Header Ads

কলকাতার সাবর্ণ পাড়াতে তিনশো কোটির পুজো, আয়োজনে বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসব


১৫০০ শতকের শেষ দিকে অবিভক্ত বাংলার রাজশাহীর সম্রাট উদয়নারায়ণ পরিকল্পনা করেছিলেন দেশের প্রথম দুর্গোৎসব করবেন। ১৫৯০ সালে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে থমকে যায়। ১৬০৫ সালে তাঁর নাতি রাজা কংসনারায়ণ ঠিক করেন দাদুর স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি পরের বছর থেকে দুর্গাপুজো করবেন। সেইমতো তিনি সকলকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রাচীন পুঁথিপত্র ঘেঁটে যতদূর সম্ভব জানা যাচ্ছে, সেই সময়ের সেরা চিত্রকর প্রশান্ত চিত্রকরকে দিয়ে প্রস্তাবিত দুর্গা প্রতিমার ছবি আঁকানো হয়। তাঁর হাতের জাদুতে দুর্গা প্রতিমার ছবি হয়ে উঠেছিল সেই সময়কালের থেকেও বেশি আধুনিক। এরপর পাঁচজন মৃৎশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলাদা আলাদা করে প্রতিমা গড়ার। যাঁর প্রতিমা সবচেয়ে ভালো হয় তিনি ছিলেন রমেশ ভাস্কর। এনার হাতে তৈরি প্রতিমায় প্রথম দুর্গাপুজোতে পূজিত হয়। যে স্থানে এই পুজোটি হবে সেই স্থানটিকে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় সনাতন পন্ডিতের হাতে। স্পষ্ট কথায় তিনিই হলেন দুর্গাপুজোর প্রথম থিমমেকার। 


মৃৎশিল্পী রমেশ ভাস্কর দুর্গা প্রতিমা গড়ে ফেলেন ১৬০৫ সালেই। এদিকে রাজা কংসনারায়ণের ঘোষণা অনুযায়ী, পুজো হবে ১৬০৬ সালে। কিন্তু শরৎকাল এসে গিয়েছে, ফলে সভাপন্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অস্থায়ী দালানে ঘটে মাতৃ প্রতিমা পুজো করা হয়। একই সঙ্গে চলতে থাকে পরের বছরের পুজোর জন্য বিশাল প্রস্তুতি। আজ থেকে ৪১৫ বছর আগে ১৬০৬ সালে রাজা কংসনারায়ণ সেই সময়ের পুজোতে খরচ করেছিলেন নয় লক্ষ টাকা। অর্থনীতিবিদরা হিসেব করে দেখিয়েছেন ৪১৫ বছর আগের নয় লক্ষ টাকার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। 

সাবর্ণ পাড়া বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির ৭৩ তম বর্ষের নিবেদন '৩০০ কোটির প্রস্তুতি।' পাড়াতে পাড়াতে এই পুজোর ব্যানার দেখে চমকে যেতে হয়। ব্যানারে বড় বড় করে লেখা '৩০০ কোটির পুজো'। যা দেখলে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠতে পারে। মনের মধ্যে বিস্ময় জাগতে পারে যে ৩০০ কোটি টাকা বাজেটে করোনাকালে পুজো কী করে সম্ভব? আসলে বিষয়টি তা নয়, ৪১৫ বছর আগে রাজশাহীতে রাজা কংসনারায়ণ বর্তমানের হিসেবে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে দুর্গাপুজো করেন। সেই পুজোর ইতিহাসই তুলে ধরা হচ্ছে সাবর্ণ পাড়া বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোতে। 

উদ্যোক্তাদের আশ্বাস, ইতিহাসের টানে এখানে লক্ষাধিক মানুষ ছুটে আসবেন৷ তাদের চোখের তারাতে ধরা দেবে প্রথম দুর্গাপুজোর জীবন্ত ইতিহাস। এই অনবদ্য ভাবনাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন সম্রাট চট্টোপাধ্যায়। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়।  আবহের দায়িত্বে রয়েছেন দিশারী চক্রবর্তী। আলোর দায়িত্বে রয়েছেন বাবলু সরকার। প্রতিমার সার্বিক সহযোগিতা ও সামগ্রিক রূপায়ন করেছেন কৃষাণু পাল।   

বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় কলেজ জীবনের পর পুজোর আসরে প্রথমবার প্রতিমা গড়লেন। শিল্পী কৃষাণু পালের সার্বিক সহযোগিতায় দশদিন মূল্যবান সময় ব্যয় করে সম্পূর্ণ করেছেন তাঁর সৃষ্টিকে। আগামী ২ রা অক্টোবর বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রাঙ্গণে সকাল ১১ টায় তিনি তুলির টানে সাজিয়ে তুলবেন রাজ নন্দিনী কে। 

চলতি বছরে কলকাতায় যতগুলো পুজো হচ্ছে তাদের মধ্যে সাবর্ণ পাড়া বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসবের পুজো সবার থেকে কয়েক ক্রোশ এগিয়ে থাকবে৷ তার কারণ বাংলার এক জানা-অজানা ইতিহাসের কথা বলবে এই পুজো৷ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments