Header Ads

দুটো পা অকেজো, শিল্পের টানে শুয়ে শুয়ে দুর্গামূর্তি গড়েন মৃৎশিল্পী ধনঞ্জয় পাত্র


দুটো পা অকেজো তার৷ কিন্তু তাতে কী? তবুও জীবনযুদ্ধে হার না মানা জেদ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। তার ভরসা দুটো হাত। যে দুটো হাতকে কাজে লাগিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক নামকরা মৃৎশিল্পী। বাড়ির উঠোনে মোটা গদি পেতে, তার ওপর বালিশে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে কাদামাটির তাল পাকিয়ে দুর্গামূর্তি গড়েন তিনি। দিনরাত বাড়ির উঠোনেই মূর্তি বানিয়েই সময় অতিক্রম করেন তিনি৷ তাকে এখন প্রায় সকলেই চেনেন, তিনি হলেন মৃৎশিল্পী ধনঞ্জয় পাত্র। 


অসম্ভবকে সম্ভব করার দুরন্ত ইচ্ছে তার। হাওড়ার শ্যামপুরের অমরাবতী পূর্ব পাড়ার ছোট্ট একতলা বাড়িতে থাকেন তিনি৷ তার বাড়িতে পা রাখলেই কুমোরটুলির গন্ধ ভেসে আসে। তার বাড়ি যেন একটুকরো কুমোরটুলি। শিল্পের নেশায় বুঁদ হয়ে তিনি ভুলেই গেছেন যে তার দুটো পা অকেজো। মনের জেদ ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যে-কোনো জটিল পরিস্থিতিকে জয় করা যায় তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। 

ধনঞ্জয় পাত্রের বর্তমান বয়স ৩৪ বছর। বাড়ির দশ ফুট বাই ছ'ফুট ঘরটাই তার জগৎ। সেখানেও ছোট-বড় নানা মূর্তির ছড়াছড়ি। তিনি পেশাগত মৃৎশিল্পী নন। তিনি মূর্তি গড়েন নেশায়, শিল্পের টানে। দুর্বল, জুবুথুবু শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে খুব বেশি হলে উঠোন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। তাই তার দুর্গাপুজো হয় বাড়িতেই। তিনি নিজেই মূর্তি গড়েন, নিজেই প্রতিমা সাজান৷ ষষ্ঠীর বোধনে আগমনীর সুরে শিশুর মতো হেসে ওঠেন৷ এই চার দেওয়ালেই তাঁর শারদীয়া। উমাকে ধরে রেখেছেন তিনি নিজের মনের মতো করে।  

চলতি হিসেবে হয়তো তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তিনি সোজা হয়ে বসতে পারেন না প্রায় ২৬ থেকে ২৭ বছর ধরে। কিন্তু এই অবস্থাতেও বানিয়ে ফেলতে পারেন দেবী দুর্গার প্রতিমা। যা প্রায় ৭ থেকে ৮ ফুট দীর্ঘ। ৮ বছর বয়স থেকে ধনঞ্জয়ের অবস্থার ক্রমে অবনতি হতে থাকে। গত বছরেও প্রতিমা নির্মাণের কাজ করেছেন গদি আর বালিশ পেতে, তার উপরে শুয়ে শুয়ে। আর্থিক অনটনও রয়েছে তার। কিন্তু শিল্প ছেড়ে থাকতে পারেন না তিনি। তার অসামান্য হাতের ছোঁয়ায় মাটির মূর্তিতেও প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় যেন!

বৃদ্ধা মা, দুই দাদা, দুই বৌদি ও তিন ভাইপোকে নিয়ে তার সংসার। দাদারা তার ছোটোখাটো ব্যবসা করেন। বাড়িতে প্রতিমা কিনে পুজো করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। ধনঞ্জয় বাবু যেহেতু মূর্তি গড়তে পারেন আর বাইরে বেরোতে পারেন না। পুজোর সমস্ত রকম আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে কী দিন কাটানো যায়? তাই নিজের হাতেই  আট ফুটের দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে তিনি বাড়িতে পুজো করান। তিনি একচালের ঠাকুর নয়, আলাদা আলাদা করে প্রত্যেকটি মূর্তি বানান তিনি। তার হাতে গড়া প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন দূরদূরান্তের মানুষ। ধনঞ্জয় বাবুর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে ওঠেন তার পাড়া-প্রতিবেশীরাও।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments