Header Ads

সারাজীবন বিনা পয়সাতেই রোগী দেখছেন বর্ধমানের গরীবের ডাক্তার নিতাই প্রামাণিক


কেউ প্রচারের আলোকে কাজ করতে ভালোবাসেন, কেউ আবার প্রচারের আড়ালে কাজ করতে ভালোবাসেন৷ সমাজে এই দুই প্রকার মানুষই দেখা যায়। কিন্তু প্রচারের আড়ালে থাকা মানুষগুলো একটু অন্যরকম৷ আমাদের অজান্তেই তাঁরা কত কত মহান কাজই না করে যান। ঠিক এমনই একজন ব্যক্তি হলেন বর্ধমান শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক নিতাই প্রামাণিক। যিনি মানুষের সেবাকেই নিজের ধর্ম মনে করেন। সারাটা জীবন ধরে তিনি কেবল বিনা পয়সাতেই রোগীদের চিকিৎসা করে গেছেন জীবনের সমস্ত বিলাসিতা ত্যাগ করে।  


বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় থেকে আলমগঞ্জের রাস্তার ধারে মাত্র দুশো মিটার। পিচের বড় রাস্তা পেরিয়ে গলিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটা সবুজ দোতলা বাড়ি। এখানেই থাকেন ডাঃ নিতাই প্রামাণিক। তিনি স্কিন স্পেশালিস্ট৷ তিনি স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর। যদিও সেই পরিচয় আজকে অনেকে প্রায় ভুলেই গেছেন। বর্ধমান শহর সহ এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের কাছে তিনি আজ 'বিনে পয়সায় ডাক্তার' নামে বেশি পরিচিতি লাভ করেছেন। 

প্রত্যহ একদম সাতসকালে বর্ধমান স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন তিনি, গন্তব্য কলকাতা।   চলন্ত ট্রেনেই রোগী দেখা শুরু করে দেন তিনি। ট্রেনের মধ্যে যাওয়া হকার ও গরীব যাত্রীদের বিনা পয়সাতে চিকিৎসা করতে করতে পৌঁছে যান কলকাতা। কলেজে পড়িয়ে ফের বর্ধমানের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বেজে যায় প্রায় রাত নটা। ততক্ষণে তাঁর বাড়ির সামনে লেগে যায় লম্বা লাইন। কম করে হলেও একশো জনের মতো লোকের ভিড়৷ এই ডাক্তারবাবু এমনই একজন মানুষ যিনি কোনোদিনই ফি নেন না গরীব মানুষগুলোর কাছ থেকে। উল্টে নিজের রোজগার থেকে তাদের হাতে তুলে দেন ওষুধ-পথ্য ও অর্থ। 

রবিবার চিত্রটা তাঁর অন্যরকম থাকে। সেদিন ভোরবেলা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত রোগী দেখেন নিতাইবাবু৷ মাঝখানে বারেক বিরতি। নাওয়াখাওয়া সেরে আবারো চিকিৎসা করার জন্য চেম্বারে বসেন তিনি। অন্যদিন ফিজ নেন যৎসামান্য তাও আবার যদি ইচ্ছে হয়। তবে রবিবারটা পুরোটাই বিনামূল্যে। অতএব রবিবার তাঁর বাড়ির সামনে রোগীদের ভিড়ে ঠাসা থাকে। রোগীদের বিশাল ভিড় দেখে অনেক খাবারের দোকানও বসে যায়।   

নিতাইবাবুকে তাঁর এলাকার লোকেরা ভগবান মনে করেন। তাঁর মতো মহান চিকিৎসকদের সংখ্যা আজকাল খুব বেশি নেই বললেই চলে। তাঁর মতো চিকিৎসক হাজার খানেক থাকলে বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক আমূল পরিবর্তন  ঘটতো। তাঁর মতো ব্যক্তি যেন বাংলার ঘরে ঘরে জন্মায়। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments