাড়ির ভগ্নপ্রায় দেওয়ালগুলিতে পাকা রং করে সেগুলিকে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেছেন, সুপরিকল্পিত উপায়ে তৈরি করেছেন বহু ব্ল্যাকবোর্ড। লিখেছেন বর্ণপরিচয়, আলফাবেট থেকে শুরু করে করোনা থেকে বাঁচার উপায়, এমনকি ভ্যাকসিনের গুরুত্বের কথা একইসঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন।

সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী ও আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার প্রসারে ব্রতী হয়েছেন তিনি। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় বর্তমানে যাদের সামান্য পেন-খাতা কেনার সামর্থ্যটুকুও নেই কিন্তু আছে 'শিক্ষার অধিকার'। তাদের সে অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি বহুদিন থেকেই লড়াই করছেন। যে লড়াইয়ের জন্য জামুড়িয়ার মানুষজনের কাছে 'রাস্তার মাস্টার' নামে তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেছেন। 

তাঁর হাত ধরেই একদিকে যেমন আদিবাসী সমাজের ছাত্রছাত্রীরা 'দুয়ারে শিক্ষা'/ 'দুয়ারে স্কুল' পাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি আদিবাসী মানুষদের মধ্যেও শিক্ষা সচেতনতা গড়ে উঠছে। এর পাশাপাশি তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সমস্ত কুসংস্কার আছে সেগুলো দূর করার জন্য 'বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে'ও বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন। 

তিনি চেষ্টা করছেন সমাজের সমস্ত কুসংস্কারকে দূর করার ও স্কুল ছুট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার। শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি যেভাবে নিজের খরচে প্রাণপণে পরিশ্রম করছেন তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে চর্চা হচ্ছে। তাঁর অভিনব এই শিক্ষার মডেল আগামীদিনে দেশীয় শিক্ষার রোড মডেল হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব আর বিপ্লব আনে মুক্তি এই ভাবনাকেও তিনি বাস্তবায়িত করতে চান। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments