Header Ads

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল


নারী শিক্ষা আন্দোলনের ফলে ১৮৭৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পান দুজন ছাত্রী। তারা হলেন সরলা দাস ও কাদম্বিনী  বসু (গঙ্গোপাধ্যায়)। তাঁরা পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু সরলা দেবী বিশেষ কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি। যদিও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় পরীক্ষায় অংশ নেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৮৮৩ সালে কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় বি.এ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সাথে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তখন তাঁকে বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 


স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর কাদম্বিনী সিদ্ধান্ত নেন মেডিক্যাল পড়বেন। নারীশিক্ষার অতুৎসাহী সমর্থক পিতা ব্রজকিশোর বসু  সানন্দে কন্যার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। ১৮৮৩ সালে কাদম্বিনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেন এবং ঐ বছরই তাঁর বিয়ে হয়। তিনি বিয়ে করেন মেডিক্যাল কলেজের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক বিপত্নীক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। বিয়ের সময় কাদম্বিনীর বয়স ছিল ২১ এবং দ্বারকানাথের বয়স ছিল ৩৯ বছর। তাঁর দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত সুখের। বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় প্রবল উৎসাহ নিয়ে ডাক্তারি পড়তে শুরু করেন। রাত জেগে পড়া বা সংসারের কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে পড়া সবখানেই স্বামীর সপ্রশংস সহযোগিতা লাভ করেছেন তিনি। 

তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজ মহিলা হিসেবে তাঁর ডাক্তারি পড়াকে সহ্য করতে পারতো না। তারা এতোটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল যে বঙ্গবাসী পত্রিকায় তাঁকে হেয় করে একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে দেখানো হয় কাদম্বিনী তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নীচে লেখা ছিল  কাদম্বিনীকে নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ অজস্র মন্তব্য। বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ চন্দ্র পালের এই অসভ্যতাকে প্রশ্রয় দেননি কাদম্বিনী বা তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতে অভিযোগ জানান তাঁরা। তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন ডাঃ নীলরতন সরকার, শিবনাথ শাস্ত্রীর মতো মানুষরা। বিচারে  মহেশ চন্দ্র পালের ছ'মাসের জেল ও একশো টাকা জরিমানা হয়। 

পড়াশুনা শেষ করে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্বাধীন প্র্যাকটিস করা মহিলা চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এরপরই দ্রুত তিনি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৮৮৮ সালে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল লিখেছিলেন তাঁর সম্বন্ধে। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিঠি লিখেন নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে।  

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বাধীন চিকিৎসক হিসেবে প্রচেষ্টা গোটা দেশে এশিয়ার মধ্যে মহিলাদের পড়াশোনা, চাকরির ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা নতুন দিক খুলে দিয়েছিল। তাঁকে দেখে এরপর বেশকিছু মহিলা এগিয়ে আসেন। যদিও পথ সহজ ছিল না। তবে ধীরে ধীরে বহু বছরের অচলায়তন ভাঙতে থাকে।  

গত ১৮ ই জুলাই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকী। এই বিশেষ দিনটিতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল। গুগলের এই ডুডল তৈরি করেছিলেন বেঙ্গালুরুর শিল্পী অদ্রিজা৷ তিনি বলেন, "বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ভারতের চিকিৎসা পরিকাঠামোয় অনেক বড়ো অবদান রেখে গিয়েছেন। যা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments