Header Ads

কোমর ভর্তি জল ঠেলে ৭৫ টি বাড়ির বাচ্চাদের পোলিও খাওয়ালেন দুই বঙ্গনারী


টানা বৃষ্টিতে ভাসছে বাংলার পাহাড় থেকে মোহনা। জলে ভেসে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।  নদী, খাল-বিল, মাঠ সব কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বহু বাড়িঘর ভেঙে গেছে। প্রবল বর্ষায় বিপর্যস্ত জনজীবন। রাতভর বৃষ্টিতে নাজেহাল বাংলার মানুষ। চতুর্দিকে স্যাঁতস্যাতে পরিস্থিতিতে সবার মধ্যেই ভর করছে অস্বস্তি। 


গত রবিবার থেকে রাজ্যজুড়ে পাঁচদিন ব্যাপী পোলিও কর্মসূচী শুরু হয়। এই মঙ্গলবার ছিল তার তৃতীয় দিন৷ এদিন ক্যানিং-এর এক নম্বর ব্লকে দায়িত্ব এবং মানবিকতার এক অদ্ভুত মেলবন্ধন রচনা করলেন মণিকা বিশ্বাস এবং লতা হালদার নামের দুই আশাকর্মী। ক্যানিং ব্লকের সমস্ত গ্রামের ধানজমিগুলি জলের তলায় এবং বাড়িঘরগুলি প্রায় অর্ধেক ডুবে গেছে। এমতাবস্থাও কোমর ভর্তি জলে নেমে বাচ্চাদের পোলিও টিকা খাওয়ালেন আশাকর্মী মণিকা বিশ্বাস ও লতা হালদার। 

আকাশের কোলে ঘুটঘুটে কালো মেঘ জমেছে। যে-কোনো সময় ঝুপ করে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেও নিজেদের দায়িত্বে অনড় থাকলেন মণিকা বিশ্বাস ও লতা হালদার। প্রায় আধডোবা বাড়িগুলোর দরজায় কড়া নেড়ে বাড়ি থেকে বাচ্চাদের নিয়ে আসতে বলেন তাঁরা। প্রচুর মানুষজন কোলে-পীঠে কিংবা কাঁধে করে বাচ্চাদের নিয়ে এলেন পোলিও খাওয়াতে৷ তারপর ফুটফুটে বাচ্চাগুলোর মুখে পোলিও তুলে দিলেন এই দুই আশাকর্মী। 

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট আর বাড়িঘর সর্বত্র বানভর্তি জলে থই থই। স্বভাবতই তিন বছরের নাতিকে নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন মনরা মোল্লা নামের এক মহিলা৷ তার অবস্থা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না প্রৌঢ় আশাকর্মী মণিকা বিশ্বাস দাস৷ মনরা মোল্লাকে তিনি আসতে মানা করলেন। বাচ্চাকে পোলিও টিকা দিতে নিজেই জল ঠেলে এগিয়ে গেলেন। জলের গভীরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা কতটা, বুঝতে না পেরে মণিকার সঙ্গী লতা হালদার মাথায় তুলে নিলেন পোলিও টিকার বাক্স। বাড়ির কাছে যেতেই কোমর সমান জলে কিছুটা এগিয়ে এলেন মনরা মোল্লা। প্রতিষেধক খাওয়ানো শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি। মনরা বললেন, "তোমরা সাবধানে যাও, তোমরাই তো আমাদের ভরসা।" 

ততক্ষণে বৃষ্টিতে ভিজে বেহাল অবস্থা মণিকা বিশ্বাসের। শাড়ির আঁচলে মাথা ঢাকার ফাঁকেই বললেন, "ঠিক মতো হাঁটতে পারি না, হাই ব্লাডপ্রেসার। কিন্তু মা-বাচ্চাগুলোকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। তাই না এসে পারি না।"  

শুধু কোমরভর্তি জলই নয়, কোনো কোনো জায়গায় গলাভর্তি জল পেরিয়েও তাঁরা তাদের কর্তব্য পালন করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার সমস্ত জায়গায় এমনভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। পোলিও টিকা খাওয়ানোর জন্য দৈনিক ৭৫ টি বাড়ি ঘুরে পারিশ্রমিক মাত্র ৭৫ টাকা। তা-ও তাঁরা সেটা পাবেন দুই মাস পর। তবুও জন্ম-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য করে তাঁরা শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments