শতবর্ষ প্রাচীন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেলেন এক প্রবাসী বাঙালি
গণিতের মধ্যে এক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। গণিত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বিষয়। গণিতে এমন অনেক সমস্যা আছে যার সমাধান আজও হয়নি। গণিতের হাজারো সমস্যার সমাধান নিয়ে বহু গণিতবিদ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ যুগের পর যুগ গণিতের বিভিন্ন সূত্রের পরিবর্তন ঘটে থাকে। গণিতকে জটিল থেকে সহজ করে তোলার জন্য গণিতবিদরা নানান কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। গণিত কঠিন বিষয় হলেও বহু মানুষের কাছে এ বিষয়টি জলখাবারের মতো। মিনিটের মধ্যেই যে-কোনো জটিল তত্ত্বের তারা সমাধান করতে পারেন।
সম্প্রতি এক প্রবাসী বাঙালি ১২০ বছর আগের গণিতের এক অমীমাংসিত রহস্যের সমাধান করলেন। ১৯০০ সালে প্রখ্যাত জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট ২৩ টি উল্লেখযোগ্য অমীমাংসিত গাণিতিক সমস্যার তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। তারপর এক শতাব্দীরও বেশি সময় কেটে গেলেও সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি। বিশ্বজুড়ে পরিচিত 'হিলবার্টস প্রবলেমস' এর বেশ কিছু সমস্যার উত্তর খুঁজে চলেছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় সব গণিতবিদরা।
ডিউক বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যাপক-গবেষক সমিত দাশগুপ্ত হিলবার্ট প্রবলমের ১২ নম্বর সমস্যাটির সমাধানের জন্য ২০ বছর ধরে গবেষণা করেন। অবশেষে উদ্ধার হলো সেই সমস্যাটির। এই কাজে তাঁর পাশে ছিলেন বন্ধু ও গবেষকরাও। সমিতবাবুর এই সাফল্য তুলে ধরেছে প্রখ্যাত মার্কিন জার্নাল 'কোয়ান্টা'। আর এরপরই সারা বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে গেছে।
তিনি ১৯৯৫ সালে স্নাতক হন মন্টগোমেরি ব্লেয়ার হাই স্কুল থেকে। তারপর ১৯৯৫ সালে ওয়েস্টিংহাউস সায়েন্স ট্যালেন্ট সন্ধানে শিনজেলের হাইপোথিসিস এইচ নিয়ে একটি প্রকল্পে কাজ করেন। সেখানে তিনি চতুর্থ স্থান লাভ করেন। এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান তিনি। ১৯৯৯ সালে এখান থেকেই তিনি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে তিনি গণিতবিদ কেন রিবেট ও হেনরি ডারমন-এর তত্ত্বাবধানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে পিএইচডি করেন। ২০০৯ সালে তিনি বিখ্যাত স্লোয়ান রিসার্চ ফেলোশিপ পান। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ও সান্তা ক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। তারপর প্রখ্যাত ডিউক বিশ্বিবদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্ব বিশেষ করে সংখ্যার ক্ষেত্রে ইউনিটগুলির স্পষ্ট নির্মাণ এবং অ্যাবেলিয়ান জাতের পয়েন্ট। এই উপা মধ্যে সম্পর্ক এবং এল-ফাংশনের বিশেষ মানগুলির মধ্যে অনেকগুলি শাস্ত্রীয় অনুমান রয়েছে, যেমন স্টার্ক, বার্চ-সুইনারটন-ডায়ার এবং বেলিনসনের অনুমান। এই গবেষণার অনুমানগুলিতে তিনি অগ্রগতি অর্জন করেছেন এবং সেই সাথে বিভিন্ন সাধারণীকরণ এবং পরিমার্জনা যা এল-ফাংশনের জগতের বাইরে চলে গেছে তা নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তাঁর বেশিরভাগ কাজ এই সমস্যাগুলির ওপর আলোকপাত করা এবং মডুলার ফর্মগুলির তত্ত্ব এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপনা করা।
হিলবার্ট প্রবলমের ১২ নম্বর সমস্যার সমাধান করার কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। শতবর্ষ প্রাচীন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে গেলে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়। সমিতবাবুকে বহু পরিশ্রম করতে হয়েছে। কুড়ি বছরের শ্রম ও নিষ্ঠার বিনিময়ে তিনি এক সাফল্যের বয়ান তৈরি করলেন। সমগ্র বিশ্বের কাছে তিনি বাঙালি জাতিকে গর্বিত করলেন।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment